আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নেপালের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে আজ বৃহস্পতিবার(১৮জুন) দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মানচিত্র হালনাগাদকরণে সংবিধান সংশোধনী বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। নতুন এই মানচিত্রে তিনটি ভারতীয় অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত শনিবার সংসদেন নিম্নকক্ষে বিপুল ভোটে নতুন মানচিত্রসংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব পাস হওয়ার পর ভারত নেপালের আঞ্চলিক দাবির ‘কৃত্রিম সম্প্রসারণ’কে অযোগ্য বলে অভিহিত করে।
ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, নেপালের সংসদের উচ্চকক্ষ বা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে দেশের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রকে জাতীয় প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করতে ৫৭ সদস্যের প্রত্যেকেই পক্ষে ভোট দেন।
মে মাসেই ভারতের এলাকা নিজেদের দাবি করে বিতর্ক উসকে দিয়েছিল নেপাল। ভারতের উত্তরাখন্ডের কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরা অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করল দেশটি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনটি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্রের অনুমোদন দেয়।
২০ মে নেপালের মন্ত্রিসভা দেশটির নতুন এ প্রশাসনিক মানচিত্র প্রকাশ করে, যা ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি করে। সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করছে নেপাল। এ দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কোমর বেঁধে নামেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, যার প্রকাশ ছিল সেই নতুন মানচিত্র। বিষয়টিকে নেপালের ‘একচেটিয়া’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু এত সত্ত্বেও নেপাল পিছু হটেনি।
নেপাল সংসদের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধিসভায় গত শনিবার সংবিধান সংশোধন বিলটি পাস হয়। নিম্নকক্ষের ২৭৫ ভোটের মধ্য ২৫৮টি পড়ে সংশোধনের পক্ষে। নিম্নকক্ষে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থনে পাস হওয়া বিলটি এরপর উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আসে। এখানে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ায় এখন তা পাঠানো হবে দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে অনুমোদনের জন্য।
ভারতের ‘দখলে থাকা’ তিনটি অঞ্চলকে ফেরানোর দাবি জানিয়ে নেপালের সংসদে একটি প্রস্তাব পেশ করে দেশটির শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি। এরপরই নতুন মানচিত্রের কথা ঘোষণা করেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালি।
মানস সরোবর পর্যন্ত তীর্থযাত্রা আরও সুগম করতে উত্তরাখন্ড থেকে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার লম্বা সড়ক তৈরি করছে ভারত। এ পথ তৈরি হলে সময় বাঁচবে। যেটা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নেপাল। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটি। ওই সড়ক দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে আগেই সমালোচনা করেছিল কাঠমান্ডু।
ভারত ও নেপাল দুই দেশই দাবি করে এই কালাপানি তাদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। নেপালের দাবি, এই এলাকা তাদের দেশের ধারচুলা জেলার মধ্যে পড়ে, অন্যদিকে ভারতের পাল্টা দাবি, কালাপানি উত্তরাখন্ডের পিথরগড় জেলার অন্তর্গত।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালির দাবি, নেপালের জমিতে সড়ক তৈরি করে ভারত দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের রাজার মধ্যে সই হয় সুগাউলি চুক্তি। সেখানে বলা আছে, মহাকালী নদীর পূর্বের অংশ নেপালের। ১৯৮৮ সালের বৈঠকেও ভারত স্থায়ী সীমান্ত মেনে চলতে রাজি হয়েছিল।
নেপালের এমন দাবি নাকচ করেছে ভারত। সড়কটি ভারতের জমিতে তৈরি বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। নেপালের মানচিত্র পরিবর্তনকে চীনের চাপ হিসেবে দেখছে ভারতের কূটনৈতিক মহল।
১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের পর থেকে চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু হয় নেপালের। নেপাল এমনিতেই ভূমি সীমান্তবেষ্টিত দেশ। তার একদিকে কিছুটা তিব্বত, অন্যদিকে সীমান্তের বেশির ভাগ অংশই ভারতের সঙ্গে। তথ্যসূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট ও কাঠমান্ডু পোস্ট, এনডিটিভি
Discussion about this post