গণ্ডার কোথায় দেখেছ? টেলিভিশনের পর্দায়, চিড়িয়াখানায়, নাকি বইয়ের পাতায়? তোমরা যে এ প্রাণী দেখেছ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গণ্ডারের প্রকৃতি কেমন? এটি একটি শক্তিশালী প্রাণী। বদরাগীও বটে। কোনো জন্তুর শিং সাধারণত কোথায় গজায়? কপালে। আর গণ্ডারের? গণ্ডারের নাকের চামড়ার ওপর। এর শিং তৈরি হয় কী দিয়ে। এক গোছা শক্ত চাপবাঁধা লোম দিয়ে। আর অন্যান্য প্রাণীর শিং হাড় জাতীয় পদার্থে তৈরি হয়। গণ্ডারের নাকের ওপরের শিংকে এক ধরনের খাঁড়া বা খড়গ বলা যায়। এটিই এ প্রাণীর লড়াই বা আত্মরক্ষা করার অস্ত্র।
গণ্ডারের ইংরেজি নাম হল Rhinoceros। নামটি Rhino (নাক) এবং ceros (খর্গ) নামক ২টি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে। গণ্ডারের ৫টি প্রজাতি এবং ১১টি উপজাতি রয়েছে। প্রজাতিগুলো হল ভারতীয় গণ্ডার, জাভাদেশীয় গণ্ডার, সুমাত্রার গণ্ডার, সাদা গণ্ডার এবং কালো গণ্ডার।এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য মুখমণ্ডলের উপরিভাগে খর্গ থাকে। প্রজাতিভেদে এই খর্গ এক থেকে তিনটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের ত্বক অত্যন্ত পুরু ও গভীর ভাঁজ যুক্ত হয়। এর ফলে পুরু ত্বক একটি জীবন্ত বর্মের কাজ করে। প্রজাতিভেদে ত্বকের পুরুত্ব প্রায় ১,৫-৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এদের চামড়া ভারী হওয়ার কারনেই , আমরা অনেক সময় এদের সাথে কিছু মানুষের তুলনা দেই – “গন্ডারের চামড়া তো, কিছুই গায়ে লাগে না“। এদের ঘাড় কাঁধ ও দেহের পাশের চামড়া অনেকটা স্ফীত।
আকৃতির দিক থেকে আফ্রিকার সাদা গণ্ডারই বৃহত্তম। এদের ঘাড়ের উচ্চতা প্রায় ৫.৯ থেকে ৬.১ ফুট (১.৫ থেকে ১.৮৫ মিটার) হয়ে থাকে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ থেকে ১৪ ফুট (৩.৩৫ থেকে ৪.২ মিটার)। ভারতীয় গণ্ডারের ঘাড়ের উচ্চতা ৫.৫ থেকে ৬.১ ফুট হয়ে থাকে। এই গণ্ডার নেপাল ও তৎসংলগ্ন আসাম অঞ্চলে বসবাস করে। জাভার গণ্ডারের উচ্চতা ভারতীয় গণ্ডার অপেক্ষা কিছুটা কম।
সাদা ও কালো উভয় বর্ণের গণ্ডার দেখা যায়। আফ্রিকার এই উভয় প্রকার গণ্ডারের নাকের উপর দুটি করে খর্গ রয়েছে। ভারতীয় ও জাভার গণ্ডারের নাকের উপর একটি খর্গ দেখা যায়। গণ্ডারের এই খর্গ গুচ্ছবদ্ধ লোম দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। গণ্ডার আক্রমণ বা আত্মরক্ষার জন্য খর্গ ব্যবহার করে। আবার এই খর্গের জন্যই একসময় মানুষ গণ্ডারকে হত্যা করেছে। এছাড়া চামড়া অত্যন্ত শক্ত হওয়াতে, একসময় যুদ্ধে ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কারণেও শিকারীরা গণ্ডার হত্যা করেছে।
গণ্ডার অত্যন্ত বদরাগী ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে। এদের দৃষ্টি শক্তি অত্যন্ত কম থাকে। তবে এরা তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির গণ্ডারের মধ্যে আফ্রিকান কালো গণ্ডার অপেক্ষাকৃত অধিক ভয়ঙ্কর। এরা সাধারণত এককভাবেই বিচরণ করে।
এরা সাধারণত দুপুরে ঘুমায়। আর বাকি সময়, দিন-রাত, চারণে যায়। বিশালাকার দেহের কারনেই এদের প্রায় সারাদিন খেতে হয়। অনেকসময় এদের শরীরে কাঁদা মাখতেও দেখা যায়। শরীরে লেগে থাকা এই কাঁদা তাদেরকে পোকামাকড়দের থেকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিক সানস্ক্রীন হিসেবেও কাজ করে। এরা দেখতে মোটা হলেও ঘণ্টায় প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মাইল গতিতে ছুটতে পারে।
গণ্ডার তৃণভোজী প্রাণী। ঘাস ছাড়াও ছোটো ছোটো গাছের পাতাও আহার করে থাকে। বলাই বাহুল্য বিশাল শরীরের কারণে গণ্ডার প্রচুর পরিমাণ আহার করে থাকে। তবে স্থান এবং প্রজাতিভেদে খাবারে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। যেমন, আফ্রিকান কালো গণ্ডারদের লম্বা জিহ্বা এবং নাক বড় হওয়ার কারনে এরা বড় বড় ঘাস, গাছ বা ঝোপ খায়, গাছের উপর থেকে পাতা এবং ফল খায়। অপরদিকে সাদা গণ্ডাররা নাক ছোট হওয়ার কারনে মাটির কাছাকাছি এসে ছোট ঘাসও খেতে পারে।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণত ৮০০ থেকে ১৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়, তবে ২১৯৯-২৮৯৬ কেজি পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে বড় পুরুষ নমুনা পাওয়া যায়। নারীরা পুরুষদের তুলনায় ছোট। মাথার দুটো শৃঙ্গ কেরেটিন দ্বারা তৈরি হয় যার সাথে বড় প্রস্থ শিং সাধারণত ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) লম্বা হয়, বিশেষ করে ১৪০ সেন্টিমিটার (৫৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত।
একটি গণ্ডারের কয়টি শিং? তোমরা তো জানোই, কোনো জাতের গণ্ডারের শিং থাকে একটি। আবার কোনো জাতের থাকে দু’টি। তবে এ দু’টি শিং অন্য পশুর মতো পাশাপাশি থাকে না, একটার পেছনে থাকে অপরটি। গণ্ডার কোথায় বাস করে? বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে গণ্ডার আছে। সবচেয়ে বেশি আছে কেনিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সোয়াজিল্যান্ড, তানজানিয়া, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে সহ পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। স্ত্রী গণ্ডাররা প্রতি আড়াই থেকে পাঁচ বছর পরপর বাচ্চা দিয়ে থাকে।প্রায় ৩ বছর বয়সে, বাচ্চাটি নিজের পরিবার ত্যাগ করে চলে যায়। সাধারণত একটি গণ্ডার ৪৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
Discussion about this post