জসীম উদ্দীন মাসুদ
খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু- মানব ইতিহাসের সেরা বাঙালি
বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিবিসি বাংলা বিভাগ ২০০৪ সালে এক অনুসন্ধানী জরিপের আয়োজন করেছিল। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ৪০ দিন ব্যাপী এই জরিপে বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে বাঙালিরা অংশ নিয়েছিল। মনোনয়ন পাওয়া সেরা ১৪০ জন বাঙালির মধ্যে সে বছরের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে বাঙালির ভোটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে যার নামটি দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করা হয়েছিল তিনি আমাদের জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি আমাদের চির অহংকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু যাঁর চেয়ে দ্বিগুণ পয়েন্ট বেশি পেয়ে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি হলেন সর্বপ্রথম বাঙালি নোবেল বিজয়ী বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সফল ও উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্বকবি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবাক ব্যাপার হলো তালিকার সর্বশেষ অর্থাৎ ২০ নম্বরে স্থান পাওয়া মানুষটি ছিলেন বঙ্গবন্ধুরই রাজনৈতিক গুরু গণতন্ত্রের মানসপুত্র বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান রাজনীতিবিদ অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বাঙালির চেতনার বহ্নিশিখা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, সমাজ সংস্কারক ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অথবা রাজা রামমোহন রায়ের মতো অন্যান্য আলোকোজ্জ্বল বাঙালিগণকে তালিকায় বঙ্গবন্ধুর পেছনে দেখে সহজেই বোঝা যায় বাঙালির হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধু কতটা জায়গা দখল করতে পেরেছিলেন। ভোটদানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাঁর শৈশব, দুরন্ত কৈশোর, স্বর্ণালী যৌবন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং স্বপ্নীল আশাজাগানিয়া কর্মময় জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে বঙ্গবন্ধু অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন আলোকবর্তিকা হয়ে।
অদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবন
১৭ মার্চ ১৯২০ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। খুব সংক্ষিপ্ত ছিলো বঙ্গবন্ধুর জীবন। সময়ের হিসাবে মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস ২৮ দিন। ৩৭ বছরের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের ৩৩ বছর যাঁর কেটেছে দেশটা স্বাধীন করতে। রাজনৈতিক জীবনের ৪০ শতাংশ সময় কাটিয়েছেন তিনি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, ৪৮ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে, ঘুমিয়েছেন মাত্র ১২ শতাংশ অর্থাৎ দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে আর বেঁচেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর, দিনের হিসেবে ১৩১৪ দিন। এই অদীর্ঘ জীবনে কাজের মধ্য দিয়ে, ত্যাগের মধ্য দিয়ে, দেশপ্রেমের মধ্যদিয়ে, সাহস ও সততার মধ্যদিয়ে নিজেকে অমর ও অজেয় করে তুলেছিলেন প্রতিটি পদক্ষেপে। কখনও কখনও অপেক্ষাকৃত ছোট জীবনও যে দীর্ঘ জীবনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তার অনন্য উদাহরণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যেমনি বর্ণাঢ্য আন্দোলন ও সংগ্রামমুখর ছিল তাঁর জীবন তেমনি তাঁর ছেলেবেলাও ছিল বন্ধুত্ব, সাহসিকতা ও অসীম মানবতায় পরিপূর্ণ এক আলোর দিশারীর মতো। শৈশবের সেই চিরায়ত ভাবনাগুলোকেই তিনি রূপায়িত করেছেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।
আত্মপ্রত্যয়ী ছাত্রজীবন
১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এই ছোট্ট বয়সে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো তাঁকে। একদিন নৌকাডুবির কবলে পড়ে প্রায় মরতে বসেছিলেন তিনি। মা সায়েরা খাতুন আর ঝুঁকি নিলেন না। পাঠিয়ে দিলেন গোপালগঞ্জ বাবা শেখ লুৎফুর রহমানের কাছে। সেরেস্তাদার বাবা ১৯২৯ সালে নয় বছর বয়সে ছেলেকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলেন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে। মা ছাড়া চলতে থাকলো বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়া। কিন্তু ১৯৩৪ সালে ১৪ বছর বয়সে প্রথমে বেরিবেরি ও পরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে ছাত্রজীবনের প্রায় চারটা গুরুত্বপূর্ণ বছর তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেলো। তারপরও তিনি দমে যান নি। তৎকালীন সময়ে এ ধরণের পরিস্থিতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যেতো, ঝরে পড়তো শিক্ষাজীবন