প্রিয় ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কি কাজী নজরুল ইসলামের নাম শুনেছ? হ্যাঁ, আমি কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম বলছি। ভাসা ভাসা দুটি চোখ আর বাবরি চুলের এই সুন্দর মানুষটিই আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। এই কবি ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দ ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জায়েদা খাতুন। কবি গ্রামের মক্তব থেকে প্রাইমারী পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুর হাইস্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হলেন বর্ধমান জেলার রাণীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ হাইস্কুলে। এখানে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় প্রথম মহাযুদ্ধে যোগদান করেন। কবির প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার এখানেই সমাপ্তি ঘটে। কবির ডাক নাম দুখু মিয়া। কবি ছোট বেলায় অনেক দুঃখ-কষ্টে বড় হয়েছেন। আসানসোল শহরে রুটির দোকানে কাজ করেছেন। কবি ১২ বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগ দেন। সেখান থেকে সামান্য কিছু রোজগার করতেন। নজরুল লেটো গানের দলে গান গাইতেন এবং গান লিখতেন। সংসার চালাতে গিয়ে কবিকে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হয়েছে। কবি সাহিত্যকে ভীষণ ভালবাসতেন। শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করতেন। লিখেছেন ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ কাহিনী প্রভৃতি। বাংলার সাহিত্য ভা-ারে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। নজরুল শুধু বড়দেরই ছিলেন না, তিনি ছোটদেরও প্রিয় কবি।
ভোর হয়েছে অথচ খোকা-খুকিরা এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। ডালিম গাছের শাখায় বসে দল বেঁধে পাখির কিচিরমিচির ডাকাডাকি। ঘাস ফড়িংয়ের ওড়াওড়ি আর নাচানাচি। শুকনো বালুর চরে, নদী-পুকুর ও খালের তীর ঘেঁষে বেড়ে উঠা সাদা সাদা কাশফুলের নাচানাচি। ঝিলের জলে শাপলা ফুলের হাসি। বাগানে গোলাপ, হাসনা-হেনা, রজনীগন্ধা ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ যেন বার বার ডেকে ডেকে বলছে-
ভোর হল দোর খোল
খুকুমণি উঠ রে।
কবি কখনও বদ্ধ ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে চাননি। কবি সব সময় ঘুরে বেড়াতে চেয়েছেন। কবির মন পাখিটা যে বড়ই চঞ্চল। ফুরুৎ ফুরুৎ করে ডানা মেলে উড়তে চায় আকাশে বাতাসে। পাখির ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াতে চায় দেশ হতে দেশান্তরে। সুন্দর এই পৃথিবীর সব কিছু দেখতে চায় দু’চোখ ভরে। কবি এখানে লিখেছেন-
থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে।
দুখু মিয়ার জীবনে ছিল অনেক দুঃখ-কষ্ট। অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। কবি রুটির দোকানে চাকরি করেছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দোকানের খুঁটিতে হেলান দিয়ে পুঁথি পড়তেন। কবির মন ছিল চঞ্চল। তারুণ্যে ছিল ভরপুর। কবি লিখেছেন-
চল্ চল্ চল্
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল।
কবি ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতা, গল্প, নাটক লেখার পাশাপাশি প্রচুর গানও লিখেছেন। গানগুলো আজও অধিক জনপ্রিয়। এমন একটি গান হলো-
প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই
এমন রঙিন পাখা।
কাঠ বিড়ালির সঙ্গে কবির ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। কাঠ বিড়ালির লাফিয়ে ছুটে চলা। টপাটপ গাছের ফল খাওয়া দেখে কবিরও লোভ হলো। পাকা ফলের ঘ্রাণ কবির মনকে মুগ্ধ করেছিল। পেয়ারা গাছ অনেক উঁচুতে। গাছে উঠে পেয়ারা খাওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার। কবি তাই গাছে উঠতে নারাজ। কাঠ বিড়ালির পেয়ারা খাওয়া দেখে কবির বড্ড হিংসে হচ্ছিল। কবি কৌশলে কাঠ বিড়ালির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলল। কবি কাঠ বিড়ালিকে নিয়ে লিখে ফেললেন চমৎকার একটি ছড়া। ছড়াটি হলো-
কাঠ বিড়ালি কাঠ বিড়ালি
পেয়ারা তুমি খাও
গুড় মুড়ি খাও
বাতাবি নেবু লাউ।
নজরুল ছোটদের। নজরুল ছোটদের অনেক ভালবাসতেন। আদর করতেন। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। এই মহান কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
Discussion about this post