মার্চেন্ডাইজিং (Merchandising) এর আভিধানিক অর্থ পণ্য কেনা বেচা করা। অর্থাৎ আয়ের উদ্দেশ্য কোন পণ্য কিনে তা আবার বিক্রি করাকে মার্চেন্ডাইজিং বলে। আর এ কাজটি যে করে থাকে তাকে মার্চেন্ডাইজার বলে। বাংলাদেশে মূলত রপ্তানিমুখি পোশাক শিল্পে মার্চেন্ডাইজারদের কাজ। মার্চেন্ডাইজাররা সাধারণত বায়িং হাউজ বা গার্মেন্টস এ কাজ করেন। গার্মেন্টস সামগ্রীর অর্ডার থেকে শুরু করে বিদেশে চালান দেওয়া পর্যন্ত সকল ক্রয়- বিক্রয় এর হিসাব নিকাশ একজন মার্চেন্ডাইজার করে থাকেন।
এক নজরে একজন মার্চেন্ডাইজার
সাধারণ পদবী:অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার
বিভাগ:টেক্সটাইল
প্রতিষ্ঠানের ধরন:বায়িং হাউজ, গার্মেন্টস
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল:মিড
অভিজ্ঞতা সীমা:অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। শুরুতে ট্রেইনি বা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে হয়
সম্ভাব্য বেতনসীমা: ইন্টার্নদের বেতন ১০-২০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা ও পদন্নোতির সাথে সাথে বেতন ও বাড়ে। ৬-১০ বছরের অভিজ্ঞ একজন সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার এর বেতন ২ লাখ পর্যন্ত হতে পারে
সম্ভাব্য বয়সসীমা:২৫-৪৫ বছর। কাজের চাপ অনেক বেশি বিধায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ৩০-৩৫ বছর বয়সের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়
মূল স্কিল:টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে হবে, আমদানি-রপ্তানির সাথে জড়িত সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে
বিশেষ স্কিল:এক নাগাড়ে পরিশ্রম করবার মানসিকতা, ইংরেজী ভাষায় যোগযোগের দক্ষতা, ম্যানেজমেন্ট, বায়ারদের সন্তুষ্ট করা
একজন মার্চেন্ডাইজার কোন ধরনের শিল্পে কাজ করেন?
বাংলাদেশে মূলত টেক্সটাইল শিল্পে মার্চেন্ডাইজাররা কাজ করেন। রেডিমেড গার্মেন্টস, নিটিং , ফ্যাব্রিকসহ সকল ধরনের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে মার্চেন্ডাইজার থাকে। এছাড়া পোশাক রপ্তানি প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষ বায়িং হাউজ মার্চেন্ডাইজারদের মূল কর্মক্ষেত্র।
একজন মার্চেন্ডাইজার কী ধরনের কাজ করেন?
মার্চেন্ডাইজারদের মূলত দুটি কাজ ফ্যাক্টরি ও বায়িং হাউস ভিজিট। বায়িং হাউসে কাজের পরিধিটা অনেক বড়। বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজাররা বিদেশি বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করে পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দেন এবং বায়ার রাজি হলে কোম্পানির প্রোডাক্টের স্যাম্পল দেখানো হয়। প্রোডাক্ট তৈরিতে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হবে এবং এর মান কতটুকু টেকসই হবে, প্রোডাক্টের সব গুণাগুণ তুলে ধরে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পছন্দ হলে দামের বিষয়টি চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র করা হয়। বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাক্টরিতে প্রোডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত পুরো কাজ দেখতে হয় মার্চেন্ডাইজারদের। ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজাররা বায়িং হাউসের মাধ্যমে পাওয়া কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি ও পণ্যের মানের বিষয়টি দেখভাল করেন। বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজারদের কাছে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইমপোর্ট ও এলসি খোলার কাজও করেন তাঁরা । অর্থাৎ Product Development থেকে শুরু করে planning, sourcing, sampling, costing, coordination এবং communication এর কাজগুলো একজন মার্চেন্ডাইজারই সম্পাদন করে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে, একটি অর্ডারকে বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তার সব কিছুই একজন মার্চেন্ডাইজারকেই করতে হয়। মূল দায়িত্বের পাশাপাশি বায়ারদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, প্রতিনিয়ত কাজের রিপোর্ট তৈরি করা এমনকি অনেক সময় উৎপাদন খরচ কমাতে বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ দিতে হয়।
একজন মার্চেন্ডাইজারের যোগ্যতা কী?
