মোঃ শাহআলম
কারিগরি শিক্ষার সমপ্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় । যার ফলশ্রুতিতে সরকারের আন্তরিকতায় গত অর্ধ শতকে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশাসনের বহু শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে। এ অধিদপ্তর মূল ৪টি কাজ সম্পাদনা করে আসছে। কাজগুলো হলো : মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা, একাডেমিক কার্যক্রমের তদারকীকরণ এবং কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা।
সরকারি তথ্য মতে, এই অধিদপ্তরাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ১১৮টি। প্রথম ও দ্বিতীয় শিফটে মিলে প্রতি বছর প্রায় ৯৯,১০৮ জন শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনটি স্তরে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পর্যায়গুলো হলো : সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি পর্যায়। সার্টিফিকেট পর্যায়ে রয়েছে ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ। ১টি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। ডিপ্লোমা পর্যায় ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ডিগ্রি পর্যায় টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ১টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ৩টি।
Human resource development is at the core of Bangladesh’s development efforts and access to quality education is critical to poverty reduction and economic development. The Government is committed to undertaking structural reforms that are expected to bring significant improvements in the education sector. Bangladesh’s commitment to education has been clearly stated in its Constitution and development plans with education being given the highest priority in the public sector investments. Education sector allocations are currently about 2.3 percent of GDP and 14 percent of total government expenditure. Maintaining this commitment to the education sector is imperative in order to achieve Education for All (EFA) and the Millennium Development Goals (MDGs)
আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আগে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী বলতে স্বনির্ভর অর্থনীতি, যার অর্থ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য আভ্যন্তরীণ বিষয়ে উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক নিজস্ব প্রযুক্তি সম্বলিত উন্নয়ন আবশ্যক। আর এ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কারিগরি শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় নিজেকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হলে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নাই। বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দক্ষ জনশক্তি তৈরির দায়িত্ব পালন করে আসছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরিচালিত শিক্ষাক্রমগুলোর মধ্যে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-জুট টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-লেদার টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা-ইন-ফরেস্ট্রি টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-মেরিন টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-হেল্থ টেকনোলজি, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও এসএসসি (ভোকেশনাল) অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা করে আসছে। এসব শিক্ষাক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষাক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রত্যেক বছরই বেড়ে চলেছে। মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব সু-সম্পন্ন করা হয়। সকল বাধা অতিক্রম করে বিশ্বের উন্নত দেশকে অনুসরণ করে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে মানুষকে আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক বিপ্লব সৃষ্টিকারী দেশ জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ বহুদেশ আছে যাদেরকে দেখে আমরা জানতে পারি কারিগরি শিক্ষার সুফল সম্পর্কে। অধিক জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করার একটাই বড় মাধ্যম কারিগরি শিক্ষা। আর বড় কথা হলো কারিগরিতে পড়ে কোনো শিক্ষার্থীই বেকার থাকে না।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কারিগরি শিক্ষায় কেন জনগণকে শিক্ষিত করা জরুরি। এই শিক্ষা দেশের জন্যে যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী নিজের জন্যেও। কারিগরি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকারও সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। মহিলা অধিদপ্তরও নারীদের কারিগরি শিক্ষার্জনের উপর জোর দিয়েছেন। মহিলা অধিদপ্তরের মতে, পৃথিবীর যে দেশে যতো বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে সেই দেশ ততো বেশি উন্নত। মানব সম্পদ যদি ব্যবহারযোগ্য না হয় তবে তার কোন মূল্য নেই। কোনো রাষ্ট্রের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ বা খনিজ সম্পদ থাকলেই, সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত হয় না, যদি না ঐ রাষ্ট্র উপযুক্ত পরিকল্পনায় ঐ সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। একইভাবে রাষ্ট্রে অসংখ্য জনগোষ্ঠী থাকলেই রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না। ঐ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারলে সেই জনগোষ্ঠী রাষ্টের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
