আন্তর্জাতিক ডেস্ক
‘বাংলাদেশ থেকে আসা এই দু’জন অভিবাসী আগে কখনো নিউইয়র্কের সিটি হলে আসার সুযোগই পাননি। তারা প্রথম সেখানে গেলেন তাদেরই জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের কন্যার শপথগ্রহণ দেখার জন্য’।
নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মুসলমান কাউন্সিলওম্যান হিসেবে শপথ নেয়ার আনন্দ অনুভূতি এভাবেই বর্ণনা করেছেন শাহানা হানিফ।
এক টুইটারে তিনি আরও লেখেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ এবং আমার পরম সৌভাগ্য যে তখন আমার বাবা-মা পাশে ছিলেন; যেমনি করে পুরোটা জীবন তারা সমর্থন দিয়ে গেছেন’।
কেবল বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়, শাহানা হানিফের কথায় ফুটে উঠেছে তার আসল কাজটি করার কথা।
তিনি বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। তবে আমি যাদের জনপ্রতিনিধি, তারা নানা জায়গা থেকে এসে মিলিত হয়েছেন। আমি সবার কাউন্সিলওম্যান। তাই সবার জন্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবো। এখন আমি কাজ করার জন্য প্রস্তুত’।
কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের কারণে এবার নিউইয়র্কের সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের তেমন কোন আয়োজন ছিল না। প্রতি ঘণ্টায় একজন করে জনপ্রতিনিধি শপথ নেন।
সেক্ষেত্রে শাহানা হানিফ শপথ নেন স্থানীয় সময় ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে। একজন মুসলমান হিসেবে তিনিই প্রথম নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের কোন পদে পবিত্র কোরআন শরিফের উপর হাত রেখে শপথ নেন।
গত বছরের ২ নভেম্বর, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ডিসট্রিক্ট-৩৯ (ব্রুকলিন) থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সমাজকর্মী শাহানা হানিফ। তিনি মোট ভোটের ৮৯ শতাংশ পেয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির উইনকোফ পান মাত্র আট শতাংশ ভোট।
শপথ গ্রহণের সময় শাহানা হানিফের বাবা চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ, মা রেহানা হানিফ এবং তার ক্যাম্পেইন টিমের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সিটি হলে প্রবেশ করেন শাহানা হানিফ।
সেখানে স্পিকারের একজন প্রতিনিধি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শাহানা হানিফ যে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ নেন, তা তিনি বাসা থেকেই সঙ্গে করে নিয়ে যান। শপথের সময় তার মা রেহানা হানিফ পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে ধরে রাখেন।
শাহানা হানিফের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে হলেও, তাদের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য মায়ের মতো তিনিও একটি শাড়ি পড়ে উপস্থিত হয়েছিলেন শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে। আর পুরো বিষয়টি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে প্রবাসীদের।
তারা এখন গর্ব নিয়ে শাহানা হানিফের উদাহরণ দিচ্ছেন। বলছেন, ‘তাদের সন্তানেরা এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবে এই বিজয়ী তরুণীর কাছ থেকে’।
শাহানা হানিফ বলেন, ‘এখন আমাদেরকে কোভিড নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ গত দু’সপ্তাহ ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাই এ মুহূর্তে আমার মূল লক্ষ্য থাকবে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এরপর ধাপে ধাপে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো’।
মেয়ের সাফল্যে দারুণ খুশি শাহানা হানিফের বাবা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘আমার মেয়ে নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলওমেন হিসাবে শপথ নিয়েছেন। আমি এবং আমার পরিবার এতে খুবই আনন্দিত। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আমার মেয়েটা যেন তার উপর দেয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে করতে পারে’।
Discussion about this post