অনলাইন ডেস্ক
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রান্না বিষয়ক টেলিভিশন রিয়ালিটি শো। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এই শো শীর্ষে।
প্রতিযোগীতার শেষ পর্বে হেঁশেলের খেলায় ‘আন্ডার ডগ’ থেকেও বিচারকদের মন কেড়ে নেন, ফিজির ভারতীয় বংশদ্ভুত প্রতিযোগী জাস্টিন নারায়ণ।
অন্যদিকে সাদামাটা পান্তা আর আলুভর্তার মতন খাঁটি বাংলাদেশী রান্না করে গোটা পর্বে সবার মন জয় করা কিশোয়ার ফাইনালে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকে ছিল।
তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা তো বটেই অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমেও জয়জয়কার ছিলো কিশোয়ারের রান্নার কারিশমা। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছেন পিট ক্যাম্বেল। চ্যাম্পিয়ন জাস্টিন পাবেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। যা প্রায় ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে পিট ও কিশোয়ার পাবেন যথাক্রমে ৩০ ও ২০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
এর আগে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল রাউন্ডে উঠে চমক দেখান কিশোয়ার চৌধুরী। পরে গেল রোববার তিনি প্রথম তিনজনের মধ্যে চলে আসেন। এই তিন জনের মধ্যেই সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনের ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরীর নানা পদের রান্নার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। লাউ চিংড়ি থেকে শুরু করে বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, আমের টক, খাসির রেজালা, ফুচকা, চটপটি, সমুচার রেসিপি দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন কিশোয়ার।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার। পেশায় বিজনেস ডেভেলপার এবং পারিবারিক প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাবা কামরুল হোসেন চৌধুরী। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও মুক্তিযোদ্ধা এবং মা লায়লা চৌধুরী।
বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। আর মায়ের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। কিশোয়ারের জন্ম ও বেড়ে উঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক করার পর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনে মাস্টার্স করেছেন।
বাঙালি রান্নার প্রতি শৈশব থেকেই ঝোঁক ছিলো কিশোয়ারের। বাবা-মা সেই ছোটবেলা থেকেই রান্নার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে সব তথ্য মেয়েকে জানাতেন। নিজেদের বাগানে ফলানো শাক-সবজি দিয়ে ছোটবেলা থেকেই রান্নায় হাত পাকান কিশোয়ার।
রান্নাঘরে মাকে সহায়তা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে রান্নার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন কিশোয়ার। একটা সময় মা তার মেয়েদের হাতে ছেড়ে দিতেন বিভিন্ন পদ রান্নার করার কাজ। এমনও হয়েছে একদিন বা একবেলার রান্না কিশোয়ার ও তার বোন মিলেই করে ফেলেছন।
কিশোয়ারের মাস্টারশেফে অংশ নেয়ার চিন্তা মাথায় আসে ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে করোনা মহামারী পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর। ১১ বছরের ছেলে মিকাইল ও চার বছরের মেয়ে সেরাফিনার উৎসাহে তিনি নাম নাম লেখান মাস্টারশেফে। সেই সঙ্গে ছিলো জীবনসঙ্গী এহতেশাম নেওয়াজের সার্বক্ষণিক সমর্থন।
মাস্টারশেফের প্রাথমিক বাছাইয়ের বৈতরণী পার হয়ে কিশোয়ার জায়গা করে নেন সেরা ২৪ জনের মধ্যে। তারপর শুরু হয় কঠিন লড়াই। শুরু থেকে কিশোয়ারের ইচ্ছা ছিলো বাঙালি খাবার বা রসনাকে অস্ট্রিলিয়ার পাশাপাশি গোটা বিশ্বে তুলে ধরা।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ১৩তম আসরের শুরু থেকেই কিশোয়ার বাঙালি রান্নার নানা পদ তৈরি করে বিচারকদের মন জয় করতে থাকেন। তার পান্তা ভাত আর আলু ভর্তা তো রীতিমিতো বিচারকদের মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে, কারণ এমন খাবারের নাম আগে কখনও শুনেননি।
এভাবেই ধাপে ধাপে কিশোয়ার মাস্টারশেফের ফাইনাল রাউন্ডে চলে আসেন। তৃতীয় স্থান পেলেও এখানেই থেমে যেতে রাজি নন কিশোয়ার। বাঙালি সংস্কৃতি আর খাবার নিয়ে একটি বই লেখার ইচ্ছা আছে জানিয়েছেন কিশোয়ার চৌধুরী।
Discussion about this post