ক্রীড়া ডেস্ক
ক্রিকেট শুরু হবে হবে অবস্থা প্রায় প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশে। আলোচনা এখন করোনা পরবর্তী ক্রিকেট নিয়ে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে আইসিসিও বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের পর পেসাররা পড়েছেন চিন্তায়। লালার ব্যবহার নিষেধ হলে বল সুইং করাবেন কী করে!
এক দিন আগে আইসিসির ক্রিকেট কমিটির প্রধান অনিল কুম্বলে বলেছেন, এই নিয়মে পেসাররা সমস্যায় পড়লেও স্পিনারদের নাকি সুবিধাই হবে। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিনাররা বিষয়টিকে দেখছেন অন্যভাবে।
লালার ব্যবহারে বলের একপাশ উজ্জ্বল থাকলে যে সুবিধা পান তাঁরাও!
অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের জন্য যেমন ‘ড্রিফট’ (বাতাসে বল বাঁক খাওয়ানো) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বল উজ্জ্বল থাকলে নাকি এটা ভালো হয়, ‘বল উজ্জ্বল থাকলে পেসার, স্পিনার সবারই সুবিধা। পেসারদের যেমন বল সুইং করে, স্পিনারদের ক্ষেত্রেও মাঝেমধ্যে সুইং লাগে। আর্ম বল করলে সুইং হয়। আর বল স্পিন করা শুরু করলে ড্রিফট করানো সম্ভব। এই দুইটি জিনিস হলে আর কী লাগে! বল উজ্জ্বল না থাকলে ভালো ড্রিফটও হয় না।’
পাকিস্তানি লেগ স্পিনার মুস্তাক আহমেদও কথাটা বলতেন। রিভার্স সুইংয়ের জন্য তৈরি বলে পেসারদের থেকে বেশি সুবিধা স্পিনারদের। তাঁর কথা শুনে হয়তো ওয়াসিম-ওয়াকারদের মতো রিভার্স সুইংয়ের রাজারা হাসতেন। কিন্তু মুস্তাকের কথায় যুক্তি আছে। বলের একপাশ উজ্জ্বল থাকলে আরেক পাশ এবড়োখেবড়ো হলে স্পিনারদের ড্রিফট পেতে সুবিধাই হয়। যত বেশি ড্রিফট, ব্যাটসম্যানের মনে তত বেশি বিভ্রান্তি। ব্যাটসম্যান হয়তো ড্রিফট ভেবে খেলল, ওদিকে বল পড়েই করল স্পিন। ড্রিফট পেলে বাঁহাতি স্পিনারদের আর্ম বলও হয়ে ওঠে আরও বিষাক্ত। এলবিডব্লিউ, বোল্ড, শর্ট লেগে ক্যাচের সম্ভাবনা বেড়ে যায় তখন।
ক্রিকেটারদের জন্য বল উজ্জ্বল করার এখন একটিই উপায় রেখেছে আইসিসি—ঘামের ব্যবহার। তবে বাংলাদেশ দলের স্পিনার তাইজুল ইসলাম বলেন, শুধু ঘাম লাগিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারবেন বলে মনে হয় না। লালার বিকল্প দেখেন না তিনি, ‘ঘামে বল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বলে ঘাম দেওয়া মানে বলে অনেকটা পানি দেওয়ার মতো। বল উজ্জ্বল রাখা এখন কঠিন হবে। শুধু ট্রাউজারে ঘষে যতটুক করা যায় ততটুকুই করতে হবে। টেস্টে আগে যদি বল ৫০-৬০ ওভার উজ্জ্বল রাখা যেত, এখন ৩০-৪০ ওভারেই নষ্ট হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশের উইকেটে কাজটা আরও কঠিন হবে বলেই মনে করেন স্পিনাররা। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির উইকেট সবুজ না করে ফ্ল্যাট রাখা হচ্ছে। শীর্ষ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায়ও তাই পেসারদের দাপট। স্পিনাররা যা কিছু উইকেট পান, সেটি গতির বৈচিত্র্য আর ওই ড্রিফটের সাহায্যেই। অভিজ্ঞ এনামুল হকের যত দুশ্চিন্তা, ‘গত কয়েক বছর ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট কিন্তু স্পিনারদের সাহায্য করছে না। উইকেট পেতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয় আমাদের। এখন যদি বলও উজ্জ্বল করা না যায়, তাহলে তো মুশকিল।’
বাংলাদেশের বেশ কিছু মাঠে উইকেট ও আশপাশের জায়গার মাটির কারণে বল দ্রুত পুরোনো হয়। এসব মাঠে বল নতুন রাখতে লালা ব্যবহার করতেই হয়। আর ঘরোয়া ক্রিকেটে তো বলের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভারতের যে এসজি বলে খেলা হয়, সেটির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি, স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও।
লালা নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাই বল আর উইকেট নিয়েই যত ভাবনা এনামুলের। তাঁর এখন চাওয়া স্পিন–সহায়ক উইকেট, ‘এখন যেসব উইকেটে খেলি, এখানে স্পিনারদের কাজ খুব কঠিন হবে। খেলাটা ব্যাটসম্যানদের দিকে হেলে পড়বে। একটাই উপায় আছে, উইকেটে স্পিনারদের জন্য সাহায্য থাকতে হবে।’
বোলারদের কাছে ক্রিকেটটা আজীবনই একটা যুদ্ধ। ক্রিকেট যতই ব্যাটসম্যানদের দিকে হেলে পড়েছে, প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কার করে টিকে থাকতে হচ্ছে বোলারদের। আইসিসির নতুন নিয়ম আবারও সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ফেলে দিল এই ‘যোদ্ধা’দের।
Discussion about this post