মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্রকৌশল পৃথিবীর বৃহত্তম বা বিস্তৃত ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্র।মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কে বলা হয মাদার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং।ডিপ্লোমা-ইন-মেকানিক্যাল-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (বাকাশিবো) অধীনে পরিচালিত ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোর অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কর্মক্ষেত্রে এই কোর্সটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।
শিল্পায়নের এই যুগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে ২০২১ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ৪ খেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসাব করলে দেখা যায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি যেটি আমরা প্রকাশিত চাকুরীর বিভিন্ন সার্কুলার গুলো লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই ।
কর্মক্ষেত্র:
একমাত্র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংগণের সকল ক্ষেত্রে পেশার সুযোগ রয়েছে। সেগুলো হলো : পাওয়ার প্লান্ট, পিডিবি,সিমেন্ট ইন্ড্রাস্টি,সার কারখানা, অটোমোবাইল,পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো, ওয়াসা, গ্যাসফিল্ড,জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য (লুব অয়েল,পেট্রোল,ডিজেল),রেলওয়ে,বিমান,নবায়নযোগ্য শক্তি, মেকানিক্যাল পন্য সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ , সরকারী ও বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সমূহ, সিটি কর্পোরেশন,পৌরসভা, ভোকেশনাল স্কুল, টিটিসি, টিএসসি, সৌর বিদ্যুৎ ,পরমানু গবেষনা কেন্দ্র,শিল্প-কারখানা, গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি ইত্যাদি সহ আরো অনেক সরকারী/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরীর সুবিধা রয়েছে।
একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব:
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছোট পার্টস থেকে শুরু করে অনেক বড় মেশিন,যন্ত্রপাতি বা যানবাহন ডিজাইন ও সেই পণ্য উৱপাদনের পুরো পদ্ধতিকে অধিক কর্মক্ষম করার জন্য কাজ করে থাকেন।তারা একটি পণ্য তৈরির সকল পর্যায়ে(গবেষণা,নকশা,উতপাদন,ইনস্টলেশন এবং চূড়ান্ত চালু) কাজ করতে পারেন।তাদের কাজগুলো সাধারণত নিম্নরূপ:
-আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী,নিরাপদ ও টেকসই সরঞ্জাম ডিজাইন ও তৈরি করা।
-অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে আলোচনা করে কোন প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় দিকগুলো বাছাই করা।
-তাত্বিক ডিজাইনের কার্যকারিতা জানার জন্য সিমুলেশন করা ও সেই অনুযায়ী ডিজাইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা।
-পণ্য সম্পর্কিত সম্যসা সমাধানের জন্য উতপাদন বিভাগের লোকজন,সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের সাথে আলোচনা করা।
-প্রকৌশল ও অন্যান্য খাতে পেশাদারদের সাথে কাজ করা।
-যন্ত্রপাতি মেইনটেনেস্নের দায়িত্ব পালন করা।
ভর্তির যোগ্যতা :
মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে হলে উক্ত শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে এস,এস,সি পাশ হতে হবে। প্রাখীর্কে সর্বোচ্চ ৮ বছর আগে এস.এস.সি/দাখিল/ভোকেশনাল সমমানের পরীক্ষায় যে কোন বিভাগ হতে নূন্যতম জি.পি.এ ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
কোর্স স্ট্রাকচার :
-তিন বছর ৬ মাস একাডেমিক কোর্স (৬ মাস মেয়াদী ৮টি সেমিস্টার)।
-বাকী ৬ মাস একাডেমিক কোর্স (ট্রেড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে)।
অর্থাৎ ৪ বছরে মোট ৮টি সেমিস্টার পড়ানো হয়। টোটাল ক্রেডিট ১০১।
টোটাল সাবজেক্ট=৫০টি
টোটাল মার্ক=৭৮৫০
কোর্স কারিকুলাম:
ডিপ্রোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের শিক্ষার্থীরা দৈনিন্দিন জীবনে মেকানিক্যাল প্রভাব,বিভিন্ন প্রকারমেশিন,মেশিন টুলস, উন্নত প্রযুক্তির ওয়েল্ডিং ও এর ব্যবহার, বিভিন্ন প্রকার মেজারিং ইন্সট্রুমেন্ট,মেশিন ডিজাইন, সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিউমেরিক এবং নানামূখী আবিস্কার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পায়। তাত্বিক ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষাথীর্দের নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস গ্রহণ করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মমূখী জ্ঞানলাভ ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষন দেয়া হয় যাতে বর্তমানে পেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে তা নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে পারে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ:-
ডিপ্রোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি সম্পন্ন করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য রয়েছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি(ডুয়েট)। এছাড়াও রয়েছে ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের(আইইবি)এবং বেসরকারী ইউনিভারসিটি থেকে মাত্র ৩ ও ৪ বৎসর মেয়াদী বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ।
Discussion about this post