অনলাইন ডেস্ক
সাধারণত বৈধ উপায়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্লু কার্ড। সম্প্রতি, ইউরোপিয়ান সংসদে পাস হয়েছে এই ব্লু কার্ড পাবার কিছু শর্ত।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা হাইলি স্কিলড বা উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ব্লু-কার্ডের শর্ত আগের চেয়ে কিছুটা শিথিল করতে চেয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট। এই পদক্ষেপ ইইউ’র চাকরির বাজারের বর্তমান খামতিগুলি কিছুটা হলেও পূরণ করবে বলে প্রত্যাশা।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রত্যাশা ছিল, ব্লু কার্ড চালু করা হলে তৃতীয় রাষ্ট্র থেকে আরো বেশি সংখ্যক হাইলি স্কিলড কর্মী বা দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা আসবেন এখানে। কিন্তু গত দশ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সময়ের সাথে সাথে কমেছে এই প্রকল্পের আওতায় আবেদনের সংখ্যা।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট জানাচ্ছে ২০১৯ সালে ব্লু কার্ডপ্রাপ্তদের সংখ্যা।
জার্মানি: ২৮,৮৫৮
পোল্যান্ড: ২,১০৪
ফ্রান্স: ২,০৩৬
লুক্সেমবুর্গ: ৬৭৭
চেক প্রজাতন্ত্র: ৫৭০
ইটালি: ৪১৮
অস্ট্রিয়া: ৩৩৬
শিথিল হচ্ছে শর্তাবলী
যা যা পরিবর্তন এসেছে ব্লু কার্ডের শর্তে, তা হলো:
- আবেদনকারীদের আগের মতো ন্যূনতম এক বছরের চাকরির নিয়োগপত্র দেখাতে হবে না। নতুন নিয়মে ছয় মাসের নিয়োগপত্র দেখালেই হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে কোনো বদল আসেনি সার্বিকভাবে। কিন্তু আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তিখাতে কাজ করতে আসা কর্মীদের জন্য এই বিধি কিছুটা শিথিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার বদলে সমমর্যাদার কাজের অভিজ্ঞতা দেখালেও হবে।
- ন্যুনতম বেতনের মাত্রাও কমানো হয়েছে। পুরনো নিয়মের আওতায়, আবেদনকারীদের দেখাতে হতো যে তাদের প্রাপ্য বেতন জাতীয় গড়ের চাইতে দেড়গুণ বেশি। জার্মানিতে ব্লু কার্ড পেতে সাধারণ খাতে ৫৫,২০০ ইউরো ও কর্মী খামতি থাকা খাতে ৪৩,০৫৬ ইউরোর বেতন দেখাতে হতো। পরিবর্তিত নীতিতে, কর্মীরা এখন ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের গড় বেতনের সমান অংকের বেতন পেলেই আবেদন করতে পারবেন।
- আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়া ব্যক্তিরা বা শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও আশ্রয়দাতা দেশ ছাড়া অন্য ইইউ-রাষ্ট্রে ব্লু কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- যে রাষ্ট্র ব্লু কার্ড দিয়েছে, সেই রাষ্ট্রে ১২ মাস থাকার পরে অন্য যে কোনো ইইউ রাষ্ট্রে গিয়ে থাকতে পারবেন ব্লু কার্ডধারী ব্যক্তি।
- ব্লু কার্ডধারীদের পরিবারকে নিয়ে আসা ও তাদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া হবে।
বৈধ অভিবাসনের উন্নতি
ইউরোপিয়ান সংসদে প্রস্তাবিত শর্তাবলী পাস হলেও বর্তমানে এই নতুন নীতি বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রে পাস হবার অপেক্ষায়। এরপর, রাষ্ট্রগুলির কাছে থাকবে দু বছরের সময়, যার মধ্যে নিজের দেশের নিয়োগ আইনে পরিবর্তন আনতে হবে তাদের। জার্মানিসহ বেশ কিছু ইইউ রাষ্ট্রে দেখা গিয়েছিল দক্ষ কর্মীর অভাব, যা আরো প্রকট হয় করোনা অতিমারির সময়ে। পাশাপাশি, বয়স্ক ও কাজ করতে অক্ষম জনসংখ্যার বৃদ্ধি এই সমস্যাকে আরো চিন্তার বিষয় করে তুলছিল।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হাভিয়ের মোরেনো সানচেজ বলেন, “ইউরোপে বৈধ অভিবাসনকে শক্তিশালী করতে আমাদের পক্ষে যা যা সম্ভব, তা আমরা করব। বিশেষ করে, যে দক্ষ বিদেশি কর্মীরা এলে আমাদের মহাদেশের উন্নতি হবে, তা উৎসাহিত করব আমরা।”
পাশাপাশি, নিম্ন বা মধ্য দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরাও যাতে ইউরোপে কাজ করতে বৈধ উপায়ে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে কাঠামোর বদলের কথা বলেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সমাজতন্ত্রী ও গণতন্ত্রী গ্রুপের সদস্য মোরেনো সানচেজ।
ব্লু কার্ড বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।
Discussion about this post