আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন রাজনীতিক জেব বুশ বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প হবেন বিশৃঙ্খল প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ২০১৫ সালে দলীয় বিতর্কে দাঁড়িয়ে তিনি কথাটি বলেছিলেন। রিপাবলিকান দলের অন্যতম প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে জেব বুশের কথাটি তখন কেবল রাজনৈতিক বিতর্ক বলেই মনে হয়েছিল।
অন্য অনেক অনুমান ব্যর্থ হলেও বুশ পরিবারের অভিজ্ঞ রাজনীতিক জেব বুশের কথাটি আক্ষরিক অর্থেই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকার গত চার বছর ছিল বিশৃঙ্খলার। পুনর্নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগেও চলছে বিশৃঙ্খলা। এই সময় ট্রাম্পকে দেখে জেব বুশের বলা ‘দ্য কেওস প্রেসিডেন্ট’ কথাটি বারবার বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
৭ জুন এনবিসি এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল আয়োজিত এক জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ওই জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকার ১০ জন নাগরিকের মধ্যে আটজনই মনে করে দেশটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। আর মাত্র ১৫ শতাংশ মনে করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন থেকেই এক অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ শাসন করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিজেই বহু বিতর্ক ও অস্থিরতা ডেকে এনেছেন। দিনে অগুনতি টুইট করে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিতর্ককে। আমেরিকার নির্বাচন কাঠামোতে ইলেকটোরাল ভোটের বণ্টন বড়ই জটিল। আগামী নির্বাচনে এ ভোট বন্টনে মিশিগান গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হয়ে উঠেছে। ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস নামের পত্রিকার জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে ১২ শতাংশ পিছিয়ে আছে। উইসকনসিন, অ্যারিজোনা, ওহাইও এবং টেক্সাসেও জনমত জরিপে ট্রাম্প জো বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে আছেন বলে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এসব জনমত জরিপকে প্রকাশ্যে কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, সব ঠিকঠাক আছে। যদিও ৫ জুন সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প তাঁর জ্যেষ্ঠ প্রচারণা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন। ভেতরে ভেতরে উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে।
ডেমোক্রেট দলের নিশ্চিত প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত তিন মাস থেকে কার্যত জনসমক্ষে ছিলেন না। করোনাভাইরাসের কারণে ডেলাওয়ার রাজ্যের নিজের বাড়িতে তিনি অবস্থান করেন পুরোটা সময়। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর ক্ষোভে উত্তাল আমেরিকার রাজনীতির উত্তাপে তিনি আগুন যোগ করারও কোনো প্রয়াস নেননি। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই জো বাইডেন এমনটি করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতিকে কতটা নাজুক করতে পারেন, যেন তার অপেক্ষায় ছিলেন বাইডেন।
তবে এ সপ্তাহের শুরুতেই বেরিয়ে পড়ছেন জো বাইডেন। টেক্সাসে জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের সঙ্গে একান্তে দেখা করবেন, শোক জানাবেন। ৯ জুন জর্জের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য ভিডিও বার্তা দিয়ে যোগ দিচ্ছেন। প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ভিন্ন। নিজে থেকে দেওয়া তাৎক্ষণিক বক্তব্যে তাঁর অনেক সময়েই বেফাঁস কথা বলার ইতিহাস আছে। এ কারণে একদম মেপে চলা ও বক্তব্য দেওয়ার পরামর্শ হয়তো দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।
জো বাইডেন খুবই সংযত বক্তব্য রাখছেন এবং ধীরে এগোচ্ছেন বলেই মনে করছেন আমেরিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। জো বাইডেনের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে আসছেন, এ নিয়ে আলোচনা এখন জোরালো। বাইডেন নিজে বলেছেন, ১ আগস্টের আগেই তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে তাঁর পছন্দের কথা জানিয়ে দেবেন। আমেরিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় একজন নারীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেন সঙ্গে নিচ্ছেন, এ নিয়ে অনেকেই একমত। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কমলা হ্যারিসের নাম সামনে চলে এসেছে। জর্জ ফ্লোয়েডের ঘটনার পর কমলা হ্যারিসই প্রকাশ্যে ছিলেন প্রতিনিধিত্বশীল ডেমোক্রেটদের মধ্যে। আন্দোলনকারীদের সমর্থন করেছেন। আমেরিকাজুড়ে চলমান বর্ণবাদ-বিরোধী মনোভাবে কমলা হ্যারিসকে ভালো প্রার্থী মনে করা হচ্ছে। আফ্রিকান, ইন্ডিয়ান ও আমেরিকান মিশ্র অভিবাসনের প্রতিনিধি কমলা হ্যারিসকে নিয়ে তাই ডেমোক্রেটদের মধ্যে বেশ উৎসাহও দেখা দিয়েছে। আমেরিকার বিশৃঙ্খল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কাজটি বাইডেন কতটা করতে পারবেন, তা দেখার জন্য নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ।
Discussion about this post