প্রযুক্তির উৎকর্ষে যখন মেতে উঠেছে সারাবিশ্ব ঠিক তখন বাংলাদেশের কিছু তরুণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলছে রোবটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দিকে। স্বপ্ন দেখছে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার।
এমন সব তরুণদের মত এক মেধাবী তরুণ ফরহান ফেরদৌস যিনি রোবটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছেন এবং ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্কোর করেছেন সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে।
বাংলাদেশের গ্রামের মাটিতে বেড়ে উঠা মেধাবী সন্তানরা আজ সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বার বার প্রমান করছে বাংলাদেশের মাটি যেমন সোনার থেকে খাটি তেমনি এ দেশের মেধাবীরা সারা বিশ্বের কাছে দামী সম্পদ। বাংলাদেশের দক্ষিণে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহন করে এমন এক প্রযুক্তিবিদ যিনি বাংলাদেশে থেকে প্রথম রোবটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর উপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
শুধু তাই নয় তিনি জাপানের ঊচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের ভিতর সর্বোচ্ছ স্কোর করেন। এই তরুণ প্রকৌশলী ও গবেষক হলেন ফরহান ফেরদৌস। তিনি বর্তমানে জাপান এ একটি প্রতিষ্ঠান রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। এছাড়া জাপান বাংলাদেশ রোবটিক্স ও অ্যাডভান্স টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান হিসাবে জাপান থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার সংস্থা সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ করছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিদ্যালয়ে রোবোটিকস, আইওটি, ড্রোন, মেশিন লার্নিং, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সম্পর্কিত এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনও করছে। তিনি জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন এবং রোবোটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং আন্তর্জাতিক বইয়ের অধ্যায়ে গবেষণা পত্র লিখেছেন।
শৈশব এবং শিক্ষা জীবন:
ছোট বেলায় চঞ্চল এবং দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম আমি। পিতা মো. আব্দুর রউফ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর এডভোকেট এবং মাতা নাসিমা সুলতানা একজন লেখিকা। ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান ও নতুন কিছুকে জানার প্রবল আগ্রহ থাকায় নূতন কিছু নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা চলে আসে আমার। মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সুন্দর করে এমন উপকারী কিছু তৈরী করা হয়ে ওঠে ধ্যানের মত। বলছিলনে ফরহান তার শৈশব সম্পর্কে।
বাবার কর্ম স্থলের পরিবর্তনের জন্য ঢাকা চলে আসি আমরা। ছাত্র জীবনে নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পরই ভর্তি হন সরকারি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে মেকানিক্যালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং- এ মেধা তালিকায় ৩য় স্থান অর্জন করেন।
এরপর শুধু রোবটিক্স নিয়ে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কথা ভেবে ভর্তি হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। তখন শুধু বাংলাদেশ একমাত্র রোবটিক্স নিয়ে পড়ার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে থেকে তিনি বিএসসি ইন মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ ২য় স্থান অর্জন করেন।
এর পরেই উচ্চ শিক্ষার জন্য চেষ্টা করতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অবশেষে বাংলাদেশে ইতিহাসে এই মেধাবী তরুণ রোবটিক্স বিষয়ক গবেষণা সুযোগটি পান তিনি। জাপান এডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছেন ।
কর্ম জীবন:
তিনি বর্তমানে জাপানে একটি প্রতিষ্ঠানে রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি জাপান এডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিত গবেষণা করেছেন। একই সাথে জাপান বাংলাদেশ রোবটিক্স ও অ্যাডভান্স টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান হিসাবে জাপান থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার সংস্থা সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ করছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিদ্যালয়ে রোবটিক্স, আইওটি, ড্রোন, মেশিন লার্নিং, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সম্পর্কিত এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনও করছে। শুধু তাই নয় বিদেশের মাটিতে থেকে দেশের প্রতি তার টান এবং ভালবাসার কারণে বাংলাদেশের নানা সংগঠন এবং সংস্থার সাথে তিনি বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমান গবেষণা:
