আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাঁওতাল নারী দ্রৌপদী মুর্মু। যদিও ভোটের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা এখনও হয়নি। কিন্তু নির্বাচিত হতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভোট তিনি পেয়ে গেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে জয়ের জন্য দ্রৌপদীর প্রয়োজন ছিল ৫,৪০,৯৯৬ ভোট। তৃতীয় রাউন্ড ভোট গণনার পরেই সেই অঙ্ক ছাড়িয়ে তিনি পেয়ে যান ৫,৭৭,৭৭৭ ভোট। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হার পান ২,৬১,০৬২ ভোট।
বিজেপির পছন্দের প্রার্থী দ্রৌপদীই প্রথম কোনও আদিবাসী নারী যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন। ভারত পাচ্ছে তাদের দ্বিতীয় নারী রাষ্ট্রপতি। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ জুলাই। এর পরেই দ্রৌপদী ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন।
ভারতে রাষ্ট্রপতি পদটি অনেকটা অলঙ্কারিক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ হলেও দেশ পরিচালনায় রাষ্ট্রপতির তেমন কোনও ভূমিকা নেই। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) সদস্য, দেশটির সবগুলো রাজ্যের বিধানসভার সদস্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর প্রতিনিধিদের ভোটে ভারতে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরইমধ্যে দ্রৌপদী মুর্মুরের সঙ্গে দেখা করে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ভারতে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ইতিহাস রচিত হয়েছে। পূর্ব ভারতের আদিবাসী সমাজের এক মেয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। এই জয়ের জন্য তাকে অনেক অভিনন্দন। শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুজির জীবন, তার সংগ্রাম এবং সাফল্য প্রত্যেক ভারতীয়র জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি দেশের নাগরিকদের জন্য, বিশেষ করে গরিব, প্রান্তিক এবং নিম্নবিত্তদের কাছে আশার আলো।
দ্রৌপদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের মনোনিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহাও নতুন রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ওদিকে, দ্রৌপদীর জয় নিশ্চিত হতেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। টুইটে তিনি লিখেছেন, সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় আপনার দিকেই দেশ তাকিয়ে আছে।
আনন্দবাজার জানায়, ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকবেন দ্রৌপদী। কোনও দেশের সাংবিধানিক প্রধানের বাসভবন হিসাবে এটিই বিশ্বের বৃহত্তম। এই ঐতিহাসিক ভবনে চারটি তলা মিলিয়ে ৩৪০টি ঘর রয়েছে। আড়াই কিলোমিটার করিডর এবং ১৯০ একর জমির উপরে রয়েছে বাগান। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির থাকার জন্য হায়দরাবাদে রয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি নিলয়ম’ নামে একটি বিলাসবহুল ভবন। একই রকম ভাবে ছুটি কাটানোর জন্য সিমলায় রয়েছে রিট্রিট বিল্ডিং। রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের পাঁচ জন কর্মী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রায় দু’শো জন কর্মী রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। রাষ্ট্রপতি বেতন পান মাসিক ৫ লাখ টাকা। বেতন ছাড়াও রাষ্ট্রপতিরা বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পান সারা জীবন। রাষ্ট্রপতি ভবনে কর্মীদের বেতন থেকে অতিথি আপ্যায়ন এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য বছরে বরাদ্দ থাকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ভারতের রাষ্ট্রপতি ব্যবহারের জন্য পান কালো রঙের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি।
Discussion about this post