আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ত্রিদেশীয় অকাস চুক্তিকে ঘিরে মিত্র ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রথম ভাষণে বলেছেন, বর্তমান বিশ্বের একটি চূড়ান্ত দশকের মধ্য দিয়ে মিত্রদের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখা হবে। সামরিক শক্তি আমাদের শেষ আশ্রয়।
আমেরিকাকে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন জো বাইডেন। মঙ্গলবারও তিনি সেই প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি মনে করি, আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে—যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
বিশ্বকে বিভক্ত করে দেওয়া মহামারি ও জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশন চলছে নিউইয়র্কে। তবে সংকটগুলোতে একসঙ্গে কাজ করার প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সফলতা পরবর্তীদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
চীন-মার্কিন সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যেই বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি ঠাণ্ডা যুদ্ধ কিংবা বিভক্ত বিশ্ব চায় না। কিন্তু হামলার বিরুদ্ধে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
আফগানিস্তান থেকে সেনাপ্রত্যাহারের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সামরিক শক্তি অবশ্যই আমাদের শেষ আশ্রয়।
এদিকে ত্রিদেশীয় জোট অকাসের জেরে এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের তোপের মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি বাতিল করায় অস্ট্রেলিয়াকে ফ্রান্সের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জোটটি।
সাবমেরিন চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও পরিষ্কার ব্যাখ্যা চেয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে অক্ষয় বলে দাবি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর।
চীনকে মোকাবিলায় ভারত-প্রশান্ত অঞ্চলে গঠিত নিরাপত্তা জোট অকাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে করা চুক্তি বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার নতুন চুক্তি করায় এবার ম্যাক্রোঁ সরকারের কাছে অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নিজেদের জোটের সদস্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে এ ধরনের আচরণের ব্যাখ্যাও চেয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের ৭৬তম তম সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রিদের বৈঠকেও গুরুত্ব পেয়েছে অকাস ইস্যুটি।
ভাঙন ও দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে সহযোগিতামূলক আচরণের আহ্বান জানান তারা। একইদিন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান।
ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাবমেরিন বিক্রি চুক্তি করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও চটেছে প্যারিস। এ সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইয়াভেস লা দ্রিয়ান বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক। একতরফা আচরণ, বর্বরতা ও মিত্রদের অসম্মান করা এসব আগে হতো। কিন্তু এখনো অনেকে এ ধরনের আচরণ অব্যাহত রেখেছে। চীনকে মোকাবিলায় এ জোট গঠন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে অন্তত পক্ষে সবার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা উচিত।
Discussion about this post