বর্তমান গবেষণায় আসার আগে তার গবেষণার সূচনা হয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শেষ বর্ষের প্রকল্প নিয়ে। একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বানাতে চেয়েছিলেন রকেটের মডেল। কিন্তু তাদের সুপারভাইসর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করায় তার সে প্রকল্প অসমাপ্ত থেকে যায়। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্যও সেই গবেষণা থেমে থাকে না ফরহানের চেষ্টা।
বর্তমানে রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। রোবটিক্স, কন্ট্রোল সিস্টেম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডানামিক্স তার গবেষণার মুখ্য বিষয়। তার কাজ এবং গবেষণার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সকলের কাছে একজন পরিচিত প্রিয় মুখ। খুব অল্পদিনেই বিদেশী প্রফেসর, গবেষক এবং ছাত্রদের সাথে কাজ করে পরিচিতি লাভ করেছেন এবং সুনাম অর্জন করছেন একজন বাংলাদেশী হিসাবে।
তার পরিকল্পনা:
ছোট বেলা থেকে সকলেরই একটি ইচ্ছা জাগে নাসায় জব করা ঠিক এমনটি হয়েছিল আমাদের বাংলাদেশী ফরহানের। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখে আসছে নাসা কিংবা জাপানের বিখ্যাত কোম্পানি যেমন Toyota, Sony, HONDA, Fujitsu এর মত যায়গাগুলোতে একজন গর্বিত বাংলাদেশী হিসাবে কাজ করার। সেই ইচ্ছাই তাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
তবে এখন তিনি বাংলাদেশর জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে আর অনেক বেশি কাজ করতে চান । এ জন্যই নিজেকে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষক হিসাবে গড়ে তুলছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বানাতে চান নতুন নতুন সব রোবট এবং দৈনন্দিন জীবনে নিয়ে আসতে চান প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি ছোঁয়া।
সঠিক মূল্যায়ন পেলেই তিনি দেশে তরুণদের নিয়ে নাসার মত গবেষণার কাজগুলো করতে চান। এ ছাড়া জাপানীদের মত বাংলাদেশী তরুণদের হাতে কলমে প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চান। এজন্য সব সময় জাপান থেকে চেষ্টা করছেন বাংলাদেশী তরুণদের পাশে থাকার জন্য।
তরুণদের জন্য তার মতামত:
আমি স্বপ্ন দেখেছি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের তাই অনেক আগেই ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছি রোবটিক্স। গবেষণা শুধু বিজ্ঞান কেন্দ্রিক হলে হবে না সেটি নিজের বাস্তব জীবনে ও কাজে লাগাতে হবে। আমি প্রথমে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে রোবটিক্স নিয়ে পড়ার আগে গবেষণা করছিলাম ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ হবে রোবট এবং অটোমেশান নির্ভর।
তাই আজ এই যায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। নূতনদের জন্য বলব– “বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তির বাণিজ্যিক কেন্দ্র আর তরুণরা দিবে বিশ্ব নেতৃত্ব”। তাই এইসব সেক্টরে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও দেশে এখনও পর্যন্ত এই সব নিয়ে পড়ালেখার জন্য ভাল সুযোগ সুবিধা নাই। দেশে রবোটিক্সে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করার মত ল্যাব নাই, দক্ষ শিক্ষকের অভাব।
এছাড়া এসব বিষয়ে বাজারে ভাল বই বা গাইড ও পাওয়া যায় না। তবে গুগল, ইঊটিঊব এবং ব্লগ থেকে নিজেদের কষ্ট করে শিখতে হবে। যোগাযোগ রাখতে হবে বহিঃর বিশ্বের সাথে, গড়ে তূলতে হবে একটি কমোনিউটি। আমাদের সংস্থা রোবোটিকস, ড্রোন, আইওট, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত এবং দীর্ঘ কোর্স খুলছে।
নতুন নতুন গবেষণা করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে হবে। সর্বপরি এই সকল কাজের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে তাহলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে- বলছিলেন জাপান থেকে ফরহান ফেরদৌস।
Discussion about this post