অনলাইন ডেস্ক
ধরিত্রীকে বাঁচাতে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাসে জরুরি পদক্ষেপের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজের সুনামকে আরেকবার দৃঢ় করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। সোমবার যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্ল্যাসগোতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি আমাদের আসক্তি মানবতাকে খাদের কিনারে ঠেলে দিচ্ছে।’
সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে জাতিসংঘের এই মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের এটি থামাতে হবে অথবা এটি আমাদের থামিয়ে দেবে। এবং যথেষ্ট হয়েছে বলার এটাই সময়। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, ড্রিলিং এবং খনিতে যথেষ্ট খনন করে আমাদের পথ আরও গভীর করা হয়েছে। আমরা নিজেদের কবর খুঁড়ছি।’
পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি মানুষের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, ‘জীববৈচিত্র্যকে নৃশংস করার জন্য যথেষ্ট করা হয়েছে। কার্বন দিয়ে নিজেদের মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে। প্রকৃতির সাথে টয়লেটের মতো আচরণ করার জন্য যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে।’
মানবসভ্যতাকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, জলবায়ু কর্মকাণ্ডের সাম্প্রতিক ঘোষণা এমন ধারণা দিতে পারে যে, আমরা এই সঙ্কটকে ঘুরিয়ে দেওয়ার পথে আছি। কিন্তু এটি এক ধরনের বিভ্রম।
তিন দশকের আলোচনা সত্ত্বেও বিশ্ব এখন প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে কমপক্ষে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ এবং দিনদিন তা বাড়ছে। এমনকি যদি প্রত্যেক দেশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাদের বর্তমান প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকে, তারপরও চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ২ দশমিক ৭ ডিগ্রির বিপজ্জনক ধারায় থাকবে বলে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেক বছরের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা চরম এই সঙ্কট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি করলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব বেশি দেখা যায় না। এসব প্রতিশ্রুতি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের মাঝেই আটকে থাকে। এ বিষয়ে গুতেরেস বলেন, চলুন বিভ্রম দূর করি: এই কপ সম্মেলনের শেষে যদি প্রতিশ্রুতি পূরণ না হয়, তাহলে দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা এবং নীতিমালা পুনরায় সংশোধন করতে হবে। প্রত্যেক পাঁচ বছর পরপর নয়, প্রত্যেক বছর এটি করতে হবে।
গ্রিস হাউস নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে উন্নত বিশ্বের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের এই মহাসচিব। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা ও খরায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোতে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রধান এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের আহ্বান এবং আরও বেশি সাহায্যের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন।
সূত্র: অ্যাক্সিওস।
Discussion about this post