যে শিক্ষা শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে ব্যবহার করে কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত হতে পারে তাই কারিগরি শিক্ষা। আবার উপযুক্ত বৃত্তি বা পেশা নির্বাচনের জন্য দক্ষতামূলক যে শিক্ষা, তাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে বা ব্যক্তিকে পেশা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই অর্জিত শিক্ষার সাথে মিল রেখে স্বাধীনভাবে পেশা খুঁজে নিতে পারে। সাধারণ শিক্ষা এর বিপরীত, অর্থাৎ অর্জিত শিক্ষার সাথে কর্মের মিল থাকে না। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত ঝরে পড়া শিক্ষার্থী অথবা কোনো কারণে শিক্ষাবঞ্চিত ব্যক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে সফলতা এনে দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য্য, পরিশ্রম ও অনুশীলন। দক্ষতাই উন্নয়ন-এ কথাটি কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ শিক্ষার প্রধান সাফল্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোনো কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছোট ছোট শিল্পের প্রসার ঘটানো, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মীর হাতে পরিণত করা।
চাঁদপুরে যেভাবে বেসরকারিভাবে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে মানুষজন কাজ করার কথা, সেভাবে কাজ হচ্ছে না। আমি সিইআই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের আলোকিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ২০১০ সালে আমার প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পাঠদানের অনুমোদন পায়। তখন আমাদের শিক্ষার্থী ছিলো মাত্র ১২ জন। স্বল্প শিক্ষার্থী আর উদ্দীপনা নিয়েই শুরু হলো আমাদের যাত্রা। এ বছর ৫ম বর্ষে পা দিলো সেই প্রতিষ্ঠানটি। এটিই ছিলো জেলার প্রথম বেসরকারি পলিটেকিনিক ইনস্টিটিউট। এখন সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন।
এ সময়ে এসে মানুষ কিছুটা বুঝতে শেখেছে পলিটেকনিকে পড়লে সহজে চাকুরি পাওয়া যাবে। আর এই শিক্ষা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যথেষ্ট মর্যাদা পায় এবং এ শিক্ষাকে সাধুবাদ জানায়। সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ২য় শ্রেণির মর্যাদায় অনেক আগেই অধিষ্ঠিত করেছে। আমরা চাঁদপুরবাসীকে পলিটেকনিকে পড়ার গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছি।
বর্তমানে আমাদের এখানে ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা-ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমরা ১৬টি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। কারিগরি শিক্ষার প্রতি চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। তারা আগ্রহ নিয়ে পড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সবটুকু উজাড় করে দিতে। আমরা পড়াশোনার পাশাপাশিসহ পাঠক্রমিক কার্যক্রমে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হোক। প্রথমে পলিটেকনিক সম্পর্কে মানুষজনের মনে সঠিক ধারণা না থাকলেও এখন মানুষের মনে বিভ্রান্তি কেটে সঠিক ধারণা জন্মেছে। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। মানুষজন বর্তমানে পলিটেকনিক শিক্ষার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমাদের শিক্ষকরা বেশ আন্তরিক। তারা পরিশ্রম করছে। এমনিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা এই বিদ্যানিকেতনটি আরো সমৃদ্ধশালী করতে পারবো। একদিন আসবে যেদিন এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরের ‘মডেল’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত পাবে।
লেখক : অধ্যক্ষ, সিইআই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৮১৮৭০৪০২।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বেন
বর্তমান বিশ্বে দক্ষ তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে সবার আগে প্রয়োজন হাতে-কলমে বা বাস্তবমুখী শিক্ষার। আর হাতে-কলমে বা বাস্তবমূখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের শিক্ষাকেই কারিগরি শিক্ষা বলে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব জোরদার করা হচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে পড়তে হবে কারিগরি শিক্ষা ইন্সটিটিউটগুলোতে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসব প্রতিষ্ঠান চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সরকারি কারিগরি শিক্ষা ইন্সটিটিউট রয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক জেলাতেই বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা ইন্সটিটিউট রয়েছে।
এসএসসি পাসের পর এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে বিস্তারিত…
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে মানুষের সমস্যাবলী সমাধান এবং জীবনকে সহজ করার জন্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োগ। প্রকৌশলীগণ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করুনবার জন্য তাঁদের কল্পনাশক্তি, বিচারক্ষমতা এবং যুক্তিপ্রয়োগক্ষমতা ব্যবহার করেন। এর ফলাফল হচ্ছে উন্নততর নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু ও নিত্যব্যবহার্য কর্মপদ্ধতির আবির্ভাব যেটি প্রতিদিনের জীবনকে সহজ করে দেয়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে এইচএসসি (HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পর যে কেবল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হলেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্ভব।
তুলনামূলক কম সময়ে কোর্স সমাপ্তি আর কোর্স শেষে ন্যূনতম চাকরির নিশ্চয়তা থাকে এখানে। এ দুয়ে মিলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলের চাহিদা বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে বেশি। চার বছর মেয়াদি এই কোর্সে ভর্তি হতে হয় এসএসসি বা মাধ্যমিকের পর। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বিভিন্ন জেলা শহরে অবস্থিত সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক, গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য আবেদন করতে চাইলে গণিত বা উচ্চতর গণিত বিষয়ে জিপিএ ৩.০০সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এছাড়া বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য গণিতে জিপিএ ২.০০ পেলেই চলবে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বেন?
