আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০২২ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি জি-৭ ভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা । যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন যে, আগামী বছর ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৮ শতাংশ যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৫ শতাংশ, ফ্রান্স ও ইতালির ৪.৪ শতাংশ এবং জার্মানি ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটবে। টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এইচএসবিসি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরাও একইভাবে ৪.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে ইতালির প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৩ শতাংশ হবে, যা জাপানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। জাপানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২.২ শতাংশ।
দ্রুততম সময়ে ব্রিটেনের ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের কর্মসূচি এরকম পূর্বাভাসের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে ২০২১ সালে শতকরা ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২০২০ সালে ব্রিটেনের জিডিপি ১০ শতাংশ কমেছে।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এটা খুব একটা ভালো খবর নয়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি থেকে জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া, এর ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, ব্যাপক আকারে সাপ্লাই-চেইনে বিশৃঙ্খলা, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আগের তুলনায় অনেক বেশি সুদের হার বেড়ে যাওয়া মোটেও কাম্য নয়।
গত মাসে ইওয়াই আইটেম ক্লাবের একটি প্রকাশনায় লেখক হাইওয়েল বল, পিটার আর্নল্ড ও মার্টিন বেক দেখিয়েছেন যে, প্রবৃদ্ধি ভাসমান থাকলে ‘মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, সাপ্লাই বাধাগ্রস্থ হয় এবং উচ্চসুদের হারের কারণে সবকিছুর পুনরুদ্ধার ধীর গতিতে হয়।
তবে তারা এটাও বলছেন যে, লকডাউনে পরিবারগুলোর ‘বড় ধরনের আর্থিক সঞ্চয়’ তাদেরকে টিকে থাকতে ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগ না করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে তাদের ধারণা হলো, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শতকরা ৬.৯ ভাগ প্রবৃদ্ধির দিকে এগোবে। কয়েক মাস আগেই এই ধারণা ছিল শতকরা ৭.৬ ভাগ।
‘হোয়াই দ্য রিকভারি রিমেইনস স্ট্রং- বাট ইজ বিং স্লোড বাই হেডওয়াইন্ডস’ শীর্ষক একটি বইতে লেখক গত জুলাই মাসে ধারণা করেন, ‘করোনায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে অর্থনীতি বেঁচে গেছে’।
তারা আরও যোগ করেন যে, ‘অর্থনীতি আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথগুলো ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের বাধা ও ঘাটতির কারণে চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ব্রিটেনে বেকারত্বের হার করোনা পূর্ববর্তী সময়ের প্রায় অর্ধেক। তবে চাকরির সুযোগ এবং চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক। ‘২০২০ সালের শুরুতে চাকরিতে নিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কিছুটা কম ছিল।
ভাসমান চাকরির বাজারগুলো এই সংকট থেকে বেঁচেছে। আর এই বিষয়টিই ভোক্তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সহযোগিতা করছে। তবে অন্যান্য সমস্যাগুলোও বেড়ে চলেছে।
প্যান্থিওন ভিস্টেন এই ধারণায় ভিন্নমত দেন। সামষ্টিক অর্থনীতি অনুযায়ী, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণের জন্য যুক্তরাজ্যের এই প্রবৃদ্ধি শতকরা ৪.২ ভাগে গিয়ে ঠেকবে।
তিনি বলেন, ‘বুস্টার প্রোগ্রাম কার্যকর হতে সময় নেবে। যুক্তরাজ্য (মহামারির শুরু থেকেই) দ্রুত এগিয়ে চলছে। তবে এখন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ‘আমি এটাকে ব্যতিক্রম কিছু বলে মনে করি না। ইউরোপ নিজে যা, সকল প্রতিকূলতা পেরিয়েই তা হয়ে উঠবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
Discussion about this post