অনলাইন ডেস্ক
চোখের সমস্যা যে কোনও কারণেই হতে পারে। তার পিছনে বংশগত বা জিনগত কারণ থাকতেও পারে অথবা না-ও থাকতে পারে। শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার এবং চোখের যত্ন নেওয়ার চাবিকাঠি রয়েছে আমাদের পরিচিত কতগুলি খাবারের মধ্যে। দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকায় কোন কোন খাবার রয়েছে।
#1. সমস্ত শাক: সব ধরনের সবুজ শাক (Leafy Vegetables) দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র শিশুদেরই নয় (Kid’s Eyesight), বড়দের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বা চোখের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে সবুজ শাক। এতে থাকা ভিটামিন, প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ক্যালসিয়াম চোখের উপকারে লাগে। কিছু কিছু সবজির মধ্যে থাকা লুটিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এইসব শাকসবজি যদি রান্না না-করে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়, তা হলে তা আরও ভালো। (Foods That Improve Children’s Eyesight) কিন্তু শাকের মধ্যে থাকা কীটনাশক বা অন্যান্য দূষিত পদার্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। সেই কারণে রান্না করে খাওয়াই ভালো। তবে বাড়িতে উৎপাদন করা শাক ভালো করে পরিষ্কার করে কাঁচা অবস্থায় শিশুকে খাওয়ানো যায়। কোন শাক কীভাবে খাওয়াবেন তা চিকিৎসকের থেকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
#2. গাজর এবং রাঙা আলু: যে কোনও হলুদ সবজির (Carrot and Sweet Potato) মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। পাশাপাশি থাকে ভিটামিন এ। এই দুই উপাদানই চোখের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রোদ বা জোড়ালো আলোয় রেটিনার যে ক্ষতি হয়, তা থেকেই রক্ষা করতে পারে এই জাতীয় সবজি।
#3. ডিম: শুধুমাত্র পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবারই নয়, ডিমের (Egg) মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং লুটিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার খোকা বা খুকুর চোখের বিরাট যত্ন নেয় (Best Foods to Strengthen Children’s Eyesight)। অল্প আলোয় দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার সমস্যা (Night Blindness) বা চোখ শুকিয়ে যাওয়া (Dry Eyes)-এর মতো সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে ডিমের মধ্যে থাকা উপাদান। তাই আপনার সোনার পাতে রোজই থাকুক ডিম। তবে থেকে ওর অ্যালার্জি বা অন্য কোনও সমস্যা হতে পারে কি না, এবং কতগুলো ডিম ওকে খাওয়াবেন, তা চিকিৎসকের থেকে ভালো করে জেনে নিন।
#4. সামুদ্রিক মাছ (Deep-water fish): স্যামন, টুনা বা ম্যাকারেল জাতীয় সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড । যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত দরকারি (Protecting Your Child’s Eyes and Vision)। চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা আটকাতে এই জাতীয় মাছের তেলের কোনও তুলনাই হয় না। যাঁরা নিয়মিত এই জাতীয় মাছ খান, পরিসংখ্যান বলছে তাঁদের ক্যাটারাক্টস (Cataracts) বা ছানি পড়ার সমস্যাও তুলনায় কম হয়।
তবে তাজা সামুদ্রিক মাছ আমাদের এখানে সব সময় পাওয়া সম্ভব নয়। (Best Ways To Improve Your Child’s Vision) তাই এর ব্যতিক্রম হিসেবে অনেকে কড লিভার অয়েল বা ওই জাতীয় মাছের তেলের ক্যাপসুল খান। তবে শিশুদের এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ভালো করে জেনে নিতে হবে কী পরিমাণে ক্যাপসুল শিশুকে খাওয়ানো যাবে। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে এই তেল শরীরের গেলে, তা ক্ষতিকারক। বিষক্রিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
#5. আমন্ড: কাঠবাদাম বা আমন্ডে (Almond) প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই রয়েছে। এই ভিটামিন শিশুদের চোখের জন্য খুবই ভালো। এমনকী বড়দের চোখের ক্ষেত্রেও আমন্ড খুবই কার্যকরী। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা নিয়মিত অল্প পরিমাণে আমন্ডবা কাঠবাদাম খান, তাঁদের মায়োপিয়া জাতীয় সমস্যা কম হয়।