বিশ্বের যে সব দেশ কারিগরি শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সেই সব দেশ তত বেশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের কর্মধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের সকল শ্রেণির শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে কারিগরি শিক্ষা।
যে প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়: বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব ও কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত শিক্ষাক্রমগুলো হলো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা ইন মেরিন টেকনোলজি, ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও এসএসসি (ভোকেশনাল)। বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদি শিক্ষাক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০টি, যেগুলো পুরোপুরি সরকারি। নতুন রাজস্বভুক্ত ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৫টি, মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪টি, প্রকল্পভুক্ত ১৮টি ও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৩টি। এ ছাড়া ৬৪টি ‘টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ’ এবং ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। বেসরকারি পলিটেকনিকের সংখ্যা ৩৮৭টি।
যে বিষয়ে পড়তে পারেন:
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অধীনে সেমিস্টার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়ানো হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্সট্রমেন্টশন অ্যান্ড প্রসেস কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। এ বিষয়গুলোতে পড়ালেখা করে বসে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যাদি:
ভর্তি সংক্রান্ত সব তথ্যের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট www.bteb.gov.bd অথবা www.techedu.gov.bd ভিজিট করতে পারেন পলিটেকনিকে ভর্তি হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা।
ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম: ৫০ নম্বরের (বিজ্ঞান ১৫, গণিত ১৫, বাংলা+ইংরেজি ১৫, সাধারণ জ্ঞান ৫) এমসিকিউ সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুধু উত্তরপত্রে সঠিক উত্তরটি ভরাট করতে হবে। সময় থাকবে ৫০ মিনিট। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর করে। মোট ১০০ নম্বর নিয়ে মেধাতালিকা প্রণয়ন করবে। তার মধ্যে বাকি ৫০ নম্বর হচ্ছে আপনার এসএসসি জিপিএ অর্থাৎ প্রাপ্ত জিপিএকে ১০ দ্বারা গুণ করে তার সঙ্গে যোগ করা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেবে। এসএসসিতে সাধারণ গণিত, বিজ্ঞান, উচ্চতর গনিত এ বিষয়গুলোয় ভালো গ্রেড তুলতে পারলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে সহায়ক হবে। আর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় বেশি চান্স পায়।
পড়াশোনার খরচ: সরকারি পলিটেকনিকে চার বছরে আপনার পড়াশোনার খরচ পড়বে কমবেশি ৫০ হাজার টাকা। বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ একটু বেশি। সেখানে প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ভেদে খরচ পড়বে আলাদা আলাদা। সে ক্ষেত্রে ৯০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। এ ছাড়া গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধার জন্য বিশ্বব্যাংক ও কানাডার যৌথ উদ্যোগে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান জনপ্রতি মাসিক ৮০০ টাকা শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে থাকে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ: যারা উচ্চতর ডিগ্রির প্রতি আগ্রহী তারা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ভর্তি হতে পারেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), অ্যাসোসিয়েট মেম্বার অব দ্য ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সসহ (এএমআইই) এবং দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া রয়েছে বিদেশেও পড়াশোনার সুযোগ। চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইভিনিং শিফটে বিএসসি করা যায়। চাকরির পাশাপাশি নিজের উপার্জন দিয়েই বিএসসি করা সম্ভব। বিএসসি পাস করে আরও ভালো চাকরি পেতেও বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা তাদের আছে। ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞতা থাকায় বিএসসির কোর্সগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করতে সুবিধা হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের।
মাত্র ক’দিন আগে এসএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পালা। কিন্তু কোথায়, কোন জায়গায় ভর্তি হবে এই নিয়ে আছে অনেকের মধ্যে দোটানা। তাদের জন্য কারিগরি শিক্ষাই একটি উত্তম পন্থা। কিছুদিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে ভর্তিযুদ্ধ। ভর্তির বিষয়ে নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। তা না হলে এর খেসারত দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পৃথিবীর সব দেশেই কারিগরি শিক্ষার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়। একটু সময় নিয়ে হলেও আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দেশে রয়েছে কারিগরি শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠান। এসএসসির পর পরই এসব কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে।
