খেলাধূলা ডেস্ক
এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে জিবে জল এনে দেওয়া এক দ্বৈরথই অপেক্ষা করছিল। লিওনেল মেসির বার্সেলোনা যখন নেইমারের পিএসজির মুখোমুখি হয়, সেটির আকর্ষণ তো অনেক বেশিই হবে। কিন্তু আগামী মঙ্গলবার শেষ ষোলোর প্রথম লেগের আগেই আকর্ষণটা অনেক কমে গেল।
নেইমার চোটে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেছেন চার সপ্তাহের জন্য। আগামী মঙ্গলবারের ম্যাচ তো নয়ই, আগামী ১০ মার্চ পিএসজির মাঠে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে তাঁর খেলার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
ফ্রেঞ্চ কাপের ম্যাচে গতকাল কাঁ-র বিপক্ষে পিএসজির জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন নেইমার। পিএসজি ম্যাচটা জিতেছে টুর্নামেন্টের শেষ ৩২-এ উঠে গেছে ঠিকই, কিন্তু ম্যাচের ৬০ মিনিটে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন নেইমার।
বার্সার ম্যাচের আর ছয় দিন আগে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের এভাবে চোটে পড়া পিএসজি–সমর্থকদের বুকে কাঁপন ধরাতে যথেষ্ট। কাল থেকে তাই শঙ্কা ছিল, বার্সার বিপক্ষে নেইমার খেলতে পারবেন তো!
আর ছিল অপেক্ষা। আজ পিএসজি নেইমারের চোট নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর কী জানায়, সেটির অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত শঙ্কাটাই সত্যি হলো। পিএসজি জানিয়ে দিল, নেইমার খেলতে পারছেন না বার্সার বিপক্ষে।
‘নেইমার জুনিয়র বুধবার সন্ধ্যার ম্যাচে তাঁর বাঁ পায়ের মাংসপেশিতে চোট পেয়েছেন। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইমেজিং টেস্টের বিশ্লেষণের পর বোঝা যাচ্ছে, তাঁর চোটের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া কেমন যায়, সেটির ভিত্তিতে চার সপ্তাহের মতো তাঁকে পাওয়া যাবে না’—বিবৃতিতে জানিয়েছে পিএসজি
পুরোপুরি ২৮ দিনের মাথায়ই নেইমার চোট কাটিয়ে ফিরবেন, সেটি ভেবে নিলেও বার্সার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফেব্রুয়ারি মাসে আর বাকি আছে ১৭ দিন, আর মার্চের ১০তম দিনে পিএসজির মাঠে দ্বিতীয় লেগে নামবে বার্সা। অর্থাৎ, আজ থেকে হিসাব করলে দ্বিতীয় লেগের সময় নেইমার পুনর্বাসনের ২৭তম দিনে থাকবেন।
আর চোটের পুনর্বাসন মানে তো শুধু চোটে পড়া জায়গাটা ঠিক হয়ে যাওয়াই নয়, পুরোপুরি ম্যাচ খেলার মতো ফিট হওয়া, দলের সঙ্গে দু-তিনটি সেশন অনুশীলন করা…এসবের পরই না একজন খেলোয়াড়কে সাধারণত ম্যাচের জন্য বিবেচনা করেন কোচ।
আর কোনো চোটের দুঃসংবাদ না এলে ‘নেইমার বনাম মেসি’ লড়াইটা এখন ‘এমবাপ্পে বনাম মেসি’ মর্যাদাই পাবে। পিএসজির জন্য এই চোট অবশ্য দ্বিতীয় ধাক্কা। এর আগেই নিশ্চিত ছিল, পিএসজির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আনহেল দি মারিয়াও চোটের কারণে প্রথম লেগে খেলতে পারবেন না।
নেইমারের জন্য এই চোটটা বড় ধাক্কাই হয়ে আসবে। মাঝে শুধু গত মৌসুমে দীর্ঘমেয়াদি কোনো চোট ছাড়াই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলতে পেরেছেন নেইমার। করোনার কারণে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ছকেও বদল এনেছিল ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। নকআউট পর্বে ফাইনালের আগপর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সাধারণত দুটি করে ম্যাচ বা ‘লেগ’ থাকলেও গত মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত এক লেগেরই রেখেছিল উয়েফা।
চোটহীন নেইমারকে নিয়ে সেখানে ফাইনালে উঠেছিল পিএসজি—ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবার। শেষ পর্যন্ত বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার স্বপ্ন অবশ্য পূরণ হয়নি প্যারিসের ক্লাবটির।
২০১৭ সালে বার্সেলোনা থেকে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে পিএসজিতে যাওয়ার পর প্রথম দুই মৌসুমেই চোটের কারণে নকআউট পর্বে খেলতে পারেননি নেইমার। দুবারই চোটটা ছিল ডান পায়ের পঞ্চম মেটাটারসালে। দুবারই তাঁকে হারিয়ে শেষ ষোলোতেই বিদায় নিয়েছে পিএসজি, ২০১৭-১৮ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে, পরের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে নাটকীয়ভাবে হেরে।
মাঝে গত মৌসুমে নেইমার সুস্থ হয়ে নকআউট পর্ব খেলায় তাঁর ভক্তদের হয়তো মনে হয়েছিল, অভিশাপটা বুঝি কেটেছে। কিন্তু আর কাটল কই! আরেকটি মৌসুমের নকআউট পর্ব শুরু হওয়ার ঠিক আগেই চোট কেড়ে নিল নেইমারকে।
Discussion about this post