আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের এক কর্মকর্তার নিপীড়নের শিকার হয়ে জর্জ ফ্লয়েড নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত দুই ডজন শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
রোববার (৩১ মে) বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছোড়ে তারা।
রোববার রাত ৮টা থেকে সান ফ্রান্সিসকোতে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের ‘লুটেরা এবং নৈরাজ্যবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (৩০ মে) যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিকাগোতে দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এসময় অনেককে গ্রেফতার করা হয়।
লস এঞ্জেলেসে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য মাঠে নেমেছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সেনারা।
অন্যদিকে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস ঘিরে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার জনতা। এসময় তাদের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের ছবি ছিল এবং তারা স্লোগান দেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ’। ওয়াশিংটনেও নিরাপত্তা বাহিনীর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় একাধিক ভবনে ভাঙচুর হওয়ায় শুক্রবার (২৯ মে) জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
মিনিয়াপোলিস, নিউইয়র্ক, মায়ামি, আটলান্টা, ফিলাডেলিফায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিনিয়াপোলিস, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড, ন্যাশভিল, লুইভিলসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরে রাতের কারফিউ জারি করা হয়। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি শহর থেকে ১৪শ’ মানুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৫ মে) শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছেন। এসময় ফ্লয়েড বলেছেন, ‘প্লিজ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না’, ‘আমাকে মারবেন না।’
ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০ ডলারের একটি জালনোট ব্যবহার করেছিলেন। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার আগে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হাতকড়া পরাতে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি।
তবে পুলিশের সঙ্গে ফ্লয়েড কীভাবে সংঘর্ষে জড়ালেন তা ভিডিওতে দেখা যায়নি।
এ ঘটনায় নিরস্ত্র ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু রাখা ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে ডেরেক শভিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১ জুন) তার আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
Discussion about this post