আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনা শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল অপহরণের শিকার হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলে বাধ্য করা হচ্ছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দিতে। সোমবার (২৭ জুলাই) অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে, অর্থ আদায়ের জন্য প্রমাণ হিসেবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অপহরণের ভিডিও অভিভাবককে পাঠাতে বাধ্য করা হয়।
চলতি বছর ৮টি ভার্চুয়াল অপহরণের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। যার মধ্যে একটি ঘটনায় সাড়ে ১৪ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয় অপহরণকারী চক্র। পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীর পরিবার মনে করে, তাদের প্রিয়জন বিপদে আছে। তাদের উদ্ধারে তখন মোটা অংকের অর্থ দিতে বাধ্য হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ জানান, এ ধরনের অপকর্মের ঘটনা চলতি বছর ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দুষ্কৃতিকারী এ ফাঁদ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে বলেও জানানো হয়। মোবইলে কলে এ ধরনের হুমকি ফেলে দ্রুত বিষয়টি পুলিশকে জানানোর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বিদেশ থেকে কলের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চক্রগুলো। যার কারণে তাদের নাগাল পাওয়া কষ্টকর। সাধারণত প্রতারকরা নিজেদের চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন ব্যক্তির পরিচয় দেয়। কল দিয়ে বলে, আপনি চীনে অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আপনাকে এ জন্য শাস্তি পেতে হবে। এসব বলে তাদের হুমকি দেয়া হয়।
প্রতারণাকারীরা বেশিরভাগ সময় চীনের মানদারিয়ান ভাষায় কথা বলে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হয়। হুমকি দিয়ে বলা হয়, না হলে তাদের গ্রেফতার বা দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রতারণাকারীদের কথায় রাজি হয়ে শিক্ষার্থীরা পরিবার-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। হোটেলে একটা রুম ভাড়া করে। অপহরণের নাটক সাজিয়ে বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজন থেকে অর্থ আদায় করেছে।
একটি ঘটনায় দেখা গেছে, এক বাবা তার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য সাড়ে ১৪ লাখ মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দিয়েছেন। এর আগে মেয়েকে অপরিচিত জায়গায় আটকে রাখার একটি ভিডিও ওই বাবার কাছে পাঠানো হয়। তারপর ওই বাবা সিডনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেড় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে শহরের একটি হোটেল রুম থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বছরের আরেকটি ঘটনায়, অপহরণকারীরা ৩ লাখ অস্ট্রেলিয়ো ডলার হাতিয়ে নেয়। অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ডেরেন বেনেত বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা অপহরণকারীদের পুরো অর্থ পরিশোধ করে দেয়। অধিকাংশ ঘটনায়, একদিনের মধ্যে পুলিশ সুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। মাঝে মাঝে ভুক্তভোগীরা দুর্ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানাতে সংকোচবোধ করে, ভয় পায়।
‘ভার্চুয়াল অপহরণের শিকার ভুক্তোভোগীদের উদ্ধারের পর তাদেরকে বিধ্বস্ত অবস্থায় পেয়েছি। তারা যথেষ্ট ভীত ছিল এবং এ ভেবে অপরাধবোধ করছিল যে, সত্যি তারা তাদের স্বজনদের বিপদে ফেলেছে। বলছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ। পুলিশ বলছে, ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যাপকভাবে তাদের চক্রান্তের জাল ফেলে। এক্ষেত্রে চীনা ভাষায় রেকর্ড করা ফোনকল পাঠানো হয়।
‘তারা বহু মানুষের কাছে এমন বার্তা পাঠায়। কিছু মানুষ তাতে আটকে পড়ে। যা তাদের জন্য লাভজনক।’ বলেন, বেনেত। তিনি বলেন, গেলো কয়েক মাস ধরে এ হার তীব্রভাবে বাড়ছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কেউ না কেউ এ ধরনের ফাঁদে পড়ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরামর্শক একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, যেসব শিক্ষার্থী কাজ করতেন, করোনার কারণে এখন তারা বেকার। সরকার যে ভাতা দিতো তাও বন্ধে। এখন নিজেদের ব্যয়ভার বহনে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণকারীদের উৎপাত। যা তাদের নতুন ঝুঁকিতে ফেলছে।
পুলিশ বলছে, পরিবেশ অনেক বড় একটা বিষয়। যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী একা থাকে, তারাই বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে। একা থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা শিক্ষার্থীদের মনজগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। ভুয়া অপহরণের নাটক সাজানো ছাড়াও তখন তাদের দিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন বেনেত।
‘শিক্ষার্থীরা চাইলে নিজেদের রক্ষায় দুটি কাজ করতে পারে। এক চক্রান্তকারীদের অবস্থানের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে। দুই, এ ধরনের ঘটনা আঁচ করতে পারা মাত্র সহযোগিতা চাইতে পারে।’
এধরনের প্রতারণার ঘটনা নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রেও ঘটেছে জানিয়েছে দেশগুলোর গণমাধ্যম।
Discussion about this post