বাংলাদেশে প্রায় দু’শতাধিক সরকারি-বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট রয়েছে। এদের মধ্যে সরকারি ৪১টি। ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট ৯০টি, গ্লাস ও সিরামিক ইন্সটিটিউট ১টি, যা ঢাকায় অবস্থিত; টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট ২৪টি এবং লেদার টেকনোলজি ১টি সার্ভে ইন্সটিটিউট ২টি। পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ছাড়াও ভর্তির সুযোগ রয়েছে প্যারামেডিক্যাল ইন্সটিটিউট, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, সরকারি সঙ্গীত কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে। দেশে ৪টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজ রয়েছে। সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ রয়েছে ৩২টি আর সরকারি সঙ্গীত কলেজ ৪টি। এসব কোর্স সমাপ্ত করে নিজে নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিতে পারবে অথবা খুব সহজে পাবে একটি চাকরি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তো রয়েছেই। যারা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করবে তাদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট)। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সংরক্ষিত। অন্যদেরও দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
যেসব বিষয়ে পড়া যেতে পারে
ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি
৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি কোর্স শুধু চট্টগ্রামের বন মহাবিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। এখানে আসন সংখ্যা ৫০। ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ বন বিভাগের শূন্যপদে ফরেস্টার/বিট অফিসার হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
জুট টেকনোলজি
দেশে পাট গবেষণার ওপর ডিপ্লোমা প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। এখানে পাট গবেষণার ওপর রয়েছে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করে দেশে বর্তমানে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। কিন্তু সে তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে না দক্ষ জুট ইঞ্জিনিয়ার। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর সর্বোচ্চ জিপিএর ভিত্তিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়। ডিপ্লোমা ইন জুট টেকনোলজি কোর্স সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাকরির সুযোগ আছে। এছাড়া ভালো বেতনে দেশের যেকোনো জুট মিলে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ কোর্সের বেশ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে রয়েছে একটি ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট।
ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস
তিন বছর মেয়াদি এই কোর্স বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯টি। যেগুলো ছড়িয়ে আছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব বিষয় পড়ানো হয় সেগুলো হলো: ডেন্টাল, পেসেন্ট কেয়ার, ফিজিওথেরাপি, ফার্মা, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, ইন্টিগ্রেটেড ও ল্যাবরেটরি টেকনোলজি। ভর্তি ও যোগ্যতা এসএসসিতে সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে গ্রেড পয়েন্ট ২সহ (অথবা ৪০ শতাংশ নম্বর) কমপক্ষে জিপিএ-২ (অথবা দ্বিতীয় বিভাগ)। উল্লেখ্য, এখানে যেকোনো বর্ষে পাস করা শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে।
কারিগরি বোর্ডের দু’বছর মেয়াদী এইচএসসি
এইচএসসি-ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রি-বিবিএ এইচএসসি সমমানের ২ বছর মেয়াদী একটি কোর্স এইচএসসি-ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (প্রি-বিবিএ)। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের একমাত্র কোর্স হওয়ায় এর প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার মতো দেশে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) কলেজ রয়েছে। তাছাড়া একই মানের আরো আছে এইচএসসি বিজনেস, ভোকেশনাল, ডিপ্লোমা-ইন কমার্স।
ভর্তি তথ্য
এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পরপরই ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে চাইলে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। ভর্তিসংক্রান্ত সকল তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা যাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এই ওয়েবসাইট- www.bteb.govt.bd
শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা।
মুহাম্মদ জিয়াউল হক
কিছুদিন পূর্বে সারাদেশে শেষ হয়েছে এস.এস.সি. ও দাখিল পরীক্ষা। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এস.এস.সি. ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে । আটটি সাধারণ বোর্ডে এস.এস.সি. তে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ০৭ লাখ ০২ হাজার ২৯৯ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ০৭ লাখ ২৩ হাজার ৬০১জন। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ০২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০১ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এস.এস.সি. তে (ভোকেশনাল) ০১ লাখ ০৪ হাজার ২১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
এই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী সঠিক নির্দেশনার অভাবে ভুল পথে পা ফেলে নিজের সময় শ্রম, মেধা ও ক্যারিয়ার নষ্ট করে ফেলে। পরীক্ষা শেষে অনেকেই কী পড়বেন এ নিয়ে মারাত্মক সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন । আমাদের দেশের বাস্তবতায় লাখ লাখ অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি পাশধারী ছেলে মেয়ে ভাল একটি ক্যারিয়ার তৈরী করতে সক্ষম হন না । অন্য দিকে এস.এস.সি. এর পর বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪ বছরের ডিপ্লোমা শেষে প্রায়ই নিশ্চিতভাবে সম্মানজনক পেশায় স্থায়ীভাবে ক্যারিয়ার গঠন করা যায় । যেখানে সাধারণ শিক্ষায় ইন্টারমিডিয়েট, অনার্স, মাস্টার্স শেষ করতে প্রায় ৮-১০ বছর লেগে যায় সেখানে একজন ডিপ্লোমাধারীর চাকরীর বয়স হয়ে যায় ৪/৫ বছর। কাজেই চাইলেই যে কেউ এস.এস. সি. এর পর পছন্দ মত কারিগরি বিষয়ে ডিপ্লোমা করে হতে পারেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, নিজের ক্যারিয়ার সাজাতে পারেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায়।
দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রত্যেক বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০টি সরকারি ও ৪৩৯টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৩৫টিরও বেশি বিষয়ে প্রায় ৭২ হাজার ৯২০টি আসনে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মেয়েদের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় রয়েছে চারটি আলাদা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
এছাড়া সারাদেশে আরো ১৩টি কৃষি ডিপ্লোমা, ৩টি টেক্সটাইল, ৩৯টি হেল্থ টেকনোলজি, ১টি গ্রাফিক্স আর্টস ও ১টি গ্যাস সিরামিকস ইনস্টিটিউট রয়েছে। এস.এস.সি. পাস ও তার সমমানের (দাখিল ও ভোকেশনাল) শিক্ষার্থীরা চার বছর মেয়াদী এই কোর্সে ভর্তি হতে পারে। তবে বিষয় বণ্টন হয় ভর্তি পরীক্ষা ও এস.এস.সি. তে প্রাপ্ত জিপিএ থেকে মেধাক্রমে।
এক্ষেত্রে এস.এস.সি. ও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীকে অবশ্যই এস.এস.সি. তে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। যে সকল শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছে তাদের সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত এ ন্যূনতম জিপিএ ৩ থাকতে হবে। অন্যান্য বিভাগ থেকে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিজ্ঞান ও সাধারণ গণিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা দুই শিফটে ভর্তি হতে পারে। প্রথম বা মর্নিং শিফট ও দ্বিতীয় বা ডে শিফট।
যে সকল শিক্ষার্থী চলতি বছর পাস করেছে অথবা দুই বছর পূর্বে পাস করেছে তারা প্রথম শিফটে এবং যে সকল শিক্ষার্থীর দুই বছরের বেশি গ্যাপ রয়েছে তারা দ্বিতীয় শিফটে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৫০ নম্বর লিখিত ও ৫০ নম্বর এস.এস.সি. এর রেজাল্টের উপর। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে ১৫ নম্বর, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে ১৫, গণিতে ১৫, সাধারণ জ্ঞান এ ৫ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা বেছে নিতে পারে তার স্বপ্নের ক্যারিয়ার। ভর্তি হতে পারে তার পছন্দের বিষয়ে। অটোমোবাইল টেকনোলজি, আর্কিটেকচার টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল টেকনোলজি, সিভিল টেকনোলজি, সিভিল (উড) স্পেশালাইজেশন, ফুড টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি, পাওয়ার টেকনোলজি, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনার টেকনোলজি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সার্ভেইং, গ্যাস টেকনোলজি, অফসেট প্রিন্টিং, ডাটা টেলিকমিউনিকেশন এন্ড নেটওয়ারর্কিং টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি, ইনভায়রনমেন্ট টেকনোলজি, ইন্সট্রুমেনশন এন্ড প্রোসেস কন্ট্রোল টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি, টেক্সটাইল টেকনোলজি, আর্কিটেকচার এন্ড ইনটেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজি, গার্মেন্টস ডিজাইন এন্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি, গ্রাফিক্স ডিজাইন এন্ড অটোক্যাড টেকনোলজি, অটো ফোল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো টেকনোলজি, সিলিকন প্লান টেকনোলজি, এলসিডি মনিটর মেকিং টেকনোলজি, লেদ মেশিন অপারেটর প্রভৃতি আরো অনেক বিষয়ের মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীরা বেছে নিতে পারে তার পছন্দের বিষয়টি।
শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পৃথিবীর সব দেশেই কারিগরি শিক্ষার উপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়। দেরিতে হলেও আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশে। ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। দেশে ২৩টি আন্তর্জাতিক মানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় একটি করে নতুন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন আরোও এক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও চাকরির বাজারে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় শুধু কর্মনির্ভর শিক্ষার অভাবে। অনেক সময় বেকারত্বের অভিশাপও বরণ করতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা যেভাবে বাড়ছে একইভাবে বাড়ছে উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অসংখ্য সুযোগ। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে দেশে বা দেশের বাহিরে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের এ পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষা। আর কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে সবচেয়ে যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটেছে কারিগরি শিক্ষায়।
বর্তমান বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এদের রয়েছে বিশাল চাকরির বাজার। তাই অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এখন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করা ও তার ক্যারিয়ার গড়া। বিস্তারিত জানতে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এ বছর যে সকল শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিবে তাদের প্রতি রইল শুভ কামনা।
Discussion about this post