অনলাইন ডেস্ক
চলমান রুশ আগ্রাসন বাধাগ্রস্ত করতে ন্যাটো ইউক্রেনের আকাশসীমাকে ‘নো ফ্লাই জোন’ হিসেবে ঘোষণা করতে ন্যাটোকে অনুরোধ করেছিল কিয়েভ; কিন্তু ন্যাটো তাতে কর্ণপাত না করায় পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক জোটের কঠোর সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি।
শুক্রবার কিয়েভে নিজ কার্যালয় থেকে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘ন্যাটোর সব সদস্যরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শত্রুর পরিকল্পনা সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই সচেতন। তারা নিশ্চিত যে, রাশিয়া তার আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড জারি রাখবে।’
‘কিন্তু ন্যাটো ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনের আকাশকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকছে। ন্যাটোর সদস্যদের ধারণা, এই ঘোষণা দিলে রাশিয়াকে ন্যাটোর বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করার উস্কানি দেওয়া হবে।’
‘দুর্বল ও নিরপত্তাহীনতায় যারা ভোগে, তারা অনেকসময় নিজেদের স্বান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এক প্রকার সম্মোহনমূলক ধারণা তৈরি করে; ন্যাটোও তাই করছে। অথচ এই জোট আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) ন্যাটোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল একটি দুর্বল, বিভ্রান্ত বৈঠক। এটি ছিল এমন এক বৈঠক, যা বুঝিয়ে দিয়েছে— ন্যাটোর সব সদস্য ইউরোপের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় না।’
ন্যাটোকে তিরস্কার করে ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ থেকে ইউক্রেনে যত মানুষ মারা যাবে, তারা মরবে আপনাদের কারণে। আপনাদের দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতার কারণে…এবং মনে রাখবেন, যদি ইউক্রেনের পতন হয়, গোটা ইউরোপের পতন হতেও বেশিদিন বাকি নেই।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করে ইউক্রেন এবং এই ব্যাপারটিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের কয়েকটি শহর দখল করেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া প্রদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও রুশ বাহিনীর নিয়্ন্ত্রণে চলে গেছে। এছাড়া রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন সড়কে রুশ সেনাদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে ইউক্রেনের সেনা সদস্যদের।
সূত্র: বিবিসি
Discussion about this post