থেকে। কিন্তু চরম আত্মপ্রত্যয়ী ও উদ্যমী বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাঁর অসীম ধৈর্য্য ও দৃঢ় মনোবলের কারণে চার বছর কঠিন অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ হয়ে উঠলেন এবং আবার নতুনভাবে নতুন উদ্যমে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করলেন। ১৯৩৭ সালেভর্তি হন গোপালগঞ্জেরমাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে। এখান থেকেই ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স (এসএসসি) পাশ করেন তিনি। বাবার চাকরিসূত্রে মাঝখানে ১৯৩৬ সালে কিছুদিন পড়েছিলেন মাদারীপুর হাইস্কুলে। সেই সময়টাতেই গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। কলকাতার ধর্মতলার ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পাশ করার পর ১৯৪৭ সালের শেষদিকে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে চির প্রতিবাদী বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবী আদায়ের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু নরপিশাচ ঘাতকের নির্মম বুলেটে সপরিবারে নিহত হলে ছাত্রজীবনের প্রিয় শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর আর যাওয়া হলো না।
স্কুলের ছাত্রাবস্থায় প্রথম কারাগার জীবন
বঙ্গবন্ধু নিজের শৈশব-কৈশোর কােিটেয়ছেন মানুষকে ভালোবাসার মধ্যদিয়ে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অধিকার সচেতন ও পরোপকারী। পরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সর্বক্ষণ। গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুলে পড়াকালীন সময়ে তাঁর সহপাঠী বন্ধু আবদুল মালেককে সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার জন্য এলাকার নেতৃবৃন্দ অনুরোধ করলে তিনি ছুটে যান সেখানে এবং দরজা ভেঙ্গে জোর করে বন্ধুকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। বন্ধুকে বিপদে ফেলে তিনি একা বসে থাকতে পারেননি। সারাজীবন বন্ধুবৎসল শেখ মুজিবুর রহমান জীবনে প্রথবারের মতো কারাভোগ করেন বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে। ১৯৩৮ সালে শিক্ষাজীবনে সেই যে কারাগার জীবনের শুরু জীবনভর ওটা তাঁর নিজের হয়ে গিয়েছিল পরের কারণে।
খেলাধূলায় ছিল বঙ্গবন্ধুর অসীম মনোযোগ
লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলাকেও ভীষণ ভালবাসতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন ভালো খেলোয়াড়ও। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। এই স্কুলের হয়ে বাবা শেখ লুৎফর রহমানের অফিসার্স ক্লাবের বিপক্ষে খেলেছেন বেশ কিছু ফুটবল ম্যাচ, যা উপভোগ করতেন উৎসুক জনতা। নিজের স্কুলের ফুটবল দলে করেছেন অধিনায়কত্ব। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-তে বলেছেন, “আমি খেলাধুলাও করতাম। ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতাম। খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলাম না, তবুও স্কুলের টিমের মধ্যে ভাল অবস্থান ছিল।” ‘হাডুডু’র ভাল খেলোয়াড় শেখ মুজিব’ এই এক নামে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর খুব পরিচিতি ছিল। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে নতুনভাবে সাজাতে গিয়ে তাই ক্রীড়াঙ্গনের কথাও ভেবেছেন তিনি। তরুণদের বিপথগামী থেকে বাঁচাতে জোর দেন খেলাধুলার উপর। হাডুডু বা কাবাডিকে দেন জাতীয় মর্যাদা। গঠন করেছিলেন ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বর্তমানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ সকল ক্রীড়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, “বিদেশে খেলতে গেলে বঙ্গবন্ধু সবসময় উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন খেলায় ভাল করতে পারলে নতুন স্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশকে সবাই সমীহ করবে। সবসময় বলতেন খেলা আর রাজনীতিকে আলাদা রাখতে।” এ জন্যই শেখ কামাল যখন আবাহনী ক্লাব গড়ে তুলছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর কড়া নির্দেশ ছিল, ‘রাজনীতিবিদদের ক্লাবের সংগে জড়িত রাখবে না।’
সামাজিক কর্মকান্ডের হাতেখড়ি হয় ছেলেবেলাতেই
