ক্রীড়া ডেস্ক
১৯৮৮-১৯৮৯ সালের এশিয়া কাপের ১০ বছর পর যখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাপের আসর বসেছিল, তখন মোহাম্মদ আশরাফুল এক কিশোর। সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ওয়াহিদুল গনির কোচিং একাডেমি ‘অঙ্কুর’-এর সদস্য, বয়স বড়জোর ১২ কি ১৩। সেই বয়সে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম শচিন টেন্ডুলকারকে কাছ থেকে দেখা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কিশোর আশরাফুল তারও এক দুই বছর আগে থেকেই শচিনের ভক্ত। ভক্ত মানে অন্ধ ভক্ত। সেই স্বপ্নের ক্রিকেটার ও ক্রিকেট হিরোকে হাত মেলানো দূরত্বে দেখা এবং একদম মাঠে সীমানার দড়ির বাইরে বসে তার খেলা দেখা-সেটা ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। দেহ মনে রোমাঞ্চ, পুলক জাগানো ঘটনা।
ভাবছেন কিশোর আশরাফুল ঐ অতটুকু বয়সে আবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে বসে খেলার দেখার সুযোগ পেলেন কি করে? একজন কিশোরের কি আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ঐ মাঠে ঢোকার এবং সীমানার ঠিক বাইরে বসে খেলা দেখা সম্ভব?
যারা জানেন, তাদের কথা বাদ। যাদের জানা নেই তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, এটা কি করে সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। এই কারণে সম্ভব ছিল যে, আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখন যেমন ‘বল বয়’ থাকে, তখনো ছিল। ওয়াহিদুল গনির ‘অঙ্কুর’-এর কিশোর ক্রিকেটাররা ছিলেন তখন বল বয়। সেই সুবাদে আশরাফুল মাঠে বসেই শচিনকে দেখেছিলেন। প্রিয় ক্রিকেটারের সাথে ছবিও তুলে রেখেছিলেন।
অবাক করা সত্য, কয়েক বছর পর আশরাফুল যখন শচিনের মুখোমুখি হন, তখন গা থেকে ‘বল বয়’ পরিচয় গেছে হারিয়ে। তার বদলে মোহাস্মদ আশরাফুলকে তখন সবাই চিনেছিল টেস্ট অভিষেকে শ্রীলঙ্কার মুরালিধরন আর চামিন্দা ভাসের মত বোলারদের সামলে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুুরিয়ান হিসেবে। আর সবার মত সেটা শচিনও জানতেন। কিন্তু এই আশরাফুল যে তার সাথে ১৯৯৮ সালে ছবি তোলা বলবয় আশরাফুল, তা জানা ছিল না ভারতের মাস্টার ব্লাস্টার এই ব্যাটসম্যানের। আশরাফুল যখন তাকে এত বছর আগের তোলা ছবি বের করে দিলেন, শচিন রীতিমত বিস্মিত হন।
সেই থেকে সখ্য, অন্যরকম সম্পর্ক। তারপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে এক সাথে খেলা। বৃহস্পতিবার((১৪মে) নামী ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের সাথে ইউটিউব লাইভে এসে সে গল্পই শোনালেন আশরাফুল।
এ গল্পের সেখানেই শেষ নয়। শচিন টেন্ডুলকার, হরভাজন সিং আর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সে সময়কার ভিডিও অ্যানালিষ্টসহ সবাইকে নিজের বাসায় নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আশরাফুল।
সে গল্পটা বেশ রসিয়ে রসিয়ে করলেন আশরাফুল। যে গল্পর নায়ক অতি অবশ্যই শচিন। মাঠে যার নয়ন জুড়ানো ব্যাটিং দেখে বারবার বহুবার মুগ্ধ-পুলকিত আর রোমাঞ্চিত হয়েছেন, নিজ বাড়িতে তার খাওয়া দেখে রীতিমত তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন সেই আশরাফুল।
আশরাফুলের ধারণা ছিল, ব্যক্তি জীবনে সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল চরিত্রের শচিন নিশ্চয়ই খানও অনেক কম। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে শচিন প্রচুর খেলেন। তার মা যতগুলো আইটেম রান্না করেছিলেন রুটি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, সব্জি থেকে দই-মিষ্টি সব খেয়েছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
আশরাফুল প্রিয় ক্রিকেট তারকার এমন খাওয়া চোখে দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আশরাফুল বলেন, ‘বিশ্বাস করুন আমার মা যতগুলো আইটেম রান্না করেছেন, তার সবকটা আইটেমই খেয়েছিলেন শচিন। তারপর দই-মিষ্টিও খেলেন প্রচুর পরিমাণে। আমি তো শচিনকে জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না, কিভাবে তিনি এত পেট পুরে খেতে পারেন?’
আশরাফুল জানালেন, এক পর্যায়ে শচিন নিজেই বলে উঠেন, ‘আমি বেশিরভাগ সময় স্বল্প আহার করি। একটি রুটি সব্জি খেয়ে থাকি। তবে মাঝে মধ্যে খাই। যেদিন বা যখন খাই তখন যত পারি, তত খাই।’
সেই বিশেষ দিনগুলোর একটা আশরাফুলের দেখার সৌভাগ্য হয়েছে নিজের বাড়িতেই। আশরাফুলের মায়ের হাতের চালের রুটি, পোলাও, মাংস, ইলিশ মাছ, সব্জি ও দই-মিষ্টি খেয়ে শচিন দেখিয়ে দিয়েছিলেন; তিনি যখন খান, তখন পেট পুরে টেবিলে যত আইটেম আছে সবই খান। তবে সেটা কালে ভদ্রে।
Discussion about this post