কামাল আহমেদ
বাবাকে বলতেন, জীবনে অনেকগুলো ইচ্ছা থাকলে সফল হওয়া যায় না, সফলতার জন্য যে-কোন একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাও ৷ যে ব্যক্তি পেশায় একজন জেলে, মাঝরাতেই তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে, কারণ তার নদীতে যেতে হবে ৷ আবার যে কৃষক ভোর না হতেই সে জেগে উঠবে কারণ ফজরের আগেই নাঙ্গল ও জোয়াল নিয়ে তাকে ভূমিতে যেতে হবে ৷
আর যে কৃষক ও জেলে হতে চায়, সারারাত একটি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে আজ কি নদীতে যাবো নাকি ভূমিতে? নদীতে গেলে সারারাত মাছ ধরে হাঁটে নিয়ে বিক্রি করতে দিনের ১০টা বেজে যাবে, আর ভূমিতে গেলে ভোর রাতে গেলেও হবে ৷ কাল সে কি করবে? এটা ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে যায়, শেষ রাতে চোখে প্রচন্ড ঘুম আসে, চাইলেও উঠতে পারে না ৷ এভাবেই ঘুমিয়ে পরে আর উঠে দেখে অনেক বেলা হয়ে গেছে, ভূমিতে যাওয়া দূরে থাক, অন্যের কাজ করতে যাওয়ারও সময় নেই, কারণ শ্রমিকরা সকাল ৮-টা বাজে কাজ শুরু করে…৷
লক্ষ্য আর স্বপ্ন এক নয়, মানুষের জীবনে অনেকগুলো স্বপ্ন থাকতে পারে, ভালো থাকা-খাওয়া, গাড়ি-বাড়ি করা আরো অনেক কিছু…! এসব হলো স্বপ্ন আর জীবনে স্বপ্ন থাকা ভালো, স্বপ্ন ছাড়া জীবন; কখোনো জীবন হতে পারে না, কারণ স্বপ্নই মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে, ভরসা দেয়, মনে সাহস জোগায়, কাজেই স্বপ্ন দেখা উচিত ৷ পাশাপাশি আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, “একটি স্বপ্নই পারে আরেকটি স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিতে, আর উভয়ের সমন্বয়ে আসে ব্যর্থতা ৷
স্বপ্ন আর লক্ষ্য এক নয়, মানুষের জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য বা টার্গেট থাকা উচিত একটি ৷ যেমনঃ কেউ আইনজিবি হবে বা সাংবাদিক অথবা ব্যবসায়ি ইত্যাদি সেই লক্ষ্যের সূত্র ধরে হাজারো স্বপ্ন পুরন করা সম্ভব ৷ আবার বলা যায়; লক্ষ বা টার্গেট হলো পেশা ভিত্তিক চিন্তাধারা, যার মাধ্যমে জীবনকে সাজানো সম্ভব ৷
যা-হোক কেউ ব্যবসায়ি হতে চাইলে শুধু ব্যবসা নিয়েই ভাবা উচিত ৷ চাকরির পাশাপাশি ছোটখাটো কিছু করা স্বাভাবিক, কিন্তু দুটো বিষয় সমানভাবে গুরুত্ব দিলে, অবশ্যই পেশার উপর প্রভাব পরবে, তাছাড়া অবসর সময়ে যা-ই করা হোক না কেন, সেটা পেশা হিসেবে গণ্য হবে না ৷ এক ব্যক্তি চাইলেই সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারে না, তবে কমবেশি অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা রাখতে পারে ৷
মনে করুন কেউ চাকরি করছে, হতে পারে বেতন কম, সংসার চালাতে কষ্ট হয়, নানাবিধ সমস্যা জর্জরিত…৷ এখন সে একটি উদ্যোগ নিলো চাকরির পাশাপাশি অন্য কিছু করবে ৷ তবে বলার বিষয় হলো, সে যাই করুক অবশ্যই শ্রম, অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হবে, কিন্তু সে যদি একই সময় ও শ্রম বর্তমান অবস্থান তথা চাকরির পেছনে ব্যয় করে তাহলে অল্প দিনে উন্নতি করতে পারবে ৷