মার্চেন্ডাইজার হওয়ার জন্য যেকোনো বিষয়ে স্নাতক হলেই চলে। তবে অগ্রাধিকার পায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফ্যাশন/টেক্সটাইলের যেকোনো বিষয় এ এমবিএ ডিগ্রীধারীরা। যেমন সি এন্ড এ বায়ার সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার পদের জন্য যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা এপারেল মার্চেন্ডাইজিং/ফাশন ডিজাইনিং এ এমবিএ ডিগ্রীধারীদের অগ্রাধিকার দিবে।
একজন মার্চেন্ডাইজারের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হতে হবে;
- টেক্সটাইল শিল্পের সকল প্রক্রিয়া ও কাঁচামালের দাম নিয়ে ধারণা রাখতে হবে;
- আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট শিপিং, কাস্টমস, বায়িং পলিসি, ব্যাংক এর কাজে দক্ষ হতে হবে;
- অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ ও পরিকল্পনায় দক্ষ হতে হবে;
- পণ্যের মান ও গুণাগণ বর্ননা করে বায়ারদের কনভিন্স করার দক্ষতা থাকতে হবে;
- একনাগাড়ে পরিশ্রম করার মানসিকতা ও সামর্থ্য থাকতে হবে।
একজন মার্চেন্ডাইজার পড়াশোনা কোথায় করবেন?
স্নাতক শেষে মার্চেন্ডাইজিংয়ের ওপর কোর্স করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদি কোর্স আছে। যেখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হলো :
- বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি);
- ম্যার্চেন্ডাইজারস ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এমআইএফটি);
- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি;
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি);
- শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে এক বছরমেয়াদি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, দুই বছরমেয়াদি এমবিএ করার সুযোগ আছে।
একজন মার্চেন্ডাইজারের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?
বাংলাদেশে বর্তমানে শুধু গার্মেন্টস এর সংখ্যা ৭ হাজার। প্রতিটি গার্মেন্টেস এ ৪-৮ জন করে মার্চেন্ডাইজার প্রয়োজন। এছাড়া গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির জন্য প্রায় ২ হাজার বায়িং হাউজ গড়ে উঠেছে। একটি বায়িং হাউজের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজটি করে থাকেন একজন মার্চেন্ডাইজার। প্রতিটি বায়িং হাউজে গড়ে ৪ জন করে মার্চেন্ডাইজার কাজ করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে রেডিমেড গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি আর বায়িং হাউজ এর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মার্চেন্ডাইজারদের কাজের সুযোগ।
একজন মার্চেন্ডাইজারের মাসিক আয় কেমন?
শুরুতে একজন মার্চেন্ডাইজার ট্রেইনি হিসেবে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পান। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে বাড়ে বেতনও। চার থেকে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মার্চেন্ডাইজারের বেতন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার বা মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। এ পদের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে ৬-১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতাও দেওয়া হয়।
ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন মার্চেন্ডাইজারের?
এ পেশায় শুরুতে অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার হিসেবে নিয়োগ হয়। এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী মার্চেন্ডাইজার, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার এবং মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি হয়। মার্চেন্ডাইজার ম্যানেজার পদের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে ৬-১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। বায়ারদের সঙ্গে কথা বলে কে কত সহজে কাজটি আদায় করতে পারে, তার ওপর নির্ভর করে পদোন্নতি। মূলধন আর ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় দক্ষ হলে নিজের বায়িং হাউজ খুলে ব্যবসা শুরু করার সুযোগও আছে এই সেক্টরে।
Discussion about this post