এমএ সামাদ
দুই বছর বয়সে পোলিও রোগে ডান পায়ে সমস্যা দেখা যায়। শুরু হয় চ্যালেঞ্জিং জীবন। শুনেছেন অনেক কটু কথা। তবুও থেমে থাকেননি। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা আর দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণে আজ তিনি একটি উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম সাত্তার।
আব্দুল করিম সাত্তার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। শুরু হয় তার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পথচলা। প্রতিবন্ধকতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হওয়া যায় সেই গল্পই করেছেন ঢাকা পোস্টকে।
ঢাকা পোস্ট : কখন থেকে আপনার পায়ের সমস্যা?
ইউএনও করিম : মাত্র ২ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হই। পরে আমার ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেই। পরিবার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। চিকিৎসক বলেছিলেন, এভাবেই ফিজিওথেরাপি নিয়ে যতটুকু ভালো থাকা যায়। ছোটবেলায় পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় যাতায়াত করতে হতো। ধীরে ধীরে পায়ে হাত রেখে চলার চেষ্টা করি। হাঁটতে গিয়ে অনেকবার পড়ে গিয়েছি। আমার খুব মনে পড়ছে, স্কুলে যাওয়ার সময় অনেকবার বইসহ মাটিতে পড়ে গিয়েছি। এতে আমার বই-খাতা ভিজে গেছে। পরে আমি মোটা মোলাট ব্যবহার করতাম যাতে পড়ে গেলেও আর বই-খাতা ভিজে না যেত। তারপর দীর্ঘ চেষ্টার পর পায়ে হাত রেখে হাঁটার অভ্যাস করি।
ঢাকা পোস্ট : পরিবারের সদস্যরা কেমন সহযোগিতা করেছে?
ইউএনও করিম : যেহেতু আমি হাঁটাচলা করতে পারতাম না সেই কারণে পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হতো। বাবা-মা সব সময় আমাকে অন্য ভাই-বোনদের মতো দেখেছে। প্রতিবন্ধী বলে কখনও বলত না তোর দ্বারা কিছু হবে না। তাদের সহযোগিতায় আজ এতদূর আসতে পেরেছি।
ঢাকা পোস্ট : নিশ্চয় অনেকের অনেক কটু কথা শুনেছেন?
ইউএনও করিম : সমাজ এখনো প্রতিবন্ধী মানুষদের আলাদা চোখে দেখে। কিছু মানুষ মানসিকভাবে সমর্থন দিলেও অধিকাংশ মানুষ আলাদাভাবে দেখত। তারা চাইতো শারীরিকভাবে অক্ষম অন্য মানুষদের মতো করে জীবিকা নির্বাহ করতে। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে বাঁচতে। তবে আমি আমার পরিবারের অনেক সমর্থন পেয়েছি। তাই পিছপা হইনি।
ঢাকা পোস্ট : শিক্ষকরা কেমন সহযোগিতা করেছে?
ইউএনও করিম : শিক্ষকরা আমাকে পর্যাপ্ত সমর্থন দিয়েছেন। তারা অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে আমার যত্ন নিতেন বেশি। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার এই পর্যায়ে আসা সম্ভব ছিল না।
ঢাকা পোস্ট : যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের নিয়ে আপনি কিছু বলুন
ইউএনও করিম : শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। তারা নিজেদের সমাজের বোঝা মনে করেন। আমাদের মনে রাখতে আল্লাহ একজন মানুষকে সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ করে গড়ে তোলেন না। আবার এটাও মনে রাখতে হবে আপনার শারীরিক অক্ষমতা আছে কিন্তু আপনার কোন না কোন একটি বড় যোগ্যতাও আছে। যেটার মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনকে এগিয়ে নিতে পারবেন। আমি দেখেছি অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই-বোন সুন্দর করে গান করতে পারেন, কেউ ভালো অঙ্কন করতে পারেন।
ঢাকা পোস্ট : শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে একজন ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন কি?
ইউএনও করিম : পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিছু দিন শিক্ষকতাও করেছি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখন আরও বেশি খুশি। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ আছে। সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি নিজেই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। সৌজন্যে-ঢাকা পোস্ট
Discussion about this post