শিক্ষার আলো ডেস্ক
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি এলাকার পিতৃহীন জমজ তিন ভাই মাফিউল, সাফিউল এবং রাফিউল। তিন জনই এখন সরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র! !
জমজ ভাই বলে শিক্ষা জীবনের শুরুটাও একসঙ্গে। জন্মের প্রায় ৫ বছরের মধ্যেই হৃদরোগে মারা যান বাবা। জমজ তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা আর্জিনা বেগম। বাবা হারালেও মা আর্জিনা বেগম জমি বিক্রি করে তাদের পড়ালেখা করান। আজ সফল হলো মায়ের অসহনীয় জীবন যুদ্ধ।
মেডিকেলে চান্স পাওয়া ওই তিন ভাই হলেন- মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান এবং রাফিউল হাসান। তারা তিনজনই ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও পরে বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এদের মধ্যে মাফিউল গত বছর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এবং এ বছর সাফিউল দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ও রাফিউল নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।
২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর ধুনটের বথুয়াবাড়ি এলাকায় গোলাম মোস্তফা ও আর্জিনা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় তিন জমজ ভাই। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাফি বড়, তারপর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জন্ম নেয় মাফি ও রাফি। ২০০৯ সালে তাদের বাবা হৃদরোগে মারা যান। সংসারের হাল ধরেন মা। তিন জমজ ভাই এসএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে তিন ভাইয়ের মধ্যে সাফি জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হয়। পরে তারা গত বছর একসাথে মেডিকেল কলেজে ভর্তি দিলে শুধু মাফিউল ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চান্স পায়। তবে অপর দুই ভাই প্রথমবার চান্স না পেলেও পরের বার চান্স নিতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন। সেই ফলশ্রুতিতে এ বছর অপর দুই ভাই মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মেডিকেল ভর্তিতে সেরাদের সেরা হলেন যারা
ছেলের সাফল্যে মা আর্জিনা বেগম অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘২০০৯ সালে ওদের বাবা হৃদরোগে মারা যায়। তখন ওদের বয়স পাঁচ বছর। বাবার স্নেহ-মমতা পায়নি ওরা। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো নিয়ে বিপাকে পড়ি। নিজে কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। প্রায় পাঁচ বিঘা জমি ছিল। বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করে ওদের পিছে লাগিয়েছি। বাকি যা আছে তাও প্রয়োজনে বিক্রি করব। তবুও ওদের চিকিৎসক বানাব; যাতে আমাদের মত গরিব মানুষদের সেবা করতে পারে।’
গতবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মাফিউল হাসান বলেন, “তিন ভাই বগুড়ায় একটি মেসে থেকে একই সঙ্গে শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়েছে। কখনোই আমাদের কষ্ট করতে দেননি।”
এবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সাফিউল হাসান বলেন, “বাবা থাকলে কত খুশি হতেন। বাবাকে হারিয়েছি শিশুকালে। এখন মা আমাদের বাবার অভাব পূরণ করছে। মানুষের সেবা করার জন্য চিকিৎসক হতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে।”
অসুস্থ অবস্থায় বাবা মারা যাওয়ার কথা শুনে ডাক্তার হবার প্রতিজ্ঞা করেন রাফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ অবস্হায় বাবা অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বড় হয়ে যখন এ কথা জানতে পারি, তখন থেকেই তিন ভাই প্রতিজ্ঞা করি ডাক্তারী পড়বো এবং মানবতার তাগিদে গরীব মানুষদের পাশে দাড়িয়ে চিকিৎসা করবো। এই গ্রাম থেকে কেউ আগে মেডিকেল চান্স পায়নি। আমরা এক পরিবার থেকে তিনজন মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এটা ভাবতেই ভালো লাগছে!
Discussion about this post