আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমকে বন্দি রেখে নির্যাতন-গণহত্যা-ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনের ১০টি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এর আগে জুনে একই ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সোলার প্যানেল, সফটওয়্যার ও কম্পিউটার প্রযুক্তি উৎপাদনভিত্তিক ৫ টি চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই ৫ টি কোম্পানিরই ব্যবসা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্প্রতি যে ১০ টি কোম্পানিকে কালো তালিকায় ফেলা হয়েছে, সেসব কোম্পানির নাম কিংবা তাদের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা। তবে তারা বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা রয়েছে- এমন আরও ৪ টি চীনা কোম্পানিকে যুক্ত করা হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন শুক্রবার এক বার্তায় এ সম্পর্কে বলেন, ‘চীনের কোম্পানিসমূহের যাবতীয় আইনসম্মত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দেশের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ এনেছে তা পুরোপুরি অসত্য এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর বিষয়েও চীন তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে।’
গত কয়েক বছর ধরে জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বন্দিশিবিরে রাখার পাশাপাশি তাদের গণহত্যা, বাধ্যতামূলক শ্রমদান এবং উইঘুর নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পম্পেও সর্বপ্রথম চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াংয়ে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছিলেন। গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন- উইঘুর মুসলিমদের গণহারে হত্যা করছে চীন।
তার এই বক্তব্যের জেরে পম্পেও এবং বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার; এবং তা এখনও বহাল আছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের অভিযোগ, চীনের ক্ষমতাসীন সরকার জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে একটি ক্যাম্পে বন্দি করে রেখেছে। তাদের ধর্মের অধিকার, সন্তান উৎপাদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে; যদিও এসব অভিযোগ কখনোই মানতে চায়নি চীন।
তবে চীন না মানলেও জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া উইঘুররা ভয়াবহ অত্যাচারের কথা বলেছেন।
জিনজিয়াংয়ে দেশি-বিদেশি কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা পর্যবেক্ষক দলকে এখন পর্যন্ত যেতে দেয়নি চীনের ক্ষমতাসীন সরকার; ফলে জিনজিয়াঙে আসলে কী ঘটছে তা এখনও বিশ্বাবাসীর কাছে অস্পষ্ট।
বিবিসির এক অনুসন্ধানে উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের রক্ষী ও কর্মকর্তারা উইঘুর নারীদের নিয়মিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করছেন বলেও উঠে আসে ওই অনুসন্ধানে। চীনের সরকার অবশ্য এই প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিবিসির ওই প্রতিবেদন ‘মনগড়া’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা।
উইঘুর মুসলিমদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আদালতেও একটি পিটিশন জমা পড়েছিল। কিন্তু বিচারপতিরা সেই আবেদন গ্রহণ করেননি। না করার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছিলেন, চীন যেহেতু আদালতে আসবে না, ফলে এই অভিযোগের বিচার করা সম্ভব নয়।
সূত্র : রয়টার্স
Discussion about this post