রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ রাজশাহীতে অবস্থিত একটি প্রাচীন সরকারি বহুমুখী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করে থাকে।
ইতিহাস:
১৯৬৩ সালে তৎকালীন সরকারের আদেশে এই ইন্সটিটিউটের কাজ শুরু হয়। তখন ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল এই দুটি প্রযুক্তিতে শিক্ষা দেওয়া হত। পরবর্তীকালে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে সিভিল, পাওয়ার, ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার প্রযুক্তি চালু করা হয়। বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত ক্রমবিকাশ ও উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে মেকাট্রনিক্স ও ইলেকট্রোমেডিক্যাল প্রযুক্তিসহ এখানে মোট ৮টি বিভাগ রয়েছে।
অবকাঠামো:
বাংলদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর এবং ৭টি মেট্রোপলিটন সিটির মধ্যে অন্যতম হল রাজশাহী মহানগরী। এক সময় এই নগরী উন্নতমানের সিল্কের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল বলে একে সিল্ক সিটি নামে অভিহিত করা হয়। সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ যুগোপযোগী অধ্যয়ন ব্যবস্থাপনা এবং এর অনুকুল পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের এই শহরটি শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত। এই মেট্রোপলিটন সিটির জনসংখ্যা আনুমানিক ৮ লক্ষ ৫৩ হাজার এবং মোট জায়গা ৯৬.৬৯ বর্গ কিলোমিটার (৩৭.৩৩ বর্গমাইল)। শহরটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বড় নদী পদ্মার উত্তর তীর সংলগ্ন অবস্থিত। রাজশাহীর মেট্রোপলিটন শহরে ৪টি থানা, ৩৫টি ওয়ার্ড এবং ১৩৫টি মহল্লা রয়েছে। রাজশাহী শহরের পূর্ব নাম ছিল রামপুর বোয়ালিয়া। ১৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রখ্যাত আউলিয়া হযরত মাহ মখদুম (রহঃ) এর আগমনসহ ইসলাম ধর্ম প্রচারের কারণে এই জায়গাটি গুরুত্ব লাভ করে। ১৮২৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নাটোর থেকে রামপুর বোয়ালিয়ায় স্থানান্তর করে, কারণ কোলকাতার সঙ্গে হুগলী নদী, ভৈরব নদী এবং পদ্মা নদীর মাধ্যমে রাজশাহীতে সহজে যোগাযোগ করা সম্ভবপর হয়। এর ফলে এই জায়গায় ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ১৮৭৬ সালে “রাজশাহী” রাংলাদেশের প্রথম পৌরসভাগুলোর অন্যতম পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভে করে। সময়, প্রয়োজন এবং উন্নয়নের তাগিদে ১৯৯১ সালে এটিকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। কিছু পন্ডিত মনে করেন হিন্দু শাসক রাজা থেকে “রাজ” এবং মুসলিম শাসক মাহমুদ শাহ, বারবাক শাহ এবং জালাল উদ্দীন শাহ এর উপাধি ‘শাহ’ থেকে রাজশাহী নামের উৎপত্তি। বাংলদেশের প্রখ্যাত আউলিয়া হযরত শাহ মখদুম (রহঃ) এর স্মৃতি বিজরিত পূণ্য ভুমি পদ্মা বিধৌত শিক্ষা নগরী, সিল্ক ও আমের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহী শহরের কেন্দ্র হতে প্রায় ২ কি.মি. উত্তরে এবং রাজশাহী রেল স্টেশন হতে প্রায় ১ কি.মি. উত্তর পশ্চিমে রাজশাহী বিমান বন্দর সড়কের পাশে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম সংলগ্ন মনোরম পরিবেশে ও শোভনীয় দালান কোঠায় সজ্জিত ১৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।
শিক্ষা কার্যক্রম:
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে বর্তমানে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি প্রত্যেক প্রযুক্তির ছাত্র-ছাত্রীদের আবশ্যিকভাবে বিকাশের জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানের জন্য একটি অকারিগরি (NonTech) শিক্ষা বিভাগ রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সকালে ও দুপুরে দুই শিফটে পাঠদান করা হয়।
বিভাগ সমূহ:
- যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ
- ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগ
- কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগ
- পুরকৌশল (সিভিল) বিভাগ
- তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ
- যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ
- শক্তি প্রকৌশল বিভাগ
- মেকাট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগ
- ইলেক্ট্রোমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগ
ভর্তি পদ্ধতি:
প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের সরকারি পলিটেকনিক গুলোতে এক সাথে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে। তারপর এসএসসি পরিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর এর উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয় । অনলাইনে ভর্তি ফর্ম পূরণের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিভাগ ও পলিটেকনিক পছন্দের সুযোগ থাকে। মেধা ও পছন্দের ভিত্তিতে বিভাগ ও ইন্সটিটিউট নির্বাচন করা হয়। এভাবে প্রতি বছর রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথম ও দ্বিতীয় শিফটে বিভিন্ন বিভাগে নির্ধারিত আসন সংখ্যা ৯৬০ হতে বৃদ্ধি করে ১৪৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়ে থাকে ।
ছাত্রাবাস:
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি ছাত্রাবাস এবং একটি ছাত্রীনিবাস আছে ।
Discussion about this post