যদি মালিক পক্ষ দেখতে পায়, লোকটি নিয়মিত অফিসে আসছে, মাসে গ্যাপ দিচ্ছে না, প্রতিদিনের কাজ ঠিকমতো বুঝিয়ে দিচ্ছে, আরেকটু বেশি কাজ করার চেষ্টা করে, অন্যান্য কর্মীদের সাথে ভালো আচরণ ও সবার সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখে, মূল কথা একজন কর্মী হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করার কথা, ঠিক ততটুকুই মন দিয়ে করছে ৷
আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যেই মালিকপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে, কাউকে বলে দিতে হবে না ৷ পর্যায়ক্রমে হয়তো তার বেতন বাড়বে নয়তো পদান্নতি হবে ৷ একইভাবে মালিক যদি দেখে, লোকটির কাজের প্রতি উদাসীন, সবসময় ছুটির অপেক্ষা করে, কাজে উন্নতি নেই, তাহলে বেতনের হিসেব পরে, যে-কোন সময় সে চাকরি থেকে বহিষ্কার হতে পারে ৷
এসব উদাহরণ দেয়ার উদ্দেশ্য নিজের মনকে স্থির করা, অর্থাত আপনি সাংবাদিকতা পেশায় আছেন, এডভোকেট হতে পারেন না! হলেও ভালো এডভোকেট হতে পারবেন না ৷ এই পেশা পরিবর্তন করে, ভালো এডভোকেট হতে যত সময় শ্রম ও অর্থ ব্যয় করবেন, ঠিক ততটুকুই যদি বর্তমান তথা সাংবাদিকতায় ব্যয় করেন, তবে শুধু ভালো নয়, একজন সেরা সাংবাদিক হতে পারবেন ৷
আপনার কাছে নিজের অবস্থানকে ছোট মনে হতে পারে, আমরা সবাই জানি সমাজে কিছু পেশা আছে যেমনঃ জেলে, তাঁতী, দর্জি, মুচি, নাপিত, রাজমিস্ত্রি ইত্যাদি পেশার মানুষ কখোনো স্বাবলম্বী হতে পারে না, কিন্ত তাদের দিনগুলো ভালো কাটে, খেয়ে পরে ভালো থাকে ৷ আজকাল খোঁজ করে দেখুন আপনার ধারণা পাল্টে যাবে ৷ লক্ষ করুন সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় সব পেশার মানুষ দিনদিন উন্নতি করছে, ব্যবসায়ি একটি বাড়ি করলে, আইনজীবিও একটি বাড়ি আছে, দর্জি তাঁতী কেউই পিছনে পরে নেই ৷
আসল কথা হলো, একটি পদে লেগে থাকলে সেটার ধারা বুঝতে পারবেন, কিভাবে কি করতে হবে, কিভাবে উপার্জনের মান বাড়ানো যায়, কোথা থেকে বাড়তি আয় আসবে ইত্যাদি ৷
পাঠক! সম্পূর্ণ টপিকটি মনোযোগ দিয়ে কয়েকবার পড়লে আপনি এই সিদ্ধান্তে আসবেনঃ আমি বলছি যে-কোন একটি নিয়ে ভাবতে হবে (বিশেষ করে বর্তমান অবস্থান) ৷ এক কথায় যে চাকরি করছে, সে চাকরি করবে অন্যকিছুই করতো পারবে না ৷
কিন্ত দেখুন যে যেই পেশাতে থাকুক না কেন, তার হাতে কিন্ত কমবেশি সময় থাকে ৷ দেখা যাচ্ছে কেউ রেডিও জকি/সংবাদ উপস্থাপক ৷ যা বেতন পাচ্ছে তাতে সংসার খুব ভালোভাবে চলে, তবুও তার হাতে অনেক সময়… সে চাইলে কিছু একটা করতে পারে অথচ আমার আলোচনা বলছে
প্রকৃতপক্ষে আমার উদ্দেশ্য এমন নয় ৷ অনেকে খুব ভালো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখে, আর নিজের বর্তমান অবস্থানকে অবহেলা করে ৷ বিনিময়ে সে উভয় দিক হারায় ৷ তাই আমার বক্তব্য হলোঃ
আপনার অবসর সময়টি এমনভাবে বিনিয়োগ করুন, যাতে মৌলিক পেশার উপর কোনভাবেই প্রভাব না পরে ৷ আবার অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে পূর্ণ সতর্ক থাকুন ৷
মনে রাখবেনঃ অনেকগুলো ফুলগাছের পরিচর্যা করতে গেলে সবগুলো সমানভাবে হবে না, তাই পর্যাপ্ত ফলও পাবেন না ৷ আর যদি অল্প গাছ বপন করে নিয়মিত পরিচর্যা করেন, তবে অনাকাঙ্খিত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে ৷
Discussion about this post