অনেকেই হয়তো ভাবেন, তরুণ বয়সে সিইও হওয়া যায় না। মানুষ সিইও হয় সারা জীবনের পরিশ্রমের পর। কিন্তু এটা কি আসলেই সত্যি? আসলেই কি একজন সফল সিইও হতে হলে সারাজীবন কষ্ট করে যেতে হয়? আর একেবারে বুড়ো বয়সে পৌঁছে তবেই কি সিইও হওয়া যায়? এই ধারণা পাল্টে দেবে আজকের এই প্রতিবেদন। আজকের নিবন্ধে জানতে পারবেন এমন এক যুবকের কথা, যিনি নিজের সফলতাকে অর্জন করতে পেরেছেন মাত্র ২০ বছর বয়সে।
সোহেল দোসী মিক্সপ্যানেলের নামক একটি তথ্য বিশ্লেষক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সিইও। যে কোম্পানিটি মাত্র ১০ বছরে ৳৭৭ মিলিয়ন ডলারের একটি কোম্পানিতে উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে। সোহেল দোসী মাত্র ২০ বছর বয়সে এই কোম্পানির সিইও হন। সিইও হবার আগেই তিনি কলেজ থেকে বাদ পড়েছিলেন এবং কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে শুধুমাত্র একটি কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেছিলেন।
১০ বছর একজন সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি কী কী অভিজ্ঞতা অর্জন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার কাজের কয়েকটি অভিজ্ঞতা আজকের নিবন্ধে তুলে ধরা হলো।
১. তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে মনে করতাম, আমার জন্য সব কাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাকে সকল কাজেই পারদর্শী হতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একজন মানুষের পক্ষে সকল কাজে পারদর্শী হওয়া সম্ভব নয়। সময়ের সাথে আমি এ বিষয়টি বুঝতে শুরু করি এবং যে কাজে আমি পারদর্শী নই, সে কাজটি করা ছেড়ে দেই। আপনাকেও এ কাজটি করা শিখতে হবে অন্যথায় আপনি উন্নতি করতে পারবেন না এবং এটি আপনার কোম্পানির জন্য ভোগান্তির কারণ হবে।
২. আপনার সিনিয়ররা হয়তো আপনাকে এই পরামর্শটি দেবেন না, তবে আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো: কয়েক বছর পর পর একজন পেশাদার সিইও প্রশিক্ষকের দ্বারা আপনার আপনার কর্মদক্ষতা (৩৬০ডিগ্রি পর্যালোচনার মাধ্যমে) যাচাই করে নিন।
৩. আমি যখন একসাথে একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছিলাম তখন খুবই বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এ অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, একজন ব্যক্তির পক্ষে কখনো একসাথে একাধিক দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই একসাথে সকল দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা বাদ দিয়ে প্রতি বছর দুটি বা তিনটি দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে।
৪. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নতুন সিইও হিসেবে কাজে যোগদানের পর দলগত কাজে বেশি মনোযোগী হতে হয় এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আপনি যে দলগত কাজে বেশি মনোযোগী ও দলকে একত্রিত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন তা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করুন, এতে করে তারা বুঝতে পারবেন আপনি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
৫. সময়ের সাথে সাথে আপনার মনে হতে পারে, মিটিংয়ের কারণে শুধু অযথা সময় নষ্ট হয়। তবে মনে রাখবেন, বর্তমানে আপনার কাজ হচ্ছে মিটিংয়ের মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করা। তাই মিটিংকে এড়িয়ে না চলে, সব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন।
৬. আপনার দলকে এমনভাবে গড়ে তুলুন, যাতে প্রয়োজনে সময় আপনাকে ছাড়াই তারা সঠিক সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। দলের অন্যদের ক্ষমতায়ন ফলে আপনার উপর কাজের চাপ কম পড়বে।
৭. অনেক সময় কোম্পানির কারো সাথে আপনার মত বিরোধ হতে পারে। তবে সবসময় যে আপনি সঠিক থাকবেন তা কিন্তু নয়। অনেক সময় আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আবার কারো সাথে রূঢ়ভাবে কথাও বলতে পারেন। এসব কারণে অনেকেই আপনাকে অপছন্দ করতে পারে। আপনার ভুলের কারণে কারো সাথে মত বিরোধ হলে, পরে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সব সময় দুঃখ প্রকাশ করে পরিস্থিতি সামলানো যায় না। তাই কারো সাথে রূঢ়ভাবে কথা বলার আগে এ বিষয়টি মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
৮. মিটিং আপনার কাজ হচ্ছে ৯০% শোনা ও ১০% কথা বলা। মিটিংয়ের মাঝখানে কথা বললে অনেক সময় মনোযোগ হারিয়ে যায়, আবার বক্তার কথার মাঝখানে বার বার প্রশ্ন করলে তিনি বিরক্ত হতে পারেন। সিইও হিসাবে সাড়ে নয় বছর কাজ করার পর, আমি সবচেয়ে উত্তম পন্থা খুঁজে বের করতে পেরেছি তা হচ্ছে মিটিং চলাকালীন সময়ে সবকিছু লিখে রাখা। এতে করে মিটিংয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া যায়। এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন থকলে সেটিও লিখে রাখুন এবং বক্তার কথা বলা শেষ হলে তাকে প্রশ্ন করুন।
৯. একজন ভালো পরামর্শদাতা খুঁজে বের করুন। এমন কাউকে পরামর্শদাতা হিসেবে খুঁজে নিন, যিনি আপনার কঠিন সময়ে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবেন, আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন এবং যার কথায় ও অনুপ্রেরণায় আপনি আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
১০. আমরা সবাই মানুষ এবং অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকি আবার কাজের চাপে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগি। এক্ষেত্রে আপনার মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে একজন সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। আমিও এক সময় মানসিক চাপ মোকাবেলার জন্য সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিয়েছিলাম। অনেকেই মনে করেন, সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে থেরাপি নেওয়া খারাপ কিছু, এমনকি আমিও তাই মনে করতাম। তবে ভুল ছিলাম। আমার জীবনে এই কাজটি আমি যদি আরো আগে করতাম তাহলে অনেক ভালো হত।
১১. সবশেষে বলব, কঠোর পরিশ্রম করতে থাকুন। আপনি আপনার অতীতের ভুল ঠিক করতে পারবেন না তবে ভবিষ্যতে আপনি আরও উন্নতি করতে পারবেন। হতাশ হবেন না, চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন।
Discussion about this post