আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বভারতীতে গুলি চালানোর নির্দেশের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী শুধু মুখে গুলি চালানোর হুমকি দিয়ে থেমে থাকেননি। পেটোয়া গুণ্ডাদের ডেকে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
দিনভর অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, ধস্তাধস্তিতে দক্ষযজ্ঞ অবস্থা বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং কর্মসচিব অশোক মাহাতোসহ আধিকারিকদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘেরাও করে উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
উপাচার্যর অভিযোগ, তাকে হেনস্তা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। তিনি দু:খপ্রকাশও করেছেন। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমিতে তাঁকে বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করা হয়েছে। এর পেছনে কিছু শিক্ষকের ইন্ধন আছে।’
গত বুধবার বিক্ষোভ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী রাজীব ঝাঁ উদ্ধত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। রাজীব দাবি করেন, ‘উপাচার্যের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। উপাচার্যকে ডাক্তার দেখতে আসতে চাইলে ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তারকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।’
অন্যদিকে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দাবি না মিটলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্বভারতী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ঘেরাও চলবে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যারাই যুক্ত হবে তাদের হয় রাস্টিকেট করা হচ্ছে, না হয় সাসপেন্ড করা হচ্ছে। রেজাল্ট আটকানো হচ্ছে। পিএইচডি আটকানো হচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে অপকর্ম করে চলেছেন উপাচার্য। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশ্রমে এমন উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো উপায়ন্তর নেই।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থ জড়িত একাধিক ইস্যুতে বুধবার বিকেলে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী উপাচার্যসহ অন্যদের ঘেরাও করেন। উল্লেখ্য, স্নাতক প্রথম সেমিস্টার এবং স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের ফল প্রকাশে বিলম্ব করায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পঠন-পাঠন ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। এ সপ্তাহেই এ ব্যাপারের একদল শিক্ষার্থী বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেয়। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বিশ্বভারতী ছাত্র সোমনাথ সাউয়ের অর্থনীতিতে এমএ এডমিশন আটকে রাখা হয়েছে। আটকে দেওয়া হচ্ছে ছাত্রী মীণাক্ষী ভট্টাচার্যের গবেষণা।
তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের বিশ্বভারতী ইউনিটের সভাপতি মীণাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার ছয় বছরের রিসার্চ নষ্ট করার জন্য উনি উঠেপড়ে লেগেছেন। উচ্চশিক্ষায় নারীদের জন্য কিছু সুবিধা পেতে আবেদন করলে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এরকম ধরণের মানসিকতার উপাচার্য। হয় উনাকে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। নাহলে ঘৃণ্য চক্রান্তকারী উপাচার্য আমরা চাই না।’
বিশ্বভারতী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হলেই, বিভিন্ন আক্রমণ চালাচ্ছেন উপাচার্য।
Discussion about this post