অনলাইন ডেস্ক
আপনার কর্মদিবসের প্রথম কয়েক মিনিট পরবর্তী আট ঘণ্টার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আপনি দেরি করে অফিসে পৌঁছান এবং আপনার ইনবক্সের অসংখ্য মেসেজের মধ্যে ডুবে যান তবে আপনার কাজে মনোনিবেশ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে।
অফিসে কর্মদিবসের প্রথম ১০ মিনিটে এ ধরনের ৯টি ভুল অনেকেই করে থাকেন বলে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা নিউজ পোর্টাল বিজনেস ইনসাইডার।
জেনে নিন, কোন ৯টি বিষয় আপনাকে প্রথম ১০ মিনিটেই ফাঁদে ফেলতে পারে, যার ফলে আপনার পুরো দিনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* দেরিতে পৌঁছানো
আপনার কর্মদিবস শুরুর আগেই এর ফলে আপনার বিপত্তি ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দেরিতে অফিসে পৌঁছান তাদেরকে বস কম রেটিং দেন, এমনকি যদি তারা সবার পরে অফিস ত্যাগ করেন, তারপরেও কম রেটিং পান।
এটা খুব দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। তাই আপনার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব অফিসে পৌঁছানো।
* সহকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলা
আপনি নিজের এবং আশেপাশের সবার জন্য কমর্ময় পরিবেশ তৈরি করতে পারেন শুধু কয়েক মিনিটের জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে সামান্য আলোচনা করে।
যেমন ধরুন, আপনি দলনেতা আপনি কাজের শুরুতেই আপনার সহকর্মীদের hi, hello ইত্যাদি না বলেন তবে আপনার প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা থাকলেও আপনার সহকর্মীরা আপনাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করবে না।
এ ব্যাপারে লিন টেইলর, একজন কর্মস্থান বিশেষজ্ঞ তার ‘Tame Your Terrible Office Tyrant: How to Manage Childish Boss Behaviour and Thrive Your Job’ নামক বইয়ে বলেছেন, ‘এমনকি আপনি যদি পরিচালক নাও হন তবুও আপনি যদি আপনার ডেস্কে নীরবভাবে বসে থাকেন তাহলে আপনি আপনার সহকর্মীদের থেকে পৃথক থেকে যাবেন।’
* কফি পান করা
ঘুম থেকে জেগে উঠে কফি পান করা না হলে আমরা অফিসে ঢোকা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব কফি পান করি। কিন্তু গবেষণায় জানা যায় যে, কফি পান করার শ্রেষ্ঠ সময় সকাল ৯:৩০ টার পর।
এটা এজন্যে যে, স্ট্রেস হরমোন করটিসল, যা শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে তা সকাল ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে সর্বাধিক মাত্রায় তৈরি হয়। যদি এ সময় কফি পান করা হয় তাহলে শরীর অল্প পরিমানে করটিসল তৈরি করে যার ফলে আপনার শরীর ক্যাফেইন এর ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
সকাল ৯:৩০ টার পর শরীরের এই করটিসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে তাই এই সময়ে আপনার শরীরকে চাঙ্গা করতে এক কাপ কফির জুড়ি নাই।
* ইনবক্সের সকল ই-মেইলের উত্তর দেয়া
একবার আপনি আপনার চেয়ারে বসলে একের পর এক ই-মেইল বা বার্তা আসতে থাকবে।
তাই একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক স্পিকার এবং ‘You Can’t Be Serious! Putting Humor to Work’ বইয়ের লেখক মাইকেল কের বলেছেন, ‘কর্ম দিবসের প্রথম ১০ মিনিটে ই-মেইলগুলোকে ভালো করে দেখতে হবে এবং এর মধ্যে যেগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর উত্তর দিতে হবে।’
কের আরো বলেছেন, ‘যখন আপনি ই-মেইলগুলো চেক করে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজগুলোর উত্তর দিচ্ছেন কারণ সেগুলোর উত্তর না দিলে তা আপনার ও আপনার কর্মপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। একই সঙ্গে বাকি ই-মেইলের উত্তর পরবর্তী সময়ে দিবেন বলে রেখে দিচ্ছেন তখন আপনার মনে হতেই পারে যে আপনার কাজ প্রায় শেষের পথে।’
* কাজের সময়সূচি তৈরি না করে কাজ আরম্ভ করা
লিন টেইলর বলেছেন, কাজে উদ্যোগী হওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই ওই দিনের কাজের পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে, দিনটি কিভাবে শুরু হবে এবং দিনের বিশেষ বিশেষ কাজগুলো কি কি সেগুলো লিখে রাখতে হবে। তাছাড়া দিনটি সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য ক্যালেন্ডার দেখতে হবে।
আপনাকে দেখতে হবে ওই দিনে আপনি কি কি কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন এবং তার জন্য আপনাকে কোনো কল বা কনফারেন্স এর প্রস্তুতি নিতে হবে কি না। অন্যথা, যখন কোনো মিটিং এর মাত্র ১০ মিনিট আগে আপনাকে জানানো হবে তখন আপনি কিছুই করতে পারবেন না, এমনকি তখন আপনি প্রকল্প প্রস্তাব (প্রজেক্ট প্রোপোজাল) লিখতে গিয়েও সমস্যায় পড়বেন।
আরও পড়ুন-বসের মন জয় করার উপায়
* প্রথমে সহজ কাজগুলো বেছে নেওয়া
গবেষণা বলছে, আপনার কর্মশক্তি ও ইচ্ছাশক্তিই আপনার সমস্ত দিনের কাজ করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব করার চেষ্টা করতে হবে।
কিছু মানুষ এই কৌশলকে মার্ক টোয়েনের ‘Eating the frog’ উদ্ধৃতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার ব্যাখ্যা দাড়ায়, ‘সকাল সকাল একটি জীবন্ত ব্যাঙ খেয়ে ফেললে তার থেকে আর খারাপ কিছু সারা দিনে হতে পারে না।’ আপনি দিনের শুরুতেই যদি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলেন তাহলে আপনার বাকি দিনের কষ্ট কমে যাবে।
* অনেক কাজ একসঙ্গে করা
যেহেতু দিনের শুরুতে আমাদের কর্মশক্তি বেশি থাকে তাই অনেকেই মনে করে এ সময় সে অনেক কাজ একসঙ্গে করতে পারবে।
কিন্তু গবেষণা বলে, অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করতে গেলে সেটি আপনার কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই আপনাকে এক সময়ে মাত্র একটি কাজই করতে হবে। আপনি যদি একাধিক কাজের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আপনার কর্মদিবস আরম্ভ করে থাকেন তাহলে আপনার উচিত হবে দিনটিকে নতুন করে শুরু করে একাধিক কাজের পরিবর্তে, যেকোনো একটি কাজকে প্রথম ১০ মিনিটের জন্য বেছে নেওয়া এবং সেটির ওপর সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ দেয়া।
* নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করা
হতে পারে আপনি অফিসে আসার পথে কোনো বিরক্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন অথবা গত রাতে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে আপনার ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু সেই কারণে আপনার বর্তমান কাজের ওপর কোনো প্রভাব পড়তে দিলে চলবে না।
লিন টেইলর এসব নেতিবাচক চিন্তা থেকে সতন্ত্র থাকতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, কাজের সময় ব্যক্তিগত বিষয়কে দূরে রাখতে। এসবের প্রভাব অফিসের কাজের ওপর পড়তে দেওয়া যাবে না। যদি প্রয়োজন হয় পরবর্তীতে সেগুলো নিয়ে ভাববেন।
* মিটিং বা বৈঠক করা
সকালের বৈঠক বা মিটিং আপনার জ্ঞান কমিয়ে দিতে পারে।
লেখক লরা ভেন্ডারকাম এর ‘What the Most Successful People Do Before Breakfast’ নামক বইয়ের তথ্যানুযায়ী, সকালে এমন কোনো কাজ করা উচিত, যা করতে একাগ্রতা ও মনোযোগ প্রয়োজন। যেমন লেখালিখি।
যদি আপনি আপনার বস ও সহকর্মীদের সঙ্গে মিটিং বা বৈঠক করতে চান তাহলে অবশ্যই দুপুরের সময় বেছে নিন নতুবা আপনার অনেক মানসিক শক্তি প্রয়োজন হবে।
Discussion about this post