সামাজিক কার্যক্রমে একদম ছেলেবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততা ছিল অনুকরণীয়। শীতে কষ্ট পাওয়া বন্ধুকে তাই নিজের চাদর বিলিয়ে দিতেন। বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা দরিদ্র বন্ধুকে ছাতা দান করে নিজে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতেন। বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন সন্তানের ওপর রাগ না করে এহেন অদ্ভূত কর্মকান্ড নির্দ্বিধায় মেনে নিতেন।সামজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনে আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন তাঁরই গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ। ১৯৩৭ সালে বঙ্গবন্ধু যখন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্র তখন কাজী আবদুল হামিদ দরিদ্র ছাত্রদেও সাহায্য করার লক্ষ্যে গঠন করলেন ‘মুসলিম সেবা সমিতি’। স্কুল বন্ধের দিন প্রতি রবিবার হামিদ স্যারের সাথে বঙ্গবন্ধু মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠাতেন। এই চাল বিক্রি করে ছাত্রদের বই কিনে দিতেন এবং পরীক্ষার ফিস ও অন্যান্য খরচ দিতেন। ঘুরে ঘুরে টিউশনি ও লজিং ঠিক করে দিতেন। হামিদ স্যার হঠাৎ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বঙ্গবন্ধু সেবা সমিতির সম্পাদক হিসাবে এই দায়িত্ব যথাযথ ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছিলেন। বর্তমানেও এমন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারলে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হতো।১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে লঙ্গরখানা খুলে দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জীবনের প্রতিটি কাজেই মানুষের সুখে-দুঃখে এমনিভাবে তিনি জড়িয়ে পড়তেন।
বঙ্গবন্ধুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চেতনা
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চেতনার মানুষ। নিয়ম করে প্রতিটি পত্রিকা পড়তেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-তে বলেছেন, “আমার আব্বা খবরের কাগজ রাখতেন। আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত। ছোটকাল থেকেই আমি সকল কাগজই পড়তাম।” এই পড়ার নেশা থেকেই বঙ্গবন্ধুর সবকিছু জানা হয়ে যেত। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকতাও করেছেন দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায়। বঙ্গবন্ধু সবসময় সত্য কথা বলতেন এবং সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করতেন। ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ড. আই এইচ জুবেরি এবং অন্যান্য শিক্ষকরা এজন্যে তাঁকে খুব ¯েœহ করতেন। আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, সোহরাব হোসেন, বেদার উদ্দিনের গান মুগ্ধ হয়ে শুনতেন বঙ্গবন্ধু। নিজেও মাঝে মাঝে গাইতেন। রবীন্দ্র সংগীত এবং রবীন্দ্র সাহিত্য ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’-কে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যৌবনের কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকে তিনি ভালোবাসতেন এবং বিভিন্ন আসরে তাঁর গানও শুনতেন। বিদ্রোহী কবিকে নিজ উদ্যোগে অনেক ঝুঁকি নিয়ে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু এমন এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন যার কারণে বিশ^ব্যাপী নিজেই রাজনীতির কবি হয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন সাংস্কৃতিক চর্চায় শিশুরা মনোনিবেশ করলে তারা আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। তাই তিনি কচি-কাঁচার আসর সহ সকল শিশু সংগঠনকে যথোপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা করতেন।
দেশের কল্যাণে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন সর্বাগ্রে
১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বচনের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শিক্ষা খাতের বিনিয়োগকে বঙ্গবন্ধু সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশটা যখন পুরোই বিপর্যস্থ, তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা যখন অনেকটা দুঃসাধ্য, সেই সময়টাতে শিক্ষার স্বার্থে চরম ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার পাশাপাশি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং খাবার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কন্যা শিশুদের উন্নয়ন ভাবনা থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ হয়েছিল তাঁর সময় থেকেই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শিশুদের শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে এত কষ্টে পাওয়া স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি গড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
করোনাকালে শিক্ষার্থীদেরঅনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, দাপ্তরিক কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন, দৈনন্দিন সভা ও নানা যোগাযোগ কার্যক্রমের কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের কাছে এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনেও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রয়েছে অসামান্য অবদান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের সদস্যপদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের যে বীজ বপণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ এর মাধ্যমে তা আজ এক মহীরুহে নিয়ে গেছেন। মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। ২০২১ সালে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। ৩৮০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ৭৭৭টি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। দেশের হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও অন্যান্য দূর্গম এলাকায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটি সেক্টরে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান এবং ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
শিশু স্বার্থে প্রথম আইন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর। এরও ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন বঙ্গবন্ধু শিশু স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে শিশু আইন প্রণয়ন করেছিলেন।এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার রক্ষায় এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শিশু শ্রম নীতি ২০১০ ও জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ প্রণয়ন করেন। তাঁরই দিক নির্দেশনায় প্রণীত হয় শিশু আইন ২০১৩, শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩ এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭।
শিশুর প্রতি সর্বদা সহমর্মি ছিলেন বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধুর সকালে হাঁটার অভ্যাস ছিল। ১৯৭২ সালের এক সকালে বড় ছেলে শেখ কামালকে নিয়ে তিনি হাঁটতে বেরিয়েছেন। হঠাৎ দেখলেন একটি ছোট ছেলে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কাছে ডাকার পর ছেলেটি জানায় যে, তার পা ব্যথা করছে বলে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। বঙ্গবন্ধু তখন নিজে ছেলেটির জুতা খুলে দেখেন যে, জুতার মধ্যে একটি পেরেকের সুঁচালো মাথা বেরিয়ে আছে, যার খোঁচায় ছেলেটির পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তৎক্ষনাৎ তাঁর দেহরক্ষী পুলিশকে ছেলেটির চিকিৎসার জন্যে নির্দেশ দিলেন এবং তার হাতে কিছু টাকাও দিলেন। আর পরম মমতায় ছেলেটিকে কোলে নিয়ে আদর করলেন। শিশুর প্রতি সহমর্মিতার উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যখনই তিনি কোন দুঃস্থ শিশুকে দেখেছেন তাকে অপরিসীম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন। নিজের গাড়িতে বসিয়ে অফিসে অথবা বাড়িতে নিয়ে গেছেন। পেট পুরে খাইয়ে কাপড়চোপড় দিয়ে তবেই ছেড়েছেন। এখন এমন ক’জন রাজনীতিবিদ খুঁজে পাওয়া যাবে।
শিশুদের সৃজনশীলতার মর্যাদা দিতেন বঙ্গবন্ধু
শিশুদের জন্যে বঙ্গবন্ধুর দুয়ার ছিল সবসময় খোলা। শিশুদের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়াতেই তিনি বেশি আনন্দ পেতেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকার প্রেসক্লাব চত্বরে কচি-কাঁচার মেলা আয়োজিত এক আনন্দমেলায় আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেছিলেন, ‘এই পবিত্র শিশুদের সংগে মিশি মনটাকে একটু হাল্কা করার জন্য।’ বঙ্গবন্ধু রাশিয়ায় সরকারি সফরে যাওয়ার সময় শিশুদের আঁকা ৭০টি ছবি নিয়ে যান সেখানে শুভেচ্ছা উপহার দেয়ার জন্যে। এর মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতার নিদর্শনকে মহার্ঘ্য হিসেবে দেখেছেন বঙ্গবন্ধু।
শিশু স্থান পেল সংবিধানেও
একাত্তরে পাকিস্তানী সৈন্যরা নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। অসহায় হয়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ মা, বোন ও শিশু। তাঁদের স্বার্থ রক্ষায় বঙ্গবন্ধু নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় ‘শিশু’ শব্দটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। রাষ্ট্রের সংবিধান হচ্ছে নাগরিকের রক্ষা কবচ। বঞ্চিত ও অনগ্রসর শিশুদের কল্যাণ ভাবনায় ১৯৭২ সালের সংবিধানে ২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
ব্যস্ততা শেষে সংসারই যার সার
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আদর্শ পিতা। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ আর রাজনীতির ব্যস্ততা কাটিয়ে যতটা সময় পরিবারে থাকতেন চেষ্টা করতেন সন্তানদের হাসি-আনন্দে ভরিয়ে দিতে। একই বিছানায় পরিবারের সকলকে নিয়ে শুয়ে বসে গল্পগুজবে মাতিয়ে রাখতেন। দেশের বাইরে যাবার সময়ও ছোট্ট রাসেলকে সঙ্গে নিতে ভুলতেন না। শুধু সন্তান নয় ন্ত্রীর প্রতিও ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস। ছেলেবেলায় বঙ্গবন্ধু নিজেও বাবার গলা জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসতো না।
শিক্ষকদের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা
ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষার্থী। যেখানে যখন পড়েছেন সেখানে শিক্ষকদের মন জয় করে নিয়েছেন অনায়াসে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা। স্কুল জীবন থেকেই রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে গেলেও কোন শিক্ষকই কখনও তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণের অভিযোগ করেন নি। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের স্বার্থে আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যখন বঙ্গবন্ধুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তখনও তিনি শিক্ষকদের কথা ভেবে তা মাথা পেতে নিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক ছাড়াও তাঁর তিনজন গৃহশিক্ষক সাখাওয়াত উল্লাহ পাটোয়ারি, কাজী আবদুল হামিদ এবং মৌলভী সাহেবের প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। পাটোয়ারিস্যারের বিদায়ের সময় তাঁর যাবতীয় বিছানাপত্রের গাঁটটি সেই শিশু বয়সে তিনি নিজের মাথায় করে পাটগাতি পৌঁছে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা স্কুলের শিক্ষক বেজেন্দ্রনাথ সূত্রধরকে মন্ত্রী-এমপিদের সামনে পায়ে ধরে সালাম করে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল উপেক্ষা করে তাঁকে নিজেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছিলেন। শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর এহেন আচরণ আজ বড় বেশি প্রয়োজন।
সোনার বাংলা গড়ার মূল ব্রত ছিল বঙ্গবন্ধুর
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ তিনটি বইতেই বঙ্গবন্ধু তাঁর যৌবনের দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। কবি হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন, “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, মিছিলের সব হাত কণ্ঠ পা এক নয়।” বঙ্গবন্ধুর সারাটা জীবন ছিল যৌবনের, মিছিল আর যুদ্ধের। কিন্তু সেই শৈশব-কৈশোর থেকেই বঙ্গবন্ধু বেড়ে উঠছিলেন অন্যরকম এক মানুষ হয়ে। তাইতো যৌবনের মিছিলে যৌবনের যুদ্ধে তাঁর হাত উত্তোলিত হতো সবার আগে আলাদা হয়ে। সবকিছু ছাড়িয়ে সর্বক্ষণ তাঁর মন কাঁদতো বাংলার মানুষের জন্যে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন- এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র ব্রত। আজকের যুবকদের মনে সেই ভাবনাটা এলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ন্যায়-নীতি, চিন্তা ও কর্ম থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে পারি তবে এই সোনার মানুষেরা সোনার বাংলা গড়ে তুলবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
জাতীয় শিশু দিবসে জাতির পিতা ফিরে আসেন বারবার
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা স্মরণীয় করে রাখার জন্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে। জাতীয় শিশু দিবস হলো শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার স্বীকৃতি। ১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রথম জাতীয় সম্মেলনে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ড. নীলিমা ইব্রাহিম বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উদ্যোগে ১৯৯৪ সালের ১৭ মার্চ প্রথম বেসরকারিভাবে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে জাতীয় শিশু দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারিভাবে জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালন বাতিল করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধু
সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন আলোয় ভরা এক সূর্য। সেই সূর্যের বিকিরণ শুরু হয়েছিল ছেলেবেলা থেকেই। তারপর থেকে ভালোবাসা, মায়া-মমতা দিয়ে কেবলই আলো ছড়িয়ে গেছেন। ৪৮, ৫২, ৫৪, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ ও একাত্তরের স্মৃতিমাখা প্রতিটি মুহূর্ত বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। সদা বিশ্বাসের ওপর ভর করে এই দেশটাকে ভালোবেসে নিজের জীবনটাও উৎসর্গ করে গেছেন। সূর্যের ক্ষয় নেই। এমন মহামানবের মৃত্যু নেই। নশ্বর এই পৃথিবীতে অবিনশ্বর বঙ্গবন্ধু এনও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন সমানভাবে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের স্রোতধারায় বেড়ে উঠুক আমাদের সকল শিশু
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য যে সোনার মানুষের কথা বলেছিলেন আজকের প্রজন্ম সেই স্বপ্নপূরণে গড়ে উঠুক। সৎ, সত্যবাদী, সাহসী আর নির্লোভ ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে দেশের আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠুক আমাদের সকল শিশু।জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী আদর্শের ¯্রােতধারায় আমাদের শিশুরা হোক একাত্ম, তারাই হোক দিন বদলের পাঞ্জেরী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভবিষ্যৎ কারিগর।
লেখক- জসীম উদ্দীন মাসুদ,জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার।
Discussion about this post