আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছর বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সোমবার ব্রাসেলসে ইইউর সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে গৃহীত চলতি ২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামোগুলোতে ইইউর অগ্রাধিকারপত্রে এ বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
ইইউর ওই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এসেছে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দায়মুক্তি ও অসাম্যের বিরূদ্ধে লড়াইবিষয়ক অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি সক্রিয় করা, আইনের শাসন ও সুশাসনের নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অসাম্য ও দায়মুক্তির বিরূদ্ধে লড়াই নিশ্চিত করতে ইইউ সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখবে।’
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত, অংশগ্রহণের অধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ইইউ সাংবাদিক, ব্লগার ও অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি হুমকি ও তাদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো অব্যাহত রাখবে। অনলাইনে সরকারি নিয়ন্ত্রণের দিকে ইইউ নিবিড় দৃষ্টি রাখবে। এছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষা ও ভুয়া তথ্য প্রচার মোকাবিলাকে ইইউ উৎসাহিত করবে।
ইইউ তার অগ্রাধিকারে বলেছে, ‘কভিড-১৯ মহামারির পটভূমিতে যেকোনো বিধিনিষেধ অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, চাদ, কমোরোস, কঙ্গো, উত্তর কোরিয়া, মিশর, ইরিত্রিয়া, ইকোয়িটেরিয়াল গিনি, হাইতি, ইরান, মালি, ফিলিপিন্স, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, নিকারাগুয়া, রাশিয়া, ক্রিমিয়া ও সেভাস্তিপোল, রাশিয়ার অবৈধভাবে সংযুক্ত এলাকা, ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেন, সৌদি আরব, তাঞ্জানিয়া, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে পরিস্থিতি ইইউ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবে।’
ইইউর সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ইইউ পররাষ্ট্রবিষয়ক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইইউ মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান ও সুরক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইইউ বিশ্বে সংখ্যালঘুদের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো সজাগ থাকবে।
ব্রাসেলসে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারবিষয়ক এই সিদ্ধান্ত বছরজুড়ে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকাণ্ডে রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বে মানবাধিকার বিষয়ে ইইউর অন্যান্য অগ্রাধিকারের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার, জলবায়ু ও মানবাধিকারের মধ্যে সমন্বয় জোরদার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া ইইউ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থান অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর নিন্দা জানাবে ইইউ।
এ বছরও শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছে ইইউ। এ ক্ষেত্রে নারী, শিশু ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে সেগুলোর মূল কারণগুলো সমাধানে সমন্বিত চেষ্টা চালাবে ইইউ।
ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রিদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সেগুলোর নিন্দা জানাবে ইইউ। মানবাধিকার লংঘনকারীদের প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অপরাধের দায়মুক্তির অবসান, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষেও ইইউ অবস্থান নেবে।
Discussion about this post