শুধুমাত্র আমন্ডই নয়, পেস্তা বা আখরোটের মতো বাদামেও রয়েছে চোখের উপকারী উপাদান। ফলে নিয়মিত আপনার সোনাকে অল্প পরিমাণে এই জাতীয় বাদাম খাওয়াতে পারেন। (Foods to Boost Your Eye Health)
#6. স্ট্রবেরি: আপনার বাড়ি খুদে সদস্যদের চোখ ভালো রাখতে চান? তা হলে আগামী শীতে আপনার হাতিয়ার স্ট্রবেরি (Strawberry)। আমাদের দেশে শীতকাল ছাড়া অন্য সময় স্ট্রবেরি পাওয়া কঠিন। পাওয়া গেলেও তা কত দূর তাজা, সেটা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কিন্তু শীতে এই সমস্যা নেই।
এমনকী নিজের বাড়িতেও ছোট ছোট স্ট্রবেরি গাছের চাড়াও লাগিয়ে নিতে পারেন। শীতের শেষ পর্যন্ত স্ট্রবেরির জোগান দেবে এই গাছগুলোই। শিশুদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণে স্ট্রবেরি খাওয়ানো হলে, তাদের চোখ ভালো থাকে। স্ট্রবেরিতে থাকা ভিটামিন-সি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চোখের সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়।
#7. টমেটো: আয়রন-সমৃদ্ধ এই সবজি রক্তাল্পতার সমস্যা কাটাতে খুবই কার্যকরী। কিন্তু তার পাশাপাশি চোখের যত্ন নিতে টমেটোর (Tomato) জুড়ি নেই। এর মধ্যে ধাকা ভিটামিন-এ (Vitamins for Children’s Eyehealth) চোখের উপকার করে। টমেটোয় থাকা লাইপোসিন এবং লুটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়াও এর মধ্যে এমন উপাদান রয়েছে, যা কড়া রোদ থেকে শিশুদের চোখ রক্ষা করতে পারে।
#8. আম: আমের মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। তাই গোটা গ্রীষ্মকাল শিশুদের নিয়মিত আম (Mango) খাওয়ান। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়াবেন না (Foods that Improve Children’s Eyesight)। পরিমিত পরিমাণেই ওদের আম দিন।
#9. লেবু: ভিটামিন-সি যে শিশুদের চোখের জন্য অত্যন্ত দরকারি তা সকলেই জানেন। আর ভিটামিন সি’র প্রসঙ্গ উঠলে লেবুর (Lemon) কথা বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। যে কোনও ধরনের লেবুর মধ্যেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আপনার সোনাকে নিয়মিত লেবু খেতে দিন। শীতকালে তো কমলালেবু মাস্ট! তা হলেই দেখবেন ওর চোখ অনেকটাই সুরক্ষিত।
#10. বাঁধাকপি: আপনি কি জানেন বাঁধাকপিতে ভিটামিন-সি-এর পরিমাণ কমলালেবুর চেয়েও বেশি? তাই এ কথা অনস্বীকার্য যে বাঁধাকপি সব বয়সের মানুষের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী (How to Improve Child’s Eyesight Naturally)। তবে উপকারের তালিকার শেষ এখানেই নয়। বাঁধাকপিতে (Cabbage) রয়েছে ভিটামিন-ই’ও। চোখের পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই ভিটামিনের কোনও তুলনা হয় না।
তবে বাঁধাকপি কেনার সময় একটা জিনিস দেখে নেওয়া খুবই দরকারি। কীটনাশক বা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে চাষ করা বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ ততটাও নয়। শিশুদের দেহ এবং মস্তিষ্কের বিকাশ যেহেতু সম্পুর্ণ হয়নি, তাই কীটনাশক এবং অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা বাঁধাকপি তাদের না-দেওয়াই ভালো। এতে তাদের দেহের এবং মস্তিষ্কের সার্বিক ক্ষতি হতে পারে। ফলে আপনার সোনার জন্য বাঁধাকপি কেনার আগে দেখে নিন সেগুলো অর্গানিক কি না (How to Improve Weak Eyesight Naturally)।
যদি তা হয়, তবেই ওকে সেই বাঁধাকপির নানা পদ রান্না করে খাওয়ান। আর যদি বাঁধাকপি নিজের বাগানে ফলাতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই।
চোখের সাধারণ সমস্যাগুলো আটকানোর জন্য সুস্নাতকে কোন কোন খাবার খাওয়াতে হবে, তা ভালো করে বুঝে নিয়েছে সুনয়না। তাই আপাতত ও বেশ নিশ্চিন্ত। কারণ সুনয়না জানে, সুস্নাতর নিষ্পাপ চোখ দুটো সুরক্ষিত রাখা যাবে কী করে। (Foods to Help Maintain Your Child’s Eyesight)
Discussion about this post