ক্যারিয়ার ডেস্ক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন খান। ছয়বার বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও সপ্তমবারের চেষ্টায় ৪৩তম বিসিএসে পেয়েছেন শিক্ষা ক্যাডার।
শুরুটা ২০১৩ সালে। রিয়াজ তখন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পরিবারকে সহায়তা করার জন্য চাকরি করার ইচ্ছা থাকলেও বন্ধুবান্ধবদের বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখে সিদ্ধান্ত নেন—তিনিও অংশ নেবেন। শুরু করেন প্রস্তুতি। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে যোগ দেন। তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাঁর চেষ্টা চলতে থাকে। টানা কয়েকবার নন–ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর বন্ধুরা মজা করে ডাকতে শুরু করেন ‘ফাদার অব নন-ক্যাডার’। শুনতে অবশ্য খারাপ লাগত না। তবে ‘এতবার পরীক্ষা দিয়েও ক্যাডার হতে পারলেন না!’ এমন বাঁকা কথাও তাঁকে শুনতে হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পশ্চিম জগৎচর গ্রামের ছেলে রিয়াজ। রিয়াজ বলেন, ‘অনেক সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেছি। একসময় সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল। কিন্তু বড় বোনের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চালাতে গিয়ে প্রচুর টাকা দিতে হয়েছে। বৃদ্ধ বাবার উপার্জন না থাকায় বিক্রি করতে হয়েছে সম্পত্তিও।’ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পড়ালেখা চালিয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন। অর্থনৈতিক সংকট, ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েনে একসময় আত্মহত্যার কথাও মাথায় এসেছিল। রিয়াজ বলেন, ‘২০১৬ সালে চরম হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলাম। একপর্যায়ে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছি। তবে পরিবার ও বিচ্ছেদের শিকার বোনের দিকে তাকিয়ে সেটা করতে পারিনি।’
নিজের সঙ্গে লড়াই করে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন রিয়াজ। তাঁর ভাষায়, ‘ইচ্ছা ছিল পুলিশ হয়ে নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করব। সমাজে নানাভাবে হেয় হয় নারীরা। বিভিন্ন অত্যাচারের শিকার হয়েও বিচার পায় না। তাই একটা সুন্দর সমাজ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি সব সময়।’ পুলিশ হতে না পারলেও এখন নিজ অবস্থান থেকেই নারীর অধিকার রক্ষায় কাজ করতে চান তিনি। বলছিলেন, ‘যেহেতু শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেব, আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য কাজ করব। শিক্ষায় নারীদের এগিয়ে নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা চর্চায় আমার শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করব।’
সুত্র- প্রথম আলো
Discussion about this post