খেলাধূলা ডেস্ক
চলতি চট্টগ্রাম টেস্টে যেন ব্যাটে-বলে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার বনে গেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও স্পিন ঘূর্ণিতে ঘায়েল করেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদেই মূলতঃ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার পয়েন্টের সুবাতাস পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের শেষদিন আর ৭ উইকেট নিলেই জিতে যাবে বাংলাদেশ।
বৃষ্টির বাগড়া ছাড়া প্রায় আড়াই বছর পর পঞ্চম দিনে গড়াল বাংলাদেশ দলের টেস্ট। সবশেষ ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোনো টেস্টে পাঁচ দিন খেলেছিল বাংলাদেশ এবং ম্যাচ জিতেছিল ২১৮ রানের বড় ব্যবধানে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও বড় জয়ের আশা টাইগারাদের। শেষদিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ম্যাচ জিততে আরও ২৮৫ রান করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
দ্বিতীয় সেশনের প্রায় ৪০ মিনিট বাকি থাকতে ইনিংস ঘোষণা করে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে নামানো হয় ৩০ মিনিটে। সেই ত্রিশ মিনিটে খেলা ৭ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি তারা, রান করে ১৮। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের বিপক্ষে খুব একটা স্বচ্ছন্দেও খেলতে পারেননি ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, জন ক্যাম্পবেলরা।
চা পানের বিরতির পর আর আক্রমণে রাখা হয়নি মোস্তাফিজকে, দুই প্রান্ত থেকেই স্পিনার আনেন মুমিনুল। সেশনের প্রথম ওভারেই একটি রিভিউ হারায় বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলামের বল ব্রাথওয়েটের ব্যাটের পাশ ঘেঁষে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। আম্পায়ার আউট দেননি, কট বিহাইন্ডের জন্য রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটের বেশ দূর দিয়ে গিয়েছে সেই বলটি।
পরের ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার প্রথম দুই ওভার থেকে তিন চারের মারে ১৪ রান তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুইপ শটের মাধ্যমে তিনটি চারই হাঁকান ক্যাম্পবেল। মিরাজের বিপক্ষে সুইপে সফল হওয়ায় বারবার একই শট খেলতে থাকেন তিনি। এতে নিজের বিপদই ডেকে আনেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
পরপর দুই ওভারে দুইবার বাঁচলেও, তা কাজে লাগাতে পারেননি ক্যাম্পবেল। ১৭তম ওভারে নিজের পঞ্চম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদ সাজিয়ে ক্যাম্পবেলের বিদায়ঘণ্টা বাজান মিরাজ। এ দফায় রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ক্যারিবীয় ওপেনার, সাজঘরে ফিরে যান ৫০ বলে ২৩ রান করে।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে ১৭ ওভার লাগলেও, আরেক ওপেনারকে ফেরাতে একদমই সময় নেননি মিরাজ। নিজের পরের ওভারটি করতে এসে ক্যারিবীয় অধিনায়ককে ফেরান চলতি ম্যাচে দুর্দান্ত খেলতে থাকা এ অফস্পিনিং অলরাউন্ডার। অবশ্য এ উইকেটে শর্ট লেগে দাঁড়ানো ইয়াসির রাব্বির অবদানও অনেক বেশি। ব্রাথওয়েটের ব্যাট-প্যাডে লেগে আসা বলটি দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাম হাতে ধরে ফেলেন রাব্বি। আগের ইনিংসে ৭৬ করা ব্রাথওয়েট এবার থামেন ২০ রানে।
মিরাজ যখন একপ্রান্ত থেকে আক্রমণাত্মক বোলিং করছিলেন, তখন অন্যপ্রান্তে তেমন চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি আরেক অফস্পিনার নাঈম হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের তাইজুলের বলেও হয়নি তেমন বিশেষ কিছু। অবশ্য মিরাজের বলেও ওভারপ্রতি তিনের বেশি করেই রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতে বাংলাদেশ দলের তেমন ক্ষতি হয়নি। কেননা ইনিংসের তৃতীয় উইকেটও নেন মিরাজ।
অভিষিক্ত শেন মোজলির কপাল খারাপই বলতে হবে। প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হন মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে। আর এবার মিরাজের বেশ নিচু হয়ে আসা ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ২ চারের মারে ১২ রান করা মোজলি। মিরাজের এই ঘূর্ণিতে বিনা উইকেটে ৩৯ থেকে ৫৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে দিনের শেষভাগে আর বিপদ ঘটতে দেননি আরেক অভিষিক্ত কাইল মায়ারস ও এনক্রুমাহ বোনার। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা খেলে ফেলেছেন ১৫.৪ ওভার, স্কোরবোর্ডে উঠেছে ৫১ রান। দিন শেষে বোনার ১৫ ও মায়ারস ৩৭ রানে অপরাজিত রয়েছেন। শেষদিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে তাদের জয়ের জন্য করতে হবে আরও ২৮৫ রান।
Discussion about this post