খেলার ধরণ
একই খেলার ধরন ও দৈহিক উচ্চতার কারণে মেসিকে প্রায়ই তার স্বদেশী দিয়েগো মারাদোনা’র সাথে তুলনা করা হয়। মেসি অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় অধিক ক্ষিপ্র এবং তিনি অতি দ্রুত গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন। এছাড়াও তিনি কৌশলে ট্যাকল এড়িয়ে যেতে পারেন। তার ছোট ও শক্তিশালী পায়ের কারনে অতি অল্প সময়ে তিনি অধিক গতি অর্জন করতে পারেন। তার দ্রুতগতির পা তাকে গতিশীল অবস্থায়ও ড্রিবলিং করার সক্ষমতা প্রদান করে। প্রাক্তন বার্সেলোনা ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা বলেন, ‘‘মেসিই একমাত্র খেলোয়াড় যে বল ছাড়া যত দ্রুত দৌড়াতে পারে, বলসহ তার চেয়েও বেশি দ্রুত দৌড়াতে পারে।’’ মারাদোনার মত মেসিও একজন বাম পায়ের খেলোয়াড়। বল কাটাতে এবং দৌড়াতে তিনি সাধারণত তাঁর বাম পায়ের বহির্দেশ ব্যবহার করে থাকেন। সতীর্থদের সহায়তা করতে ও ‘পাস’ দিতে এবং ফিনিশিং-এ তিনি সাধারণত তার বাম পায়ের ভেতরের অংশ ব্যবহার করেন।
মেসিকে প্রায়ই গোলপোস্টের দিকে বল নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে আক্রমণ করতে তিনি সমর্থও হন। তাঁকে মধ্য মাঠের দাগ থেকে অথবা মাঠের ডান পার্শ্ব দিয়ে আক্রমণ করতে বেশি দেখা যায়। মেসিকে বহুমুখী খেলোয়াড়ও বলা হয়ে থাকে। জাভি ও ইনিয়েস্তার সাথে পাসিং ও সৃজনশীলতায় তার চমত্কার সমন্বয় রয়েছে। এছাড়া তিনি নির্ভুলভাবে সেট-পিস্ ও পেনাল্টি কিকও নিতে পারেন। মেসির বল কাটানোর সক্ষমতা প্রসঙ্গে মারাদোনা বলেন, ‘‘বল তার পায়ের সাথে আঠার মত লেগে থাকে। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক কিংবদন্তিকে দেখেছি, কিন্তু মেসির মত বল নিয়ন্ত্রণ করতে কাউকে দেখিনি।’’ মারাদোনা আরও বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন মেসিই বর্তমানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।
‘‘তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁর কাছে এবং আমার ব্যক্তিত্ব আমার কাছে। তাঁর খেলা তাঁর কাছে এবং আমার খেলা আমার কাছে। আমিও তাঁর মত বড় দলে খেলি। সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা আলাদা। কিন্তু বর্তমানে সে-ই বিশ্বের সেরা।’’
— ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
কৌশলগতভাবে মেসি দলের আক্রমণভাগে খেলে থাকেন, তবে কখনও কখনও তিনি প্লেমেকারের দায়িত্বও পালন করেন। মেসি উইঙ্গ বা মাঠের মাঝখান দিয়ে আক্রমণ করতে পছন্দ করেন। তিনি বাম-উইঙ্গার ও ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। প্রাক্তন বার্সেলোনা ম্যানেজার ফ্রাংক রাইকার্ড তাকে ডান-উইঙ্গে নিয়ে যান। তিনি ভেবেছিলেন, এই অবস্থানে থেকে মেসি আরও সহজে বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগ ভেদ করে মধ্য মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন এবং বাম পা দিয়ে গোলপোস্টে বাঁকানো শট নিতে পারবেন। গার্দিওলার অধীনে মেসি ফলস-৯ অবস্থানে খেলেছিলেন। যা মেসির প্রবৃত্তির সাথে মিলে গিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে, মেসি একজন ফরোয়ার্ড বা লোন স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও তিনি কখনও কখনও রক্ষণভাগ পর্যন্ত চলে যান। অন্যান্য ফরোয়ার্ড , উইঙ্গার ও আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের সহায়তা করার জন্য বা আক্রমণাত্মক দৌড় শুরু করার জন্য তিনি এ কাজ করে থাকেন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসি সাধারণত ফ্রন্ট লাইনের যেকোন অবস্থানে খেলে থাকেন। ফরোয়ার্ড বা উইঙ্গার হিসেবে শুরু করলেও তিনি মাঠের অন্যান্য অবস্থানেও খেলেন। মারাদোনার অধীনে তিনি মূলত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার বা প্লেমেকার হিসেবে খেলেছিলেন। মেসি প্রকাশ করেন যে তিনি সাবেক আর্জেন্টাইন প্লেমেকার পাবলো আইমারের ভক্ত।
Discussion about this post