আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। উইঘুর নিপীড়নের কারণে দেশটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে প্রতিশোধমূলক এই পাল্টা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। চীনের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রাজনীতিবিদসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১০ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে চীন। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘ব্যাপক হস্তক্ষেপ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের’ ফলে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সোমবার জানিয়েছে বেইজিং।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্ষতিকরভাবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য’ ছড়ানোর কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যক্তি ও চারটি প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
তালিকায় থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়েনের পাঁচ এমপি-র মধ্যে রয়েছেন রাইনহার্ড বুটিকোফার, মিশায়েল গাহলার, রাফায়েল গ্লুকসমান, ইলহান কিউচুক ও মিরিয়াম লেক্সমান। এছাড়াও তালিকায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্মান মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান সেন্স, যিনি তিব্বত ও জিনজিয়াং-এ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে জার্মান প্রতিষ্ঠান মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ ও ডেনিশ একটি সংস্থা।
বেইজিং জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা চীনের মূল ভূখণ্ড এবং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং ও ম্যাকাওয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেই সঙ্গে তারা যেসব কোম্পানি ও ইনস্টিটিউট এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেগুলোও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না।
এর আগে সোমবার চীনের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে চারটি রাজ্যের আঞ্চলিক ও দলীয় প্রতিনিধি, জিনজিয়াং প্রদেশের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ইইউ তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করে।
উইঘুর নিপীড়নের ঘটনায় ইউরোপের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইইউ। এটিকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।
ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, চীন তাদের নীতি বদল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যায্য উদ্বেগকে বিবেচনায় নেওয়ার বদলে আবারও একচোখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির পদক্ষেপকে তিনি দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি বলেছেন, বেইজিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার পরিণতি তারা ভোগ করবে। চীনের পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। এই ইস্যুতে চীনের রাষ্ট্রদূতকে দেশটি তলব করেছে বলেও জানান তিনি।
একই ধরনের পদক্ষেপের নিয়েছে ফ্রান্স। চীনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্রাসেলস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী সোফি উইলমস।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নাম আসা জার্মান আইন প্রণেতা রাইনহার্ড বুটিকোফার চীনের পদক্ষেপকে পরিহাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘তারা (চীন) শুধু নিজের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না। এখন এর বাহ্যিক রূপ দিতে চায়। আমি মনে করি গণতন্ত্রের শক্তিকে তারা অবমূল্যায়ন করছে।’
ইইউ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
জিনজিয়াং অঞ্চলের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে ইইউ। ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের গণহত্যার ঘটনার পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিলো জোটটি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন একে ট্রান্সআটলান্টিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জন্য এটি একটি কঠোর বার্তা। সামনের দিনে সম্মিলিত এমন পদক্ষেপ চলতে থাকবে বলে জানান তিনি। সূত্র: ডিডব্লিউ।
Discussion about this post