খেলাধূলা ডেস্ক
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটের প্রথম যুগের শেষ ও দ্বিতীয় যুগের শুরুটা একই বিন্দুতে মিলিয়ে রাখল টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ২০১৯ সালে পূরণ হয়েছে আইপিএলের এক যুগ, সেবার চ্যাম্পিয়ন ছিল মুম্বাই। আর এবার নতুন যুগের প্রথম এবং সবমিলিয়ে ১৩তম আসরেও শিরোপা জিতে নিয়েছে রোহিত শর্মার দল।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইপিএলের ১৩তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ও দিল্লি। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা দিল্লি নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান তোলে। জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে ও ৮ বল বাকি থাকতে ১৫৭ করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মুম্বাই।
১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করে মুম্বাই। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৪.১ ওভারে ৪৫ রান তোলে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও কুইন্টন ডি কক। তবে ১২ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ২০ করে মার্কাস স্টোইনিসের বলে বিদায় নেন ডি কক। কিন্তু উইকেটে অবিচল থাকা রোহিত দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে ফের ৪৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।
যাদব ১৭ রানে রান আউট হয়ে বিদায় নিলেও অধিনায়ক রোহিত দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন। তুলে নেন দুর্দান্ত এক হাফসেঞ্চুরি। এরপর তৃতীয় উইকেটে তিনি ইশান কিশানের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েন। রোহিত শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ৬৮ রান করে আনরিখ নরকিয়ার বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন। তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কা। মাঝে কাইরন পোলার্ড ও হার্দিক পান্ডিয়া দ্রুত বিদায় নিলেও কিশান ১৯ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ করে দলকে সহজ জয় উপহার দেন।
দিল্লি বোলারদের মধ্যে নরকিয়া সর্বোচ্চ দু’টি উইকেট দখল করেন। এছাড়া কাগিসো রাবাদা ও স্টোইনিস একটি করে উইকেট পান।
টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুম্বাই বোলারদের সামনে শুরুটা ভালো হয়নি দিল্লির। দলীয় শূন্য ও ১৬ রানে ২ উইকেট হারায় রিকি পন্টিংয়ের কোচিংয়ের দলটি। স্টোইনিস ও আজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। এরপর ব্যক্তিগত ১৫ রানে জয়নাত যাদবে শিকারে পরিণত হন ওপেনার শিখর ধাওয়ান।
তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঋশভ পন্থকে নিয়ে ৯৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দেন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। কিন্তু মুম্বাই বোলাররা দারুণভাবে ফিরে এসে সেই আশা পূর্ণ হতে দেননি। ফিফটির দেখা পাওয়া পন্থকে ফেরান নাথান কোল্টার-নাইল। বাঁহাতি পন্থ ৩৮ বলে চারটি চার ও দু’টি ছক্কায় ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। শেষদিকে শিমরন হেটমায়ার, অক্ষর প্যাটেল ও কাগিসো রাবাদা ভালো করতে না পারায় দিল্লি কোনো রকমে দেড়শ রানের গণ্ডি পার হয়। অপরাজিত আইয়ার ৫০ বলে ছয়টি চার ও দু’টি ছক্কায় ৬৫ রান করেন।
মুম্বাই বোলারদের মধ্যে বোল্ট সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট পান। দু’টি উইকেট দখল করেন কোল্টার নাইল। এছাড়া যাদব একটি উইকেট নেন।
দারুণ বল করে ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। তবে গতির ঝড় তোলা রাজস্থান রয়্যালসের ইংল্যান্ড পেসার জোফরা আর্চার টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন। তার দল আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও তিনি ১৪ ম্যাচে ৬.৫৫ ইকোনোমিতে ২০টি উইকেট তুলে নিয়েছেন।
এদিকে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন কিংস ইলিভেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। তার দল কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তবে তিনি ১৪ ম্যাচে পাঁচটি হাফসেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরিসহ ৫৫.৮৩ গড় ও ১২৯.২৩ স্ট্রাইক রেটে ৬৭০ রান করেছেন। তার মাথায় আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের অরেঞ্জ ক্যাপ উঠেছে।
আর দিল্লি ক্যাপিটালসের দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে পারপেল ক্যাপ পরেছেন। তিনি ১৭ ম্যাচে ৮.৩৪ ইকোনোমিতে ও ১৮.২৬ গড়ে ৩০টি উইকেট দখল করেছেন।
ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন বোল্ট। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন প্লে অফে উঠতে না পারা রাজস্থান রয়্যালসের পেসার জোফরা আর্চার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দিল্লি ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৫৬/৭ (আইয়ার ৫৬, পান্ত ৫৬, ধাওয়ান ১১, অক্ষর ৯; বোল্ট ৩/৩০, কোল্টার-নাইল ২/২৯)।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৫৭/৫ (রোহিত ৬৮, ঈশান ৩৩*, ডি কক ২০, সূর্যকুমার ১৯; নর্কিয়া ২/২৫, স্টোইনিস ১/২৩)।
ফল: মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ট্রেন্ট বোল্ট।
টুর্নামেন্টসেরা: জোফরা আর্চার।
Discussion about this post