বিশেষ প্রতিবেদক
মাহির আলি রুশো। বয়স মাত্র ১৪। এই বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের জটিল সব গাণিতিক ও বিজ্ঞানের সমস্যার সমাধান দিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞান চর্চা আর গণিতের সমস্যা সমাধান করে দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে রাজধানীর মনিপুর স্কুলের নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। এই বয়সেই হার্ভার্ড, এডিনবার্গসহ পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ৫০টিরও বেশি গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স করেছে। অর্জন করেছে গুগল-আইটি অলিমপিয়াড চ্যাম্পিয়ন পদক ও ভারতের জ্যোতির্বিদ্যার সর্বোচ্চ আসর আইওএসএ এর স্বর্ণপদক।
রাজধানীর মনিপুর হাইস্কুলের নবম গ্রেডের শিক্ষার্থী রুশো। তার এমন আগ্রহ দেখে উচ্ছ্বসিত বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষকরা। তারা চান, বিশ্ব দেখুক—বাংলাদেশের এক খুদে বালক তার গাণিতিক আর বৈজ্ঞানিক সমাধানে অন্যদের হার মানাচ্ছে। রুশোর জানার আগ্রহটা বেড়ে যায় করোনার মহামারিতে স্কুল বন্ধের সময়। তখন সে আরো বেশি সময় ব্যয় করতে থাকে বিজ্ঞানে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সে অনলাইনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি বিষয়ে অসংখ্য অনলাইন কোর্সে অংশ নেয়। এর মধ্যেই রুশো জানতে পারে অনলাইনে ‘সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াড’ সম্পর্কে। তাতে অংশ নিয়ে হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন। এতে বেড়ে যায় মনোবল। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে থাকে। এখন পর্যন্ত রুশো ৫০টিরও বেশি অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ অন্যতম।
রুশোর প্রতিভার কথা বলতে গিয়ে তার বাবা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। সে সময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল। একটা পর্যায়ে খেয়াল করি— সে আমার ল্যাপটপে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথের। আর সবগুলোর তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের। তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারত।’
এই খুদে বালক দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিযোগিতা ও অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ওপেন কনটেস্ট অলিম্পিয়াডে রুশোকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারদের সঙ্গে এবং রুশো প্রায় সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ড কমিটি’ রুশোর সম্মানসূচক অর্জনগুলোর প্রশংসা করে জানিয়েছে, তারা রুশোকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে নটরডেমের শিক্ষার্থীকে হারিয়ে রুশো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন এবং জামাল নাক্রল জ্যোতির্বিদ্যা উত্সব, ন্যাশনাল সাইবার অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডসহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিকভাবে বিজয়ী হয়েছে রুশো।
রুশোর মা চিকিত্সক রুমা আক্তার বলেন, ‘আমার জন্য যখন কোনো বই কিনেছি, তখন রুশোর জন্যও কিনেছি বই। আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কি চায় সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় সন্তানের চাওয়া থেকে নিজেদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়।’
রুশো এর মধ্যেই ৫০টির বেশি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স শেষ করেছে। এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সনদ লাভ করেছে।
নিজের এতসব অর্জনে গর্বিত রুশো। তার কাছে মনে হয়, সায়েন্স আসলে ‘ভয়েস অব গড’, যার মধ্যে ডমিনেন্ট করে ফিজিক্স। আর এর মূলে রয়েছে ম্যাথ, যা জানার কোনো বিকল্প নেই। রুশো জানায়, সে আসলে কোনকিছু কীভাবে, কেমন করে হচ্ছে সেটা জানতে চেয়েছে। আর এজন্য অবশ্য পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য।’
Discussion about this post