অলিম্পিক গেমস (ফরাসি: Jeux olympiques) হল একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যেখানে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহন করে। দুইশতাধিক দেশের অংশগ্রহণে মুখরিত এই অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অলিম্পিক গেমস প্রত্যেক চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর দুটো প্রকরন গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন প্রতিযোগীতা প্রত্যেক দুই বছর পর পর হয়ে থাকে, যার অর্থ দাঁড়ায় প্রায় প্রত্যেক দুই বছর পর পর অলিম্পিক গেমসের আসর অনুষ্ঠিত হয়। খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া থেকে শুরু হওয়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস থেকেই মূলত আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ধারনা জন্মে। ১৮৯৪ সালে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এই আইওসি-ই অলিম্পিক গেমস সংক্রান্ত সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
অলিম্পিক আন্দোলন থেকেই বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দিতে অলিম্পিক গেমসে অনেক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনগুলোর অন্যতম হল শীতকালীন অলিম্পিকের প্রচলন, প্রতিবন্ধীদের জন্য প্যারালিম্পিক এবং কিশোর ক্রীড়াবিদদের জন্য যুব অলিম্পিক গেমস। এইসব পরিবর্তনকে সার্থক করার জন্য আইওসিকে অনেক ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে। ফলতঃ পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁর অপেশাদারি ধারনা থেকে সরে এসে পেশাদার ক্রীড়াবিদদের এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ তৈরী হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতা সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।
অলিম্পিক গেমস ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেডারেশন, জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং প্রত্যেক আসরের জন্য নির্দিষ্ট কমিটির সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক আসরের জন্য আয়োজক দেশ নির্বাচনের ক্ষমতা আইওসি সংরক্ষণ করে। অলিম্পিক সনদ অনুযায়ী আয়োজক দেশ এই গেমস আয়োজনের খরচ বহন করবে এবং তহবিল সংগ্রহ করবে। তবে অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়া অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত আইওসি গ্রহণ করে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও অলিম্পিক গেমসে আরও অন্যান্য আচার ও রীতি-রেওয়াজের প্রচলন রয়েছে যেমন অলিম্পিক মশাল, পতাকা, উদ্বোধনী এবং সমাপনি অনুষ্ঠান ইত্যাদি। গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন অলিম্পিকে ৩৩ টি ক্রীড়ার ৪০০ টি বিভাগে প্রায় ১৩,০০০ ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রত্যেক বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারী ক্রীড়াবিদদের যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জের পদক দেওয়া হয়।
কালের আবর্তনে অলিম্পিক গেমস এমন একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে আজ প্রায় প্রত্যেকটি দেশই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ফলে বছর বছর বর্জন, মাদক, ঘুষ এবং সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার মত নানা ধরণের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি দুই বছরে অলিম্পিক ও তৎসংশ্লিষ্ট প্রচার একজন অখ্যাত ক্রীড়াবিদকে রাতারাতি জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক খ্যাতির সুযোগ এনে দেয়। অলিম্পিক গেমস আয়োজনকারী দেশও এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে সারা বিশ্বে নিজেকে প্রকাশ করার একটি সুযোগ পায়।
প্রাচীন অলিম্পিক গেমস
প্রাচীন গ্রীসে দেবতা জিউসের আবাসস্থল অলিম্পিয়ায় ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজের সাথে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হত। মূলত প্রাচীন গ্রীক নগর রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করত। সাধারন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে মল্লযুদ্ধ, ঘোড়দৌড়, রথ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হত। প্রাচীন বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় যে বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দন্দ্ব বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও এই প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে তা স্থগিত থাকত। এই যুদ্ধ এবং দন্দ্বে সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়াকে “অলিম্পিকের যুদ্ধবিরতির নীতি” বলা হত। যদিও এই প্রাচীন ধারনাটি হয়ত একটি গল্পকথা কারণ গ্রীকরা কখনই যুদ্ধবিরতি করেনি। তবে এই রীতিটি অলিম্পিয়ামুখী তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন যুদ্ধরত নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে অবাধে চলাচল করতে সাহায্য করত। কারণ তারা মনে করত যে জিউস সকল তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা করেন।অলিম্পিকের জন্ম আজও মানুষের কাছে একটি রহস্য এবং কিংবদন্তি হয়ে আছে। তবে জনপ্রিয় একটি গল্পকথা মতে দেবতা জিউস এবং তার ছেলে হেরাক্লিস বা হারকিউলিস এই অলিম্পিক গেমসের জনক। এই গল্পকথার মতে হেরাক্লিসই এই অনুষ্ঠানকে অলিম্পিক নাম দেন এবং প্রত্যেক চার বছর পর পর এই গেমস অনুষ্ঠানের প্রচলন করেন।
