খেলাধূলা ডেস্ক
৩৬ বছর পূর্ণ হলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তৃতীয় অধিনায়কের! শুভেচ্ছা বার্তা আসছে ঘনঘন। মধ্যরাত থেকে দলের হোটেলে উৎসবের আবহ। কোপা আমেরিকায় মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ চিলি। সমীহ করার মতো ফুটবল শক্তি। তবু সোমবার আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা উৎসবে মেতে। কেন্দ্রে অবশ্যই লিওনেল মেসি।
বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের দু’ভাগ করে দিয়েছেন মেসি। এক ভাগকে নিজের ভক্ত করে তুলেছেন। আর একটি দল আছে, যারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ভক্ত। তারা মেসিকে পছন্দ না করলেও উপেক্ষাও করতে পারেন না। বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে কার দখলদারি বেশি, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তুল্যমূল্য বিচার হতে পারে। কিন্তু সাফল্যের পরিসংখ্যানে রোনালদোকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।
কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের আগে এবং পরের পরিস্থিতি ভিন্ন। মেসি তখনও জাতীয় নায়ক ছিলেন আর্জেন্টিনায়। এখনো আছেন। তখন ছিলেন ‘ট্র্যাজিক হিরো’। এখন তিনি ‘সুপার হিরো’। তাই তার জন্মদিন ঘিরে মানুষের উন্মাদনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্জেন্টিনার ফুটবল জনতা কখনো আশা ছাড়েননি মেসিকে নিয়ে। মেসি তাদের ভরসার মর্যাদা দিয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। ১৯৮৬ সালের পর ২০২২। ৩৬ বছরের ব্যবধানে দেশকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন মেসি। তার নিজের বয়সও এবার ৩৬। আর একটা বিশ্বকাপ এক বছর পর। মেসি সর্বোচ্চ পর্যায় খেলার মতো ফিট থাকবেন কিনা, এখনই বলা সম্ভব নয়। তাই কোপা আমেরিকার ট্রফিটা আরো একবার তার হাতে তুলে দিতে চান আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা। সেটাই হবে মেসির জন্মদিনের সেরা উপহার।
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন; হোর্হে মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির ঘর আলো করে জন্ম নেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচেত্তিনি (সংক্ষেপে লিওনেল মেসি)। রোজারিও শহরে জন্ম নেওয়া ফুটবলের এই জাদুকর আজ ৩৭ বছর বয়সে পা দিয়েছেন।
জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচিত্তিনির তৃতীয় সন্তান মেসি পরিবারের থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা নেশা ছিল। বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস আর তার কাজিন ইমানুয়েন বিয়াঙ্কুকি, ম্যাক্সিমিলিয়ানো ছিলেন মেসির ফুটবল খেলার সঙ্গী।
৬ বছর বয়সে নিউওয়েলস অল্ড বয়েজ ক্লাবে যোগ দেন মেসি। সেখানে ৬ বছর খেলেন তিনি। এই ৬ বছরে তার পা থেকে গোল আসে প্রায় ৫০০। আর সেই সুবাদে তখন তার নাম হয় ‘৮৭ এর গোল মেশিন।’
১০ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি নামক এক রোগ বাসা বাধে তার দেহে। যে কারণে থমকে যায় তার দেহের বৃদ্ধি। প্রতিমাসে তার এই রোগের চিকিৎসার জন্য খরচ হতো ১ হাজার ডলার। প্রথমে তার ক্লাব নিউওয়েলস সেই খরচে অংশীদার হতে চাইলেও পরে হাত গুটিয়ে নেয় তারা।
পরে রিভারপ্লেট ক্লাব তাকে দলে ভিড়িয়ে চিকিৎসা খরচ বহন করতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায় তারাও। যে কারণে শঙ্কা দেখা দেয় মেসির বেড়ে ওঠা নিয়ে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনা তার জুনিয়র দলের জন্য মেসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর শুরু হয় তার চিকিৎসা। ১৪ বছর বয়সে এসে শেষ হয় তার চিকিৎসা।
২০০৫ সালে নিজের ১৮তম জন্মদিনের দিন মেসি যোগ দেন বার্সেলোনার মূল দলে। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগেনি তারকা এই ফুটবলারকে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার।
২০০৮-০৯ মৌসুমে প্রথম ট্রেবলের স্বাদ পান মেসি। ২০০৯-১০ মৌসুমে জেতেন প্রথম ব্যালন ডি’অর।
২০১২ সালটা ছিল মেসির রেকর্ড গড়ার বছর। এ বছরই প্রথম এক ম্যাচে পাঁচ গোল দেওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। সে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। সে বছরেই মেসি বনে যান বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রেবল জয় করেন মেসি। ২০১৯-২০ মৌসুমে রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর নিজের ঝুলিতে পুরেন মেসি। ২০২১ সালে তিনি বার্সেলোনার সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে পাড়ি জমান ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে।
২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে স্বপ্নভঙ্গের পর সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মেসি। ফিনালিশিমা, ফিনালিশিয়া, কোপা আমেরিকা জয়ের পর ২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতাটা পূর্ণ হয় ক্ষুদে এই জাদুকরের। লুসাইল স্টেডিয়ামে সেই ফ্রান্সকেই হারিয়ে স্বাদ নেন বিশ্বকাপের।
শুভ জন্মদিন ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’ মেসি।
Discussion about this post