আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হলে শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন চীনা আইনপ্রণেতারা। এ নিয়ে বিক্ষোভ রুখতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে হংকংয়ে। এদিকে আধা স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলটির স্বাধীনতা রক্ষায় চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বিক্ষোভ দমনে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) হংকংজুড়ে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিতর্কিত এ বিল নিয়ে নতুন করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হংকং। আইন পরিষদ থেকে গণতন্ত্রপন্থি দু’জন আইনপ্রণেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৭ মে) চীন প্রস্তাবিত জাতীয় সঙ্গীত এবং নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হংকংয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য করে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে। এদিন ৩৬০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বুধবার বিকেলেও বিক্ষোভকারীদের হংকংয়ের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ‘স্বাধীনতাই একমাত্র পথ’ স্লোগানে মুখরিত হয় অঞ্চলটি।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী হংকং বিশেষ সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে।
তিনি কংগ্রেসকে বলেন, ‘নতুন আইন প্রণয়নে চীনের পরিকল্পনা হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার একাধিক পদক্ষেপের একটি মাত্র। এ অবস্থায় কোনো যুক্তবাদী মানুষ দাবি করবে না যে, চীনের কাছ থেকে উচ্চ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখে হংকং।’
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিচ্ছেদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পরিকল্পনার কথা জানায় বেইজিং। চীনা কর্তৃপক্ষ এবং হংকংয়ের বেইজিংপন্থি সরকার দাবি করে, নতুন এ নিরাপত্তা আইনে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন ঝুঁকিতে পড়বে না। এরইমধ্যে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা রুখতে আরেকটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয় চীন।
এদিকে বুধবার জাতিসংঘে হংকংয়ের বিষয়টি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় নিরাপত্তা আইন বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আহ্বান জানায় ওয়াশিংটন, এবং বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করে। আইনটি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে বেইজিং।
ইতোমধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে সেনা সমাবেশ, বাণিজ্য ও করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সংকট বেড়েই চলেছে। হংকংয়ে চীন নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করলে এ সংকট অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন জাতীয় সঙ্গীত বিল অনুযায়ী, হংকংয়ে চীনা জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ বিলে বলা হয়েছে, কেউ জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করলে, তার সর্বাধিক তিন বছরের কারাদণ্ড এবং/বা ৫০ হাজার হংকং ডলার (৬ হাজার ৪৫০ মার্কিন ডলার) জরিমানা হবে। আগামী মাসে বিলটি আইনে পরিণত করার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হংকং বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন তার ঘোষণা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। অঞ্চলটিতে এক হাজার তিনশ’য়েরও বেশি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে, যেগুলো প্রায় এক লাখ কর্মসংস্থান যোগায়। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভিসা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হতে পারে চীনকে।
হংকং চীনের ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’, যেখানে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি চালু রয়েছে। গত বছরের জুন মাসে চীন প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় অঞ্চলটিতে। পরে চীন এ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তারপরও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক হংকংয়ের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। নতুন প্রস্তাবিত বিল দু’টির কারণে অঞ্চলটিতে আবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
Discussion about this post