এই গল্পকথা অনুসারে হেরাক্লিস তার বারোটি মহাকাব্যিক অভিযান শেষে তার পিতা জিউসের সম্মানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরী করেন। এই কাজ শেষ করার পরে হেরাক্লিস সোজা ২০০ কদম হেটে যান এবং একে স্টেডন হিসেবে ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে এটা দূরত্ব মাপার একক হিসেবে প্রচলিত হয়। অলিম্পিক সংক্রান্ত একটি প্রাচীন লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে অলিম্পিকের সূচনা ঘটেছিল খৃষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালের দিকে। এই লিপিতে চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল। এই প্রাচীন ক্রীড়া অনুষ্ঠানে দৌড় প্রতিযোগিতা, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ এবং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানা যায়। লোকোগাথা মতে কোরিবাস নামের ইলিস শহরের এক পাচক অলিম্পিকের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন।
মূলত অলিম্পিক ছিল ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুযায়ী জিউস এবং অলিম্পিয়ার রাজা এবং পৌরানিক বীর পিলোপ্সকে সম্মান প্রদর্শনের একটি ঐতিহ্যগত ক্রীড়া অনুষ্ঠান। রাজা পিলোপ্স ওয়িনৌসের সাথে রথ প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অলিম্পিকে বিজয়ীরা সম্মানে ভূষিত হতেন। তাদের উদ্দেশ্যে গান ও কবিতা লেখা হত। এই অনুষ্ঠান প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হত এবং এই চার বছরের সময়কালকে বলা হত এক অলিম্পিয়াড যা গ্রিকদের সময় পরিমাপার একটি একক ছিল।
খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ এবং পঞ্চম শতকে অলিম্পিক গেমস জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। কিন্তু, রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রীসের উপর এর প্রভাব বিস্তারের সাথে সাথে এর কার্যকারীতা হ্রাস পেতে শুরু করে। অলিম্পিক গেমসের কখন ইতি টানা হয় এর ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া না গেলেও সাধারনভাবে মনে করা হয় যে ৩৯৩ খৃষ্টাব্দে এই ক্রিড়াযজ্ঞের সমাপ্তি হয় যখন সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস সমস্ত পৌত্তলিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। যদিও, থিওডোসিয়াসের আদেশে সরাসরি অলিম্পিকের কোনো উল্লেখ ছিল না। এছাড়া অনেকের ধারনা মতে দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস যখন ৪২৬ খৃষ্টাব্দে সমস্ত গ্রীক মন্দির ধ্বংশ করার আদেশ দেন তখনই এই গেমসের সমাপ্তি ঘটে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা ও ফেডারেশন, স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যম, জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ, আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি এবং যেসকল প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক সনদের নিয়মাবলী মান্য করে চলে তাদের প্রত্যেকের সমন্বয়েই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি গঠন করা হয়। যদিও অলিম্পিকের সাথে অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকে আয়োজক দেশ নির্বাচন, ক্রীড়া পরিকল্পনা উন্নয়ন, পৃষ্ঠপোষক ও প্রচারসত্বের সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি নিজের কাছেই রেখেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। সংগঠনগুলো হল-
- আন্তর্জাতিক ফেডারেশন সমূহ
- জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং
- আয়োজক কমিটি
আইওসির দাফতরিক ভাষা হল ফরাসি ও ইংরেজি। যদি আয়োজক দেশের ভাষা ফরাসি বা ইংরেজি না হয় তাহলে অলিম্পিকের আয়োজনে সেই ভাষাও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ঘোষণা ইংরেজি, ফরাসি ও স্থানীয় এই তিনটি ভাষায় দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
অলিম্পিক সনদে উল্লেখিত রীতি অনুযায়ী গেমস শুরুর পূর্বে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মোটামুটিভাবে, এই অনুষ্ঠানের রীতি-নীতিগুলি ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময়ই ঠিক হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানটি সাধারণত আয়োজক দেশের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়। এর পরে আয়োজক দেশ বিভিন্ন নান্দনিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ প্রদান করে। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ তার নিজের কৃষ্টি, কলা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস তুলে ধরার সুযোগ পায়। এই জাতীয় অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ প্রচুর অর্থ খরচ করে নিজেদের গৌরব ও সামর্থ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চালায়। যেমন বেজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।
দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনীর পর বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদরা করে দর্শকদের সামনে অলিম্পিক স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করে। এই প্রদক্ষিণে সর্বপ্রথম আসে গ্রীসের ক্রীড়াবিদরা এবং সর্বশেষে আসে আয়োজক দেশের ক্রীড়াবিদরা। গ্রীসকে সবার আগে আসার সম্মান দেওয়া হয় অলিম্পিকের ইতিহাসে গ্রীসের ভূমিকার জন্য। গ্রীসের পরে আয়োজক দেশের পছন্দের বর্নমালার বর্নানুক্রমে সব দেশের ক্রীড়াবিদরা স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করে, আর আয়োজক দেশ আসে সবার শেষে। গ্রীসের অ্যাথেন্সে অনুষ্ঠিত ২০০৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় গ্রীক পতাকা সর্বপ্রথম প্রদক্ষিণ করে এবং নিয়ম অনুযায়ী শেষে গ্রীসের ক্রীড়াবিদ ও আধিকারিকেরা প্রদক্ষিণ করে এই পর্বের ইতি টানে। বিভিন্ন দেশের কুচকাওয়াজের পর অলিম্পিকের মশাল স্টেডিয়ামে এনে বিভিন্ন হাত বদলের পর চূড়ান্ত মশাল বাহকের কাছে পৌঁছায় । সাধারণত আয়োজক দেশের কোনো প্রাক্তন অলিম্পিক বিজয়ীই অলিম্পিকের চূড়ান্ত মশাল বাহক হিসাবে অলিম্পিক শিখা প্রজ্বলন করে থাকেন।
সমাপনী অনুষ্ঠান
অলিম্পিক গেমসের সকল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই ক্রীড়াযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার জন্য সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বর্নানুক্রমে নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে পতাকাবাহক ক্রীড়াবিদরা মাঠে এসে উপস্থিত হন। তাঁদের পিছনে পিছনে সমস্ত অংশগ্রহণকারী দেশের সকল ক্রীড়াবিদরা একসাথে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন।[৭৯] সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনটি দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং তাদের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এই তিনটি দেশ হল বিদায়ী অলিম্পিকের আয়োজক দেশ, গ্রীস (অলিম্পিকের জন্মস্থান হওয়ার সম্মানে।) এবং পরবর্তী আসরের আয়োজক দেশ। পতাকা উত্তোলনের পরে অলিম্পিক আয়োজক কমিটির সভাপতি ও আইওসি সভাপতি একটি করে সমাপনী ভাষণ দেন এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অলিম্পিকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় অলিম্পিক শিখা নিভিয়ে ফেলে। অ্যান্টওয়ার্প অনুষ্ঠান নামে পরিচীত রীতি অনুযায়ী বর্তমান আয়োজক শহরের মেয়র আইওসি সভাপতির হাতে একটি বিশেষ অলিম্পিক পতাকা তুলে দেন; ও আইওসি সভাপতি আবার সেই পতাকা পরবর্তী আসরের আয়োজক শহরের মেয়রের হাতে তুলে দেন। শেষে, পরবর্তী আসরের আয়োজক দেশ একটি ছোট্ট নান্দনিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করে।
প্রথা অনুযায়ী, শেষ পদক প্রদান অনুষ্ঠান হিসাবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ক্ষেত্রে পুরুষদের ম্যারাথনের ও শীতকালীন অলিম্পিকের ক্ষেত্রে ৫০ কিমি ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং ফ্রিস্টাইল গণ শুরুর পদক সমাপনী অনুষ্ঠানের দিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে দেওয়া হয়।
ক্রীড়া
৩৫টি ক্রীড়া, ৩০টি শাখা ও প্রায় ৪০০টি বিভাগের সমাহার হল অলিম্পিক ক্রীড়াসমূহ। যথা, কুস্তি একটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া, যার দুটি শাখা হল: গ্রেকো-রোমান এবংফ্রিস্টাইল। উপরন্তু ওজনের ভিত্তিতে ১৪টি পুরুষদের ও ৪টি মহিলাদের বিভাগও বর্তমান। বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ২৬ টি ক্রীড়া ও শীতকালীন অলিম্পিকে ১৫ টি ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রতিটি আসরে দৌড়বাজী, সাঁতার, অসিচালনা, এবং জিমন্যাস্টিক্স ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা নিয়মিত থেকেছে। অন্যদিকে, ১৯২৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হবার পর থেকে ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং, ফিগার স্কেটিং, আইস হকি, যুগ্ম নর্ডিক, স্কি লাফ, এবং দ্রুত স্কেটিং ক্রীড়াগুলি প্রতিটি আসরের নিয়মিত সদস্য। আজকের অলিম্পিকের অন্যতম ক্রীড়ার অনেকগুলিই প্রথমে প্রদর্শনমূলক ক্রীড়া হিসাবে অলিম্পিকে আয়োজিত হয়েছে; যেমন, -ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, এবং ভলিবল।
প্রতিটি অলিম্পিক ক্রীড়ারই আইওসি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থা আছে। আইওসিতে এমন মোট ৩৫ টি সংস্থার প্রতিনিধিত্ব আছে।স্বীকৃত সংস্থাগুলির মধ্যে এমন কিছু খেলার সংস্থাও আছে যে খেলা আপাতত অলিম্পিকের আসরে অনুষ্ঠিত হয় না। তবে এই বর্তমানে ক্রীড়াগুলি অলিম্পিক ক্রীড়ার মর্যাদা না পেলেও, যে কোনো অলিম্পিকের আসরের ঠিক পরবর্তী আইওসি সম্মেলনে অলিম্পিক ক্রীড়ার তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে পরের অলিম্পিকে সংযোজিত হতে পারে। আইওসি সম্মেলনে অলিম্পিক ক্রীড়ার তালিকা সংশোধনের সময় শুধু যে কেবল নতুন ক্রীড়ার সংযোজন হয় তাই নয়; কোনো বর্তমান ক্রীড়া বাদও দেওয়া হয়, আর এটা করা হয় আইওসির মোট সদস্যের অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের ভিত্তিতে। দাবা বা সার্ফিং-এর মত এমন অনেক আইওসি স্বীকৃত ক্রীড়া আছে যা কোনো দিন অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়নি।
Discussion about this post