আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনে কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিতীয় জলবিদ্যুৎ ‘হাইড্রোপাওয়ার স্টেশন’। বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের বিষয়টি উপেক্ষা করে একে বেইজিংয়ের কার্বন নিরপেক্ষ লক্ষ্য অর্জনের মাইলফলক হিসেবে তুলে ধরছেন চীনের কর্মকর্তারা।
১ জুলাই চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিব্বত মালভূমির দক্ষিণ–পূর্ব প্রান্তের জিনশা নদীর ওপর নির্মিত ২৮৯ মিটারের বাইহেতান জলবিদ্যুৎ বাঁধের আংশিক কার্যক্রম আজ সোমবার শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানাচ্ছে, বাইহেতানের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। যখন এখানে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে, তখন একদিনের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ৫ লাখ মানুষের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার হিসাবে চীনের ‘থ্রি জর্জেজ ড্যাম’ নামের বাঁধ প্রকল্প আগে থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর বাইহেতান হাইড্রোপাওয়ার ড্যাম নামের যে বাঁধটি উদ্বোধন করা হলো, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফটকওয়ালা বাঁধ।
এক গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দানবাকৃতির হাইড্রো টারবাইন ব্যবহৃত হবে। এরকম অন্তত ১৬টি জেনারেটর থাকবে। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে থ্রি জর্জেজ ড্যাম, যার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ২২ গিগাওয়াট।
সর্বাধিক জনবহুল দেশ চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিপুল মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা ছাড়াও এর নেপথ্যে দেশটির উচ্চাভিলাসী তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির গৌরবের বিষয়টিও রয়েছে।
বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প স্বাদুপানির জীবকে ধ্বংস করে, বদ্বীপগুলোকে ক্ষয় করে। জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে।এসব বাঁধের কারণে চীনের ভেতরেই সাড়ে তিনশ’র বেশি হ্রদ শুকিয়ে মরে গেছে এবং বহু নদীর পানিপ্রবাহ কমে গেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসলেও চীন তা কানে তোলেনি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রকাশিত অভিনন্দন বার্তায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘তিনি আশা করছেন এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চীনের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে গত বছর প্রতিশ্রুতি দেন শি জিনপিং। কিন্তু পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, এসব বাঁধ বিপন্ন ইয়াংজে ফিনলেস পোরপোসিসহ বিরল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসকে ব্যাহত করবে।
জুনে টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নালের এলজেভিয়ার সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা লেখেন, বাঁধ নির্মাণের ফলে ইয়াংজ্জি নদীর অববাহিকায় নদীর তলদেশে বড় আকারের হাইড্রোফিজিক্যাল এবং মানব স্বাস্থ্যের ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।’
চীনের অবকাঠামোগত বিশাল প্রকৌশল প্রকল্প কয়েক হাজার স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ। চীনে আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশে।
Discussion about this post