নাহিদ হাসান, ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট
আপনার ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর রেস্পনসিবিলিটি কার? আপনারই হবার কথা । ঠিক যেমন ভাবে আমার ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের রেস্পন্সিবিলিটি আমার।
আমার মত আপনারাও অথবা আপনাদের মত আমিও প্রতি বছরের শুরুতেই ভাবি, এই বছর কাজ করে একদম ফাটাইয়া ফেলবো। গত বছরের ভুল গুলো এইবার আর করবো না। অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ হব। কিন্তু বেশির ভাগ সময় আর সেটা হয়না।
মনে করে দেখুন, এ বছরের শুরুতেও আপনি ডিসাইড করেছেন এই বছর অনেক কিছুই করবেন, হয়ত কিছু কাজ শুরু করেও দিয়েছেন। তবে অনেকেই সেই স্পীডটা ধরে রাখতে পারেননি। ১ তারিখে যেই গতিটা ছিল, তা কমে গিয়েছে, সামনে হয়ত আরো কমবে।
এই গতি কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারন আছে, অনেক অনেক কারন আছে যা আমাদের ফোকাস নষ্ট করে দেয়। তবে সবচাইতে বেশি ঝামেলা করে নিচের দুইটা অথবা দুইটার মধ্যে যে কোন একটা কারন।
১) গোল সম্পর্কে স্পেসিফিক ধারনা না থাকা
২) ধারনা থাকলেও তার জন্য ডিটেইল একশন প্লান লিখে না রাখা
এই পোস্ট থেকে এই ব্যাপারে আপনারা ডিটেইল ধারনা পাবেন, আর তা পাবার জন্য পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
আমাদের বেশির ভাগ মানুষের গোল সেট করা নিয়ে ভাল ধারনা নেই। আপনি যদি গোল সেট করা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেন দেখবেন একটা টার্ম খুব ঘুরে ফিরে চলে আসে, আর তা হচ্ছে স্মার্ট গোল।
স্মার্ট গোল আসলে কি?
আমি যখন যখন কাউকে প্রশ্ন করি আপনার প্রফেশনাল গোল কি, আমি দেখেছি প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ অনেকটাই ব্রড আকারে উত্তর দেয়। যেমন আমি অনেক বড় মার্কেটার হতে চাই। আমি অনেক বড় বিজনেস স্ট্যাবলিসড করতে চাই ইত্যাদি।
সমস্যা হচ্ছে, বাস্তবিক ভাবে এই ধরনের গোল আসলে এচিভ এবল না। কেননা এখানে মেসারেবল কিছু নেই। কোন ডেডলাইন নেই। আপনি কত বড় মার্কেটার হতে চান? এইটা আপনি আইডেন্টিফাই করবেন কিভাবে যে আপনি অনেক বড় মার্কেটার হয়েছেন। কবে নাগাদ হতে চান?
স্মার্ট গোল বলতে আসলে বুঝানো হয়ঃ
- S=Specific
- M= Measurable
- A=Achieve able
- R=Relevant
- T=Timely
তারমানে আপনার গোলটা হতে হবে স্পেসিফিক। যা পরিমাপ করা যায়। যেমন আমি এই ২০১৮ সালে ১০ টা নিশ সাইট তৈরি করবো, এবং এই এমাউন্টের সেল জেনারেট করবো।
এটা বাস্তব সম্মত হতে হবে। মাত্র অনলাইন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখলাম, পুঁজি হচ্ছে ২ লাখ টাকা, কিন্তু গোল হচ্ছে ১ বছরে মাইক্রোসফটকে অতিক্রম করবো। এই ধরনের গোল অনেকটা সেই ছোট বেলার ডেইলি পড়ালেখার রুটিনের মত। যেখানে রুটিনে থাকতো, ডেইলি ১৮ ঘন্টার পড়াশুনা হবে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সেই রুটিন মেইন্টেইন করা সম্ভব হত না।
আর আপনার গোল অবশ্যই ডেডলাইন সহ হতে হবে। আজীবনের জন্য গোল সেট করা যাবে না। খুব বড় গোলগুলোকে ছোট ছোট মাইলস্টোনে ভেঙ্গে নিতে হবে। ৫ বছরের গোল গুলোকে প্রথমে বছর অনুযায়ি, তারপর কোয়ার্টার, মাসিক, সাপ্তাহিক এইভাবে ভেঙ্গে নিতে হবে।
কিছু স্মার্ট গোল এর উদাহরন দিতে পারি:
- আমি এই বছর ১০ টি নিশ সাইট বানাবো
- ৫০ টি ক্লায়েন্টকে সার্ভ করবো
- ১০ হাজার ডলারের সেল জেনারেট করবো ইত্যাদি।
গোল ডিসাইড হয়ে গেলে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার পালা।
অ্যাকশন প্ল্যান কিভাবে তৈরি করবো?
যেহেতু গোল সেট হয়ে গেছে, ডেডলাইন সহ। এবার একশন প্লান তৈরি করার পালা। মনে রাখতে হবে, গোল সেট করে বসে থাকলে কিন্তু তা এচিভ করা যাবে না।
এখন যেহেতু আমি আমার গোল এবং তার ব্রেক ডাউন সম্পর্কে পরিস্কার, তাহলে আমার পক্ষে একশন প্লান তৈরি করাটা অতটা কষ্টসাধ্য হবে না।
আমাকে আইডেন্টিফাই করতে হবে, আমার কি ধরনের রিসোর্স লাগছে?
আমার কতটুকু আছে, কতটুকু নেই।
কখন লাগছে?
আমার ইনভেস্টমেন্ট কেপাসিটি কতটুকু?
নোটঃ অ্যাকশন প্ল্যান লিখে ফেলতে হবে, শুধু মাথার মধ্যে থাকলে কিন্তু সেটা নিয়ে আগে বাড়া কষ্টকর। কেননা আপনার চারিপাশে যথেষ্ট বিষয় রয়েছে, যা আপনার মনযোগ নষ্ট করবে। তাই আপনার এমন কিছু দরকার, যা আপনাকে বার বার আপনার গোল মনে করিয়ে দিবে, একশন প্লান এক্সিকিউশনে সাহায্য করবে।
চেকলিস্ট তৈরি করাঃ
পুরো বছর জুড়ে কিছু কাজ থাকবে যা আমাদের রিপিটেড করতে হবে। যেমন ধরেন ব্লগ পোস্ট পাবলিশ। আমি পুরো বছর জুড়েই আপনাদের জন্য লিখে যাব। আমার লিখার সময় এবং ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করার সময় এমন ছোট ছোট অনেক কিছুই আছে যা আমাকে প্রতিবারই করতে হবে। আমরা বেশিরভাগ সময় এই ছোট ছোট কাজ গুলো নিয়ে ভাবিনা। যার ফলে আমাদের ব্রেইনকে বেশি কাজ করতে হয়। যেমন ধরেন, আমার ব্লগ পোস্ট পাবলিশ এর আগে ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হয়। ইউআরএল সেট করতে হয়। এখন আমার কাছে যদি এই ছোট ছোট কাজ গুলোর চেকলিস্ট রেডি থাকে তাহলে আমাদের হয়ত ভুল করার সুযোগ কম থাকবে। ব্রেইনের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কম পরবে। আর এই চেকলিস্ট পুরো বছর জুড়ে ব্যবহার করা যাবে।
আমার ব্লগ পোস্ট পাবলিশড করার চেকলিস্ট আপনাদের জন্য নিচে দিয়ে দিলাম, অনেকের হয়ত কাজে লাগবে।
- টাইটেল এবং কন্টেন্ট পুনরায় রিভাইজ করা।
- ফিচার ইমেইজ তৈরি করা।
- হ্যাডিং গুলোকে পুনরায় চেক করা এবং প্রয়োজন মত মোডিফাই করা।
- ক্যাটাগরি সিলেক্ট করা।
- ইউআরএল সেট করা।
- ট্যাগ বসানো।
- ইন্টারনাল লিঙ্কিং এনশিউর করা।
- রিড মোর বাটন এড করা।
- মেটা টাইটেল এবং ডেস্ক্রিপশন তৈরি করা।
- সোশ্যাল চ্যানেল গুলোতে শেয়ার করার জন্য ছোট ছোট কন্টেন্ট ব্যাচ আকারে তৈরি করা।
- ওপেন গ্রাফ ডাটা এড করা (ক্ষেত্র বিশেষে)।
ডাটা ট্রেকিংঃ
আমরা স্মল বিজনেসে বেশির ভাগ সময় ডাটা গুলোকে সাজাই না। স্টোর করি না। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না, তবে এবার আরো বেশি সিরিয়াসলি ডাটা ট্রেকিং এর জন্য কাজ করবো। ডাটা ট্রেকিং বলতে এমন ভাবার দরকার নেই যে মানুষের সব পার্সোনাল জিনিসগুলোকে ট্রেক করার কথা বলছি।
যেমন ধরুন, আপনি হয়ত জানেননা যে আপনি গত মাসে সর্বমোট কত ঘন্টা কাজ করেছেন। কত গুলো প্রজেক্ট ফেইল হয়েছে? গত মাসে আপনার যাতায়াত বাবদ কতটাকা খরচ হয়েছে। অফিস লাঞ্চ বাবদ আপনার খরচ কেমন? অনেকে হয়ত জানেন, তবে অনেকেই জানেন না।
আমাদের এমন একটা সিস্টেম থাকা দরকার, যা এই ব্যাপার গুলোকে সহজ করে দিবে। অনেকে শুধু মাত্র এক্সেল ব্যবহার করে এই ধরনের টেমপ্লেট তৈরি করে ফেলে। আপনি তাই করতে পারেন, অথবা অনেক ধরনের টুল আছে।
যেমন আপনি কম্পিউটারে থাকা অবস্থাতে কোন ধরনের সাইটে কতটুকু সময় ব্যয় করেন এটা এনালাইজ করার জন্য আপনি রেস্কিউটাইম ব্যবহার করতে পারেন।
আবার সেলস রিলেটেড ডাটা ট্রেক করার জন্য হাবস্পট সিআরএম ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানের একাউন্টস মেইন্টেইন করার জন্য ওয়েভ এপ এবং পার্সনাল একাউন্ট ম্যানেজ করার জন্য পকেট এক্সপেন্স এপটা ব্যাবহার করতে পারেন।
তাই আসুন আজকেই আমাদের এই বছরের স্মার্ট গোল সেট করে ফেলি। তারপর একটা একশন প্লান রেডি করে ফেলি। প্রয়জনীয় চেকলিস্ট গুলো তৈরি করে ফেলি, যা সারা বছর ব্যাবহার করা যাবে। ডাটা ট্রাকিং করি, যা আগামি বছর আমাদের দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
মনে রাখতে হবে, একশন প্লানটাকে যত ছোট করে ভাংতে পারবেন, এক্সিকিউশন তত সহজ হবে। আপনার ব্রেইন সিস্টেমিক কাজ গুলোকে ভাল ভাবে সম্পন্ন করতে পারে। তাই আমাদের জন্য আমাদের কাজের একটা স্ট্রাকচার দার করানো খুবই দরকারি একটা পার্ট।
Discussion about this post