আজ এমন একজনের কত্ জানাবো যে নিজে নিজে ছবিআঁকা শিখে ইতিমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় পুরস্কার অর্জন ও ছবি প্রদর্শনী করছে। খুদে এই চিত্রশিল্পীর নাম মোহাইমিন সুলতানা মিভা। পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ পাঁচসহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিভা। বাবা মোঃ গোলাম রসুল মিয়াজি ও মা শিরিন সুলতানা দম্পত্তির একমাত্র সন্তান মিভা ছবিআঁকা ছাড়াও ডুডলিং, ডিজাইনিং, কার্টুন, এম্বিগ্রাম, গান, আবৃত্তি (ইংরেজি), ফটোগ্রাফি, লেখালেখি, ব্যাডমিন্টন, হাতের লেখা (বাংলা, ইংরেজি) ও গিটার বাজানোতে পারদর্শী।
ছবি আাঁকার শুরুটা কখন হলো জানতে চাইলে মিভা বলে, ছোটবেলায় থেকেই আঁকাআঁকি খুব ভালোবাসতাম। সময় পেলেই আঁকার খাতার নিয়ে বসে যেতাম। মনের আনন্দে যা ভালো লাগতো তাই আঁকতাম। ছবি আঁকতে আঁকতে কখন যে এটা ঝোঁকে পরিণত হবে তা কখনো ভাবিনি। ছবি আঁকার প্রতি আমার একটা আলাদা ভালোবাসা জন্মে ছিল। এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। আমার দৃঢ় মনোবলেই আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি মায়ের ও অনুপ্রেরণা ছিল। ছবি আঁকা আমার সম্পূর্ণ নিজের এবং কোথাও আঁকা শেখা হয়নি।এ ছাড়াও আমি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ৭১ এর অবিনাশী সত্তা , বিতর্ক ক্লারে সদস্য। ব্রিটিশ কাউন্সিল বুক এর সদস্য, সাইন্স ক্লাব এর সদস্য, আর্থ ক্লাব এর সদস্য হিসেবে যুক্ত আছি।
ছবি আাঁকা লেখাপড়ার কোন ক্ষতি করে কি না জানতে চাইলে মিভার বক্তব্য-
ছবি আঁকা কখনো আমি লেখা পড়ার বাইরের জিনিস হিসেবে দেখি নাই। সবসময় এগুলোকে নিজের একটা আনন্দ হিসেবে বিবেচনা করেছি। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জীবনে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস এর অনেক প্রয়োজন। শুধু পড়ালেখায় আবদ্ধ হলেই হবে না। পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা কাররিকুলার এক্টিভিজ বিদেশে পড়ালেখা বা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগে। জিপিএ ৫ পাওয়ার চেয়ে আমি কতটা জ্ঞান অর্জন করতে পারলাম সেটা সবথেকে বেশি জরুরি। আর এক্সট্রা কাররিকুলার একটিভিটিস চাকরির সিভি কে বেশ ভালো ভাবে উপস্থাপন করে। এক্সট্রা কাররিকুলার একটিভিটিস আমাদেরকে আরো বেশ দক্ষতা সম্পন্ন করে তোলে।
মিভার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হলেন বাবা মা। তার হবি হলো ব্যডমিন্টন খেলা। অবসরে সে বই পড়ে ও মুভি দেখে। প্রিয় বইগুলোর মধ্যে আছে Around the world in 80 days, Rip Van Winkle and Dealthy Sleepy Hallows, The 7 habits of Highly effective people, “ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা, Never Stop Learning। পছন্দের সিনেমাগুরো মধ্যে অন্যতম Zootopia, Magamind, Coco, The Karate Kid, Spirited away।
এছাড়া ফটোগ্রাফী, ডায়েরি লেখাও তার শখ। তবে মিথ্যা কথা বলা, অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করা, কারো ক্ষতি করা, পরনিন্দা করা খুব খুব অপছন্দের।
জীবনের লক্ষ্য কি ? এ প্রশ্নে মিভার জবাব- আমার স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে প্রকৌশলি হবো। আমি চেষ্টা করবো এমন একটা উদ্যোগ নিতে যাতে করে কোন শিশুই যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। ঘরে ঘরে যেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে।
মোহাইমিন সুলতানা মিভা’র অর্জনগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি
১।মেরিল আদরে গড়া ভবিষ্যত প্রতিযোগিতা। মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসা (বিজয়ী ২০০৮ সালে ছবি পাঠিয়ে)।
২। আদরে নাম ধরে ডাকা (বিজয়ী ২০০৯ সাল)
৩। ২০১১ সালে মার্বেল খেলা ৩ য় স্থান লাভ করে।
৪। ‘আন্তঃ সাংস্কৃতিক সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা ২০১৪’ এ বাংলা – ৩ য় স্থান।
৫। আন্তঃ সাংস্কৃতিক সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা ২০১৪ এ ইংরেজি ২ য় স্থান।
৬। ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল -ইংলিশ বুক রিডিং কম্পিটিশন ২০১৪’ এ তৃতীয় স্থান।
৭। ব্রিটিশ কাউন্সিল -ইংলিশ বুক রিডিং কম্পেটিশন ২০১৫’ এ প্রথম স্থান লাভ করে।
৮। ব্রিটিশ কাউন্সিল -ইংলিশ বুক রিডিং কম্পেটিশন এ বিজয়ী ২০১৮ তে।
৯। ‘লাইফবয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ২০১৪’ এ বিজয়ী।
১০।’ বটতলা রংমেলা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ২০১৬ ‘ এ বিজয়ী।
১১।’ নাভানা- টয়োটা ড্রিম কার ন্যাশনাল আর্ট কনটেস্ট ২০১৭’ এ বিজয়ী।
১২ ।( বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত) “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান।
১৩। ছবিঘর আয়োজিত প্রথম হয়েছে – ছবি আঁকাতে ২০১৮”।
১৪। ভিকারুননিসা নূন স্কুলে টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকের একটি কুইজ পর্বে বিজয়ী হয়েছে।
১৫।দ্বিতীয় স্থান- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) আয়োজিত”স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরন” পোস্টার প্রদর্শনীতে।
১৬। ২০১৮ সালে নটর ডেম ইংলিশ ক্লাব আয়োজিত ‘ফোর্থ ন্যাশনাল ইংলিশ কার্নিভাল’ এ ইংরেজি কবিতা আবৃত্তিতে দ্বিতীয় স্থান।
প্রদর্শনী: (ছবি আঁকা)
১।De’Art Photo Festival উপলক্ষে নির্বাচিত তিনটি ছবি আঁকা ভারতের কলকাতার বিখ্যাত Gallery Gold এ ছবি প্রদর্শিত হয় ।
২। টয়োটা ড্রিম কার এ বিজয়ী আঁকা ছবি জাপানে প্রদর্শনী হয়েছে।
৩।শিশু একাডেমী থেকে ২০১৭ সালে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু তে ছবি আঁকা প্রদর্শিত হয়েছে।
৪। ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে নির্বাচিত ছবি আঁকা (১৫.০২.২০১৮ থেকে ১৬.০২.২০১৮) দু’দিন ব্যাপী প্রদর্শিত হয়েছে।
৫।৬ টি আঁকা ছবি নির্বাচিত হয়ে সাভার উপজেলা প্রদর্শনী হয় (২৭ শে এপ্রিল) ২০১৮।
৬।উন্মাদের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি কার্টুন নির্বাচিত হয়ে দৃক গ্যালারিতে ৫ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রদর্শনী হয়েছে।
৭। “2nd National Teen’s Art & Photography Festival” এ ২ টি আঁকা ছবি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী তে ২৭ থেকে ২৮ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত।
প্রদর্শনী: (ফটোগ্রাফি)
১।শিশু একাডেমীতে ফটোগ্রাফি নির্বাচিত ছবি প্রদর্শনী হয়েছে ১৯ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত।
Discussion about this post