অনলাইন ডেস্ক
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক খাবারগুলোর দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে পৃথিবীব্যাপী খাদ্য সুরক্ষার ওপর চাপ বেড়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ দুর্ভিক্ষের আসন্ন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মঙ্গলবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইতালির রোমভিত্তিক জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক অঙ্গ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেছেন, ‘এছাড়া আরও পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন।’
তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে চারটি দেশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে চার কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দুয়ারে দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। ঝুঁকিতে থাকা ৪৩ দেশের এসব মানুষের জন্য আমাদের জরুরিভিত্তিতে ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।’
ক্ষুধা নিরসনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ এখনো প্রতিদিন রাতে কোনো খাবার না খেয়ে ঘুমাতে যান।
সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছায় অনুদানের অর্থ দ্বারা পরিচালিত এই সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে এ জন্য দ্রুত তহবিলের যোগান চেয়ে আরও বলেন, ‘আমাদের তহবিল (ফান্ডিং) দরকার এবং এটা আমাদের দরকার এখনই।’
রয়টার্স জাতিসংঘের বরাত দিয়ে বলছে, বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে প্রতি বেলা খাবার পায় না এমন মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পর দেশে দেশে সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০১৬ সাল থেকে সেই সংখ্যাটা আবার বাড়তে শুরু করে।
ডব্লিউএফপির হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে এই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়তে থাকে। আর চলতি বছর তা চার কোটি ছাড়িয়েছে।
গত মে মাসে বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম এক দশকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়। জাতিসংঘের হিসাবে, গত মাসে বিশ্বে দানাদার খাবার, তেল, দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস এবং চিনির মতো জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
লেবানন, নাইজেরিয়া, সুদান, ভেনেজুয়েলা এবং জিম্বাবুয়ের মতো দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন এই চাপগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেশি করে বেড়েছে। আর এতে করে বিশ্বে খাদ্য সুরক্ষায় দেখা দিয়েছে এই বিপর্যয়।
২০২০ সালে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনের পাশাপাশি আফ্রিকার আরও দুই দেশ নাইজেরিয়া এবং বুরকিনা ফাসোর কিছু কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি রয়েছে।
Discussion about this post