আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিক্ষোভকারীরা কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশে রানি ভিক্টোরিয়া ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে। সম্প্রতি কানাডায় একের পর এক আদিবাসী শিশুদের গণকবর উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষোভের জেরে এ হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া তারা আরও ১০টি ক্যাথলিক চার্চে হামলা চালায়।
আজ শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। এসব স্কুল ১৯ ও ২০ শতকে ক্যাথলিক চার্চের অধীনে পরিচালিত হত। এসময় দেড় লাখের বেশি আদিবাসী শিশুকে এসব স্কুলে জোর করে রাখা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে কবরগুলো ওই শিশুদেরই।
বৃহস্পতিবার ছিল কানাডার ১৫৪তম জন্মদিন। জাতীয় এ দিবসটি উপলক্ষে দেশজুড়ে নানা আয়োজন চলছিল কানাডায়। এসময় হঠাৎ বিভিন্ন চার্চে হামলা শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। ভেঙে দেয়া হয় অনেকগুলো চার্চের জানালা ও দরজা। চার্চের জানালার গ্লাসে রক্ত লাগানো হাতের ছাপও দিয়েছেন কেউ কেউ। এক পর্যয়ে ভবনের প্রাঙ্গনে থাকা রানি ভিক্টোরিয়া ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য টেনে ফেলে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর আগেও কানাডায় বেশ কয়েকটি স্থানে চার্চে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
আঠারো-উনিশ শতকে কানাডা সরকার ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের যোগসাজশে আদিবাসীদের সঙ্গে করা হয়েছিল বর্বর আচরণ। আদিবাসী সন্তানদের আধুনিক সমাজে খাপ খাওয়ানোর নামে জোরপূর্বক আবাসিক স্কুলে রাখার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার, তার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। স্কুলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায় কয়েক হাজার শিশু। পরে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলেও কৌশলে চাপা পড়ে যায় আদিবাসী শিশুমৃত্যুর বিষয়টি। সম্প্রতি ওই ধরনের বেশ কয়েকটি স্কুলে কয়েকশ কবরের সন্ধান পাওয়ার পর চলছে সমালোচনা।
সবশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ক্র্যানব্রুক এলাকার কাছাকাছি সেন্ট ইউজেনস মিশন স্কুল। বহু বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলটির প্রাঙ্গণে ১৮২টি কবর খুঁজে পেয়েছেন অনুসন্ধানকারীরা।
সর্বশেষ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের একটি সাবেক আবাসিক বিদ্যালয়ের কাছে ১৮২টি অচিহ্নিত কবর পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে একটি আদিবাসী গোষ্ঠী।
এর আগে, মে ও জুন মাসেও এমন ধরনের দুইটি বিদ্যালয় থেকে কয়েকশ কবর পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিবাসী নেতারা ধারণা করছেন, তদন্ত অব্যাহত থাকলে আরো কবর পাওয়া যাবে।
১৮৩১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এ ধরনের ১৩০টি আবাসিক স্কুল। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এই প্রথার জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু এসব আবাসিক স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে যে প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল, সেই প্রধান ক্যাথলিক চার্চ এখন পর্যন্ত এজন্য ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ করেনি।
সূত্র: বিবিসি।
Discussion about this post