আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দলের শীর্ষ নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এর অর্থ হলো, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও আর থাকছেন না বরিস জনসন। নানামুখী চাপ নিয়ে দু’দিন আগেও বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন না। কিন্তু শেষপর্যন্ত পদটি তাঁকে ছাড়তেই হচ্ছে।
আগামী শরতে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন। নিজ দলের অধিকাংশ নেতাই তাঁর সঙ্গ ছেড়েছেন। সরকারের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে বিদায়ের বার্তা শোনানো ছাড়া বরিসের সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না।
কী কারণে এ নক্ষত্রের পতন? গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসির বিশ্নেষণে জনসনের পতনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে আরও কারণ থাকতে পারে। তবে এগুলো যে প্রধান প্রধান কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ক্রিস পিঞ্চার বিতর্ক : গত ২৯ জুন জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ও ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিঞ্চার লন্ডনের একটি ক্লাবে যান। তাঁর নিজের বক্তব্য, তিনি
একটু বেশিই পান করেছিলেন এবং নিজেকেই অপমান করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই ক্লাবে তিনি দুই ব্যক্তিকে যৌন হেনস্তা
করেছেন। এর আগেও এ ধরনের নানা অভিযোগ রয়েছে পিঞ্চারের বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রী জনসন এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতেন। তা সত্ত্বেও পিঞ্চারকে পদে রাখা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। গত সোমবার থেকে তাঁরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ
জাভিদ পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই পদত্যাগের
ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ দুই মন্ত্রীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনসন সরকার থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন কয়েক ডজন মন্ত্রী ও আমলা।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি : করোনা মহামারি চলাকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক পার্টি করেন জনসন। সারা ব্রিটেনের মানুষ যখন লকডাউনে নাভিশ্বাস জীবনযাপন করছেন, তখন বিধিনিষেধ অমান্য করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর পার্টি করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। নিজ দলের ভেতরেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন জনসন। বিরোধী লেবার পার্টির আইনপ্রণেতারা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে মুখর হন। এ জন্য জনসন একাধিকবার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তাতেও দলের ভেতরে-বাইরে ক্ষোভ চাপা থেকে যায়।
জীবনযাপনের ব্যয় : চলতি বছর যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ম্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এতে বেড়ে গেছে খাবার ও জ্বালানি তেলের মূল্য। এ সংকটের পেছনে ইউক্রেন যুদ্ধ পরোক্ষভাবে দায়ী থাকলেও জনসন সরকারকে দুষতে ছাড়ছেন না অনেকে। গত এপ্রিলে করও বাড়িয়ে দেন জনসন, যা তাঁর জনপ্রিয়তায় বড় আঘাত হানে।
ওয়েন পিটারসন বিতর্ক :২০২১ সালের অক্টোবরে হাউস অব কমন্স কমিটি তৎকালীন রক্ষণশীল এমপি ওয়েন পিটারসনকে বরখাস্ত করে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু জনসনের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীলরা তাঁর বরখাস্ত ঠেকানোর জন্য ভোট দেন। পরে পিটারসন পদত্যাগ করলেও ক্ষতি হয় জনসনের ভাবমূর্তির।
পরিকল্পনার ঘাটতি : ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে উত্থান হয়েছিল জনসনের। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, ব্রেক্সিট-উত্তর তিনি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, জনসনের ‘একাগ্রতা, দক্ষতা এবং দূরদর্শিতার’ ঘাটতি রয়েছে।
Discussion about this post