আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে সৌদি আরবকে বের হতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকলেও বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক ফোরাম জি ২০-এর সদস্য সৌদি আরব। খবর আরব নিউজের।
জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গত শুক্রবার রিয়াদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যনীতি তৃতীয়বারের মতো পর্যালোচনা করে।
তবে বিবিসির এক খবরে বলা হচ্ছে- সৌদি আরবের অর্থনীতির অবস্থা ক্রমেই নাজুক হচ্ছে। দেশটির আর্থিক সঙ্গতি যে ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে, তা একটি চিত্র থেকেই বোঝা যায়। যুবরাজ মোহাম্মদের পিতা সালমান ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি যখন দেশের বাদশাহ হন, তখন সউদি আরবের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চার বছরের ব্যবধানে ২৩৩ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়ে গত বছর ডিসেম্বরে সেটি নেমে আসে ৪৯৯ বিলিয়নে। এ হিসাব সউদি অ্যারাবিয়ান মানিটরি অথরিটি বা এসএএমএ-র। অপরদিকে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সউদিদের মাথাপিছু আয় ২০১২ সালের ২৫ হাজার ২৪৩ মার্কিন ডলার থেকে কমে ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৩৩৮ মার্কিন ডলারে। টান পড়েছে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত অর্থে। আইএমএফ আভাস দিয়েছে, দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ এ বছর দাঁড়াবে জিডিপি-র ১৯ শতাংশ এবং আগামী বছর ২৭ শতাংশ। আর করোনা ভাইরাস ও তেলের দরপতনে ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ হবে জিডিপি-র ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক।
সৌদি অর্থনীতির এ ধারাবাহিক নিম্নগামিতার পেছনে বেশ কিছু কার্যকারণ রয়েছে। এরমধ্যে আছে ইয়েমেন যুদ্ধ, মিশরে ক্যু এবং আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানাভাবে হস্তক্ষেপে জড়িয়ে পড়া, আমেরিকার কাছ থেকে সামর্থ্যরে চাইতেও বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে অস্ত্র কেনা এবং নিওম ফিউচারিস্টিক সিটি নির্মাণের মতো উচ্চ ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহন। এর বাইরে যুবরাজের ব্যক্তিগত বিলাসিতার বিষয়টি তো আছেই! তার আছে তিনটি ইয়ট বা প্রমোদতরী , অনেকগুলো প্রাসাদ এবং অসংখ্য মূল্যবান চিত্রকর্ম। এসবই সউদি অর্থনীতির ধারাবাহিক নিম্নগামিতার জন্য আংশিকভাবে দায়ী বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হয়।
সৌদি আরবের অর্থনীতির বর্তমান দুর্দশা করোনা দুর্যোগের কারণে হয়নি, এর শুরু অনেক আগে থেকেই। সেই ২০১৭ সাল থেকে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার নামেমাত্র শূন্য দশমিক তিন শতাংশ আর নির্মাণকাজ কমে যায় ২৫ শতাংশ। এর সাথে এখন যোগ হয়েছে করোনাজনিত লকডাউন। লকডাউনের কারণে বাতিল হয়ে গেছে পবিত্র হজ্ব ও উমরাহ। এ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ সউদি আরব আসতো। এ খাত থেকে দেশটির আয় হতো অন্তত ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ বছর এ আয়ের পুরোটাই হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিতে হবে।
Discussion about this post