শেখ আনোয়ার
শুধু লোহা নয়, সত্যি সত্যি কাগজেরও চুম্বক হয়। শুনতে ভারি অদ্ভুত লাগলেও এই কাগজের চুম্বক তুমি নিজ হাতে বানিয়ে অবাক করে দিতে পারো দর্শকদের।
তোমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, বইয়ের কাগুজে পাতাগুলোকে অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব। বিশ্বাস না হয়ে থাকলে চলো এই পরীক্ষাটি করে দেখা যাক।
যে কোন দুটো নতুন বই নাও। বই দুটোর পাতা অফসেট বা শক্ত কাগজ হলে খুবই ভালো হয়। তবে পাতলা কাগজের বই হলেও অসুবিধা নেই। সবচেয়ে ভালো হবে যদি বই দুটো একই ধরনের হয়।
কিভাবে করবে?
বইয়ের উপরের কভারসহ টেবিলের উপর বই দুটো পরস্পর মুখোমুখি করে রাখো। বই দুটো একদম পাশাপাশি রাখবে, যেন গায়ে গায়ে লেগে থাকে। তাস খেলার সময় যেমন অর্ধেক তাস ভাগ করে দু’পাশে সাজিয়ে রাখা হয় এলোমেলো করার জন্য, এখানেও অনেকটা তেমনি করতে হয়। অর্থ্যাৎ তাস ফেটানোর মতো করে বই দুটোর এক বই এর পাতা অন্য বইয়ের পাতার মধ্যে ঢোকাতে হবে।
এই কাজে তোমার হাতের বুড়ো আঙ্গুল ব্যবহার করতে পারো। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পাতাগুলো আস্তে আস্তে ওল্টাও। এক বইয়ের পাতা অন্য বইয়ের পাতার মধ্যে পাশাপাশি ভাবে ঢোকাও এবং সম্পূর্ণ মিশিয়ে ফেলো চিত্রের মতো করে। এভাবে বইয়ের পাতাগুলো যখন তাস ফেটানোর মতো এক পাতার ভেতর অন্য পাতা ঢোকে যাবে, তখন বই দুটো পরস্পর খুব কাছাকাছি আনতে হবে।
এবার দর্শক বা তোমার বন্ধুদের কাউকে ডেকে এনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দাও। তাকে বলো, কার কতো সাহস ও শক্তি রয়েছে এবার পরীক্ষা হয়ে যাক। খাড়া অবস্থায় বইয়ের শিরোনামসহ যে অংশ চোখে পড়ে সে অংশ শক্ত হাতে ধরে বই দুটো যে খুলতে পারবে সেই হবে আজকের সেরা বিজয়ী, শক্তিমান বীর বাহাদুর। না। তোমার পরাজিত হবার ভয়ের কোনো কারণ নেই। আসলে যার শরীরে যত শক্তিই থাকুক না কেন, কেউ-ই পারবে না এই বই দুটো খুলতে।
প্রশ্ন হচ্ছে এমনটি হবার কারণ কী?
এখানে বই দুটো পরস্পর মুখোমুখি করে এক পাতার মধ্যে আরেক পাতা প্রবেশ করানো হয়েছে মাত্র। এভাবে এক বইয়ের এক পাতার মধ্যে অন্য বইয়ের আরেক পাতা ঢোকানোর কারণে কিছুটা ঘর্ষণের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘর্ষণের এই প্রভাবে বইয়ের পাতাগুলো চৌম্বকত্বের শক্তি প্রদর্শন করছে। এরকম এক পাতার সঙ্গে আরেকটি পাতার পারস্পরিক ঘর্ষণ যখন অসংখ্য পাতার মধ্যে ছড়িয়ে যায় তখন তৈরি হয় কঠিন ঘর্ষণজনিত ত্বড়িৎ শক্তি। যে শক্তির সঙ্গে পেরে উঠা সম্ভব হয়ে উঠে না কোন মানুষের।
লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শেখ আনোয়ারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২।
Discussion about this post