জেরি
ইয়াং ইয়াহু!-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ের সমাবর্তনে তিনি এই অনুপ্রেরণা মূলক বক্তব্যটি দেন
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই চ্যান্সেলরকে।
সম্মানিত অতিথি, শিক্ষকেরা ও
গ্র্যাজুয়েটদের আলোহা (শুভেচ্ছা)! অনেক
কঠিন পড়াশোনা শেষ করে, অসংখ্য
পরীক্ষা দিয়ে মনেপ্রাণে পড়াশোনা
করে, আজ যারা এ
পর্যায়ে এসেছে, তাদের সামনে
আমাকে কথা বলার সুযোগ
দেওয়া হয়েছে—এর কারণ
শুধু এই নয় যে
আমি এ এলাকার পুরোনো
বাসিন্দা। এর কারণ
হলো ইয়াহুর সঙ্গে আমার
সম্পৃক্ততা।
১৯৯৪ সালে আমি যখন
আমার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশলের ওপর
পিএইচডি গবেষণা করছিলাম, তখনই
আমি ইয়াহু শুরু করি। মানে, আমার
আসলে পিএইচডি ডিগ্রি নেই।
এর পরও আমি সম্মানসূচক
ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে যাচ্ছি
আজ কোনো গবেষণা কাজ
ছাড়াই! অসাধারণ!
আজ আমাকে ডাকা হয়েছে
তোমাদের সঙ্গে কিছু সময়
কাটানোর জন্য। নিজের
জীবনের কিছু বিশেষ অভিজ্ঞতা
তোমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে
নেওয়ার জন্য। আজ
আমি তোমাদের পাঁচটা বিশেষ পরামর্শ
দেব।
প্রথমটি হলো: পত্রিকার শিরোনাম দেখেই নিরাশ হবে না
‘বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েই চলেছে’,
‘চাকরির বাজার কমে আসছে
অর্থনৈতিক মন্দায়’। তোমরা
মনে করছ, এসব হেডলাইন
হয়তো আজকের পত্রিকার।
কিন্তু আসলে তা না,
এগুলো সেই ১৯৯০ সালের
কয়েকটি পত্রিকার হেডলাইন। সে
সময় আমিও মনের মতো
চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমি
মার্ক টোয়েনের একটা কথা কখনো
ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন,
‘মানুষ সুখী হওয়ার জন্য
একেবারে শূন্য থেকে অজানার
পথে পাড়ি দেয়।’
একটা বিষয় সব সময়
মনে রাখবে তোমরা, তা
হলো শূন্য থেকেই অসীমের
শুরু হয়। তোমরা
বরং একদিক থেকে ভাগ্যবান
যে, এই অর্থনৈতিক মন্দার
সময় পড়াশোনা শেষ করে চাকরির
বাজারে ঢুকছ। এ
কারণেই তোমরা সুযোগ পাবে
অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে অংশগ্রহণ করার।
দ্বিতীয় কথা: জীবনে যা করবে তাই-ই ফেরত পাবে
শুধু মেধা থাকলেই সাফল্য
পাওয়া যায় না।
সাফল্য পেতে প্রচুর পরিশ্রম
করতে হয়। ম্যালকম
গ্ল্যাডওয়েল তাঁর বইয়ে লিখেছেন,
‘যেকোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে
হলে ওই বিষয়ে অন্তত
১০ বছর অথবা ১০
হাজার ঘণ্টা সময় দিতে
হবে।’ একজন শিল্পী
আর আরেকজন গুণী শিল্পীর
মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দেয়
কিন্তু এই পরিশ্রমই।
আমি তাইওয়ান থেকে আমার মায়ের
হাত ধরে ছোটবেলায় আমেরিকায়
এসেছিলাম। ১০ বছর
বয়সী আমি তখন শুধু
‘শু’ মানে জুতা কথাটি
ইংরেজিতে বলতে পারতাম।
কিন্তু আমি মোটেই ভেঙে
পড়িনি। আমি অনেক
পরিশ্রম করতাম, অনেক বেশি
পড়াশোনা করতাম। হ্যাঁ,
এটা সত্যি, এর অনেক
দিন পর ইয়াহু শুরু
করার সময় ভাগ্যের সহায়
অবশ্যই পেয়েছিলাম। কিন্তু এই
ভাগ্য সহায় হয়েছিল আমার
প্রবল পরিশ্রমের কারণেই। সেই
সঙ্গে আমার পরিবার ও
বন্ধুদের উৎসাহ তো ছিলই। এমনকি আমি
যখন আমার মাকে বললাম,
আমি আর পিএইচডির গবেষণা
করব না, ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের
একটা কাজ শুরু করব,
তখন তিনি আমার এই
সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সন্দিহান থাকলেও কোনো আপত্তি
না করে সমর্থন দেন। আর এত
বছর পর আমার সেই
সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অভিযোগ
করার সুযোগও এখন খুঁজে
পান না আমার মা।
তৃতীয় কথা: যত প্রতিকূলতাই আসুক, নিজের কাছে যা ভালো মনে হয়, তাই-ই করো
আমি আর ডেভিড ফ্লিও
তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিসের
কাজ করছিলাম। আমাদের
গবেষণার বিষয় ছিল, কীভাবে
কম্পিউটার চিপস আরও শক্তিশালী
করা যায়। সে
সময়ই আমরা ওয়েব জগৎ
সম্পর্কে জানতে পারি।
আর সত্যি সত্যিই এর
প্রেমে পড়ে যাই।
আমরা আমাদের গবেষণার সব
কাজ ফেলে রেখে ইয়াহু
তৈরিতে লেগে পড়ি।
আমরা কখনো ভাবিনি, একদিন
ইয়াহু এত বড় একটা
বিজনেস জায়ান্ট হয়ে যাবে।
তখন আমাদের এটা ভেবে
মজা লাগত যে কত
মানুষ আমাদের ইয়াহু ব্যবহার
করছে! খুবই ভালো লাগত
তখন।
যদি দেখো, কোনো কিছু
তোমার ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে,
অথচ এটা তোমার সাধ্যের
বাইরে হবে, তাহলে একটাই
উপদেশ—সেই কাজটি অবশ্যই
করো, প্রচুর পরিশ্রম করে
হলেও।
চতুর্থ কথা: বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে হবে
বিশ্ব ভ্রমণ করে যেমন
বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানা
যায়, তেমনি ইন্টারনেটে লগইন
করেও তা জানা যায়। পৃথিবী দেখতে
হবে, জানতে হবে মানুষের
ধর্ম, সংস্কৃতি সম্পর্কে। সুতরাং বেরিয়ে
পড়ো, পৃথিবীটা দেখো। পৃথিবীকে
চেনো, পৃথিবীর মানুষকে জানো। মনীষী
অগাস্টিন বলেছেন, ‘পৃথিবী হলো একটা
বিশাল বই, আর যারা
পৃথিবী ঘুরে দেখেনি, তারা
এই বইয়ের শুধু একটা
পাতা পড়েছে।’
পাঁচ নম্বর কথা: জানার কোনো শেষ নেই
জানার কোনো শেষ নেই—তাই সবকিছু সম্পর্কেই
জানতে হবে। যত
জানবে জীবনের সফলতার পথে
তত এগিয়ে যাবে।
আমি কলেজে পড়ার সময়
মুঠোফোন ছিল না, ইন্টারনেট
ছিল না। ভাবতেও
অবাক লাগে, তখন কীভাবে
দিন পার করতাম, পড়াশোনা
করতাম! আমার দুটো ছোট
মেয়ে আছে। আকাশ
কেন নীল, সেটা জানার
জন্য ওরা আর আমাকে
জিজ্ঞেস করে না।
কারণ, এখন ওদের হাতে
আছে ইন্টারনেট। দুনিয়া এখন
ওদের নখদর্পণে। কোনো কিছু
না জানার অজুহাত ওরা
আর এখন দিতে পারবে
না।
গুপ্তধনের ভান্ডার তোমাদের সামনে! তথ্যপ্রযুক্তি পাল্টে
দিচ্ছে দুনিয়াকে। তোমাদের হাতের
কাছে কী আছে, সেটা
তোমরা বুঝতেই পারছ।
তোমরা জানার আগ্রহ কখনো
হারাবে না। জানতেই
থাকবে, শিখতেই থাকবে।
শেষ এবং সবচেয়ে জরুরি কথা: জীবনটাকে হালকাভাবে নাও
তোমরা কি জানো, ‘ইয়াহু’
নামটা আমরা কোথা থেকে
পেয়েছি? যদি ডিকশনারিতে খুঁজে
দেখো, তাহলে এর অর্থ
পাবে ‘নেতিবাচক অন্য রকম কিছু’। আমি আর
ডেভিড ফ্লিও তো আমাদের
থিসিসের কাজ ছেড়ে এ
রকম কিছুই করছিলাম ইয়াহু
তৈরির সময়। তাই
আমরা এটার নাম দিয়েছিলাম
‘ইয়াহু!’ এমনকি এখনো আমাদের
ইয়াহু অফিসের সাজসজ্জা দেখলে
যে কেউ অবাক হবে। একেবারে হালকা
চিন্তাভাবনা নিয়ে সাজানো আমাদের
অফিস। আমি মনে
করি, জীবনটাকে যদি হালকাভাবে নিতে
না পারো, তবে তুমি
জীবনটাকে নষ্ট করছ।
আজ থেকে তোমাদের নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু হচ্ছে। সামনের জীবনটা অনেক সুন্দর। কিন্তু তোমাদের মনে নিশ্চয় অনেক জিজ্ঞাসা আর সংশয় রয়েছে। জীবনটা কী, সেটা জানার চেষ্টা রয়েছে। তাহলে তোমাদের বিখ্যাত মনীষী রালফ ওয়ালডো এমারসনের একটা কথা শোনাই, ‘জীবন হলো অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয়ের সমন্বয়, যে বিষয়গুলো জানতে পুরো জীবন পার করতে হবে।’
তাহলে আর ভাবনা কিসের! জীবন তো অনেক বড়! তোমার দায়িত্ব হলো এই জীবনের অচেনা-অজানা পথে হেঁটে যাওয়া। ভাবনামুক্ত থাকো, শিখতে থাকো, জানতে থাকো। তবে জীবনের এ যাত্রায় তোমার কাছের মানুষদের কথা কখনো ভুলে যেয়ো না। কারণ, তারা জানে তুমি কে, তুমি কী করতে পারো। তুমি তাদের কাছে অনেক কিছু। জীবনের পথে যাদের পাশে পেয়েছ তাদের কখনো ভুলে যেয়ো না।
এবার তাহলে বিদায় জানাই গ্র্যাজুয়েটদের। ভালো থাকো। মাহালো! (ধন্যবাদ)